‘বেশ্যার আবার দিবস’


প্রকাশিত: ০২:০৯ পিএম, ০১ মে ২০১৭

‘আমাগো শরীরের কি আর দাম আছে? আমরা মইলে (মরলে) ছুঁইতে মানা। জিন্দা (বেঁচে) থাকলে সবাই ছুঁই। আমাগো কাছে রাতে কত পুরুষ সুখ নিতে আহে, তার খবর নাই। ভদ্দর (ভদ্র) লোকেরাও আহে। কিন্তু দিনের বেলায় আমাগো দিকে কেউ ফিরাও তাকায় না। আমাগো কাছে সব দিনই সমান। বেশ্যার আবার দিবস’

শ্রম, সমাজ, পুরুষ, বাঁচার অধিকার নিয়ে ভাসমান যৌনকর্মী রেশমা (ছদ্মনাম) গতকাল রোববার রাতে এমনই ক্ষোভ ঝাড়লেন এ প্রতিবেদকের কাছে। বিশ্ব শ্রমিক দিবস সম্পর্কে কোন ধারণা আছে কিনা এমনটি জানতে চাইলেই রেশমার জীবনঘন এমন ক্ষোভ।sex

মধ্য রাত পার হয়েছে আরও ঘণ্টা দেড়েক আগে। রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে পুলিশের তখন কোনো সিগন্যালও মিলছে না। মোড় থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে পুলিশের চেক পোস্ট। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি চেক পোস্ট থেকে পুলিশ সদস্যদের ভাগিয়েছে অনেক আগেই। ঈষা খাঁ হোটেলের সামনের ওভার ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে খদ্দরের অপেক্ষায় দুই ভাসমান যৌনকর্মী। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে এখানে দাঁড়ালেও আগেই কাক ভেজা হয়ে গেছে।

মোটরবাইক থামিয়ে কাছে যেতেই ওরা কিছুটা বিব্রত। রেশমা নামের একজন এগিয়ে এসে বললেন, ‘ভাই কি পুলিশের লোক? না বলায় খানিকটা স্বাভাবিক হল। পরিচয় দিয়ে কথা শুরু করতেই বললেন, ‘দুটি কাম (কাজ) করতে পারছি আইজ। এরপরেই বৃষ্টি আইল। বৃষ্টিতে তো আর খদ্দের মেলে না।’

আলো-আঁধারের মাঝে ধীরে ধীরে চলে আসা একটি রিকশা কাছে আসতেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রূপালী এগিয়ে গেল। খানিক আলাপ করেই রিকশাওয়ালাকে সঙ্গে নিয়ে ওভার ব্রিজের ওপরে উঠলেন। রিকশার পাহারায় থাকল রেশমা। পরে আরো দু’টি রিকশা এসে ভিড়ল ব্রিজের নিচে।

sex

মিনেট দশেক পর ওভার ব্রিজ থেকে নেমে এলে আলাপ হল রূপালীর সঙ্গেও। আগে টাঙ্গাইল যৌন পল্লীতে কাজ করতেন। বিয়ে করেছিলেন দু’বার। সংসার হয়নি। তবে সংসার সময়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েও রোজগার করতে হয়েছে রূপালীকে। পরের ঘরের আট বছরের মেয়ে মায়েরে কাছে থাকে টাঙ্গাইলে।

বলেন, ‘গতর খাটিয়ে খাই। একদিন রাস্তায় না দাঁড়ালে পেটে ভাত যায় না। কাম না করলে মায়ের কাছে টাকা পাঠাইতে পারি না। আমাগো কামের তো আর (শ্রম)মূল্য হয় না।’

এএসএস/জেএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।