চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সঠিক পরিসংখ্যান নেই


প্রকাশিত: ০১:৫২ পিএম, ২৩ মে ২০১৭

রাজধানীতে চিকুনগুনিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েই চলছে। ১৯৫৩ সালে তানজানিয়ায় এ জ্বরের ভাইরাস প্রথম ধরা পড়লেও বাংলাদেশে রোগটি শনাক্তকরণে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ খুবই কম। সরকারিভাবে মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ছাড়া হাতেগোনা কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকুনগুনিয়া রোগ পরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রয়েছে।

একই সঙ্গে অধিকাংশ রোগীর পরীক্ষা করে নিশ্চিত না হওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতরে এ রোগে আক্রান্তদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি রোগীদের মধ্যে অনেককে শুধুমাত্র লক্ষণ দেখে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এছাড়া অনেক রোগীর লক্ষণ দেখে প্রথমত ডেঙ্গু মনে হলেও পরবর্তীতে পরীক্ষার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ জাগো নিউজকে জানান, চেম্বারে কয়েক হাজার চিকুনগুনিয়া লক্ষণ নিয়ে আসা রোগী দেখছেন এবং তাদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। রোগীরা জ্বর, শরীরে ব্যথা ও হাঁটতে না পারার লক্ষণ নিয়ে আসেন।

শুরুতে ডেঙ্গু মনে করলেও পরবর্তীতে অ্যান্টি চিকুনগুনিয়া অ্যান্টি বডি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার নিশ্চিত তথ্য পান বলেও জানান তিনি।

Chikungunia

পরীক্ষার খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. আবদুল্লাহ বলেন, এ ধরনের পরীক্ষায় এক থেকে এক হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটোই এডিস মশার কামড়ে হয়। রোগী চেম্বারে আসতে আসতে দুই-তিনদিন চলে যাওয়ায় লক্ষণ দেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। অনেকেই এতে ভালো হয়ে যান। এ রোগে মৃত্যু হয় না বলে ঝুঁকি কম, তবে রোগীকে প্রচুর ব্যথা সহ্য করতে হয়।

আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে চিকুনগুনিয়ার রোগী বলা যায় না। এছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে খুব বেশি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী এখনও পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন সার্ভিল্যান্সে আগের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ইনচার্জ ডা. আয়েশা বেগম জানান, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর তথ্য পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সোমবার মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে ১১ জন সম্ভাব্য চিকুনগুনিয়ার রোগীর তথ্য পাঠিয়েছে।

তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো রোগীকে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হিসেবে গণ্য করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গত ১৮ এপ্রিল (মঙ্গলবার) মহাখালীতে আইইডিসিআরের উদ্যোগ চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীদের এক অবহিতকরণ কর্মশালায় স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে ব্যক্তি ও সামাজিক সচেতনতার ওপর গুরত্বারোপ করেন। এ সময় চিকুনগুনিয়ায় চিকিৎসায় অযথা ব্যয় পরিহার ও জটিল পরিস্থিতি ছাড়া রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা নেই বলেও জানানো হয়।

একই সঙ্গে এ রোগ উপশমের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করতে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রকাশিত ‘চিকুনগুনিয়ার ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইড’টি অনুসরণের পরামর্শ দেয়া হয়।

এমইউ/আরএস/এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।