মেরাদিয়া হাট এখন আবর্জনার ভাগাড়!


প্রকাশিত: ০৬:৩১ এএম, ২২ মে ২০১৭

অবহেলা আর অব্যবস্থাপনায় জৌলুস হারাতে বসেছে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী মেরাদিয়া হাট। শাক-সবজি, ফল-মূলসহ নানা ধরনের খুচরা পণ্যের বাজার হিসাবে বিখ্যাত হাটটি এখন যেন পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে।

মেরাদিয়া হাটের প্রধান সড়কের অধিকাংশ অংশজুড়ে রয়েছে আবর্জনার বিশাল স্তূপ। হাট ও আশপাশের বাসাবাড়ির আবর্জনা ফেলে ময়লার কেল্লায় পরিণত হয়েছে স্থানটি। আবর্জনার দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে, পথ চলাই যেন দায়!

স্থানীয়দের অভিযোগ, যত্রতত্র ময়লা ফেলে স্তূপ করায় আশপাশের বাসাবাড়ির ভাড়াটিয়ারা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। মাসের পর মাস এভাবে চলতে থাকলেও সিটি কর্পোরেশনের কোনো নজরদারি নেই।

maredia

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় বনশ্রী সংলগ্ন মেরাদিয়া হাটটি ছিল পুরো ঢাকা শহরের কাঁচাবাজারের জন্য বিখ্যাত। ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে নৌকাযোগে রামপুরা খাল দিয়ে মেরাদিয়া হাট এবং বর্তমান কারওয়ানবাজারে শাক-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আসতো। ঐতিহ্যবাহী হাটটির জৌলুস এখনও শেষ হয়নি।

গ্রামগঞ্জের মতো এখানেও সপ্তাহের প্রতি বুধবার জমজমাট হাট বসে। শাক-সবজি, খাবারদাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। হাটের দিন বাদেও প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত স্থানটি সরগরম থাকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে। যে কারণে আবর্জনাও উৎপাদন হচ্ছে বেশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশনের উদাসীনতার কারণে এলাকার পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে। বাজার ও আশপাশের বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলে বিশাল ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে হাটের প্রধান সড়ক। এখন এ সড়ক দিয়ে হাঁটাই যেন দায়। আবর্জনার স্তূপে সড়কের বিশাল অংশ দখল হয়ে গেছে। যে কারণে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পুরো এলাকা ময়লা আর পচা পানিতে ছেয়ে যায়। বাড়ে দুর্ঘটনা।

maredia

সরেজমিন দেখা গেছে, মেরাদিয়া হাটের পাশে রামপুরা খালপাড়ের বিশাল অংশজুড়ে ময়লার বিশাল স্তূপ। দিন দিন এ স্তূপের আকার যেন বেড়েই চলছে। এর পাশে রয়েছে মনপুরা কলেজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড। আবর্জনা ও কলেজের সাইনবোর্ড বসানো স্থানটি রামপুরা খালের অংশ। ময়লা ফেলে স্থানটি ভরাট করার পাঁয়তারা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাদের মতে, এভাবে ময়লা ফেলতে ফেলতে একদিন খালটি ভরাট হয়ে যাবে। এরপর খালের বিশাল অংশ দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি হবে।

মেরাদিয়া হাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, গত এক বছর ধরে এখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন কিংবা বনশ্রী কল্যাণ সমিতি এ বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। মূলত স্থানীয় একটি চক্র চাচ্ছে এভাবে খালপাড়টি ভরাট হয়ে যাক। একদিন সেটি দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করতে পারবে তারা।

meredia

হাটের মাংস ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, বহুবার কাউন্সিলরকে বলেছি, বাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ময়লার স্তূপ যাতে সরিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মাঝে একদিন সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা এসে এলাকাটি ঘুরে যান। যাওয়ার আগে তিনি বলেন, ট্রাক পাঠিয়ে ময়লাগুলো সরিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশেনের কোনো গাড়ি আসেনি।

বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থী ইকবাল কবির বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে প্রতিদিন এখানে বাসের জন্য দাঁড়াতে হয়। কিন্তু ময়লার গন্ধে দাঁড়ানো যায় না। বমি আসে। ময়লাগুলো সরিয়ে নিলে আমাদের জন্য ভালো হতো।

meredia

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেরাদিয়া হাটে বেশ কয়েকবার ট্রাক পাঠিয়ে ময়লা সরানো হয়েছে। কিন্তু বিষয় হচ্ছে, ওই এলাকার বিশাল অংশ উত্তর সিটি কর্পোরেশনের। তাদের ময়লাবাহী ভ্যানগুলো আমাদের এ অংশে এসে ময়লা ফেলে চলে যায়। যে কারণে ময়লার স্তূপ বড় হচ্ছে।’

meredis

তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগেও আমি ঘটনাস্থলে যাই। ওই সময় বেশ খারাপ অবস্থা দেখতে পাই। আমাদেরও ইচ্ছা আছে, দ্রুত স্থানটি পরিষ্কার করা কিন্তু জনবল ও পরিবহন সংকটের কারণে পারছি না। এরপরও দ্রুত বিষয়টি দেখা হবে বলেও জানান তিনি।

এমএসএস/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।