কোম্পানির বেতনে তিন বেলার খাবারও জোটে না সুফিয়ার


প্রকাশিত: ১০:০৭ এএম, ০১ মে ২০১৭

দুপুর দেড়টা। চলছিল দুপুরের লাঞ্চের বিরতি। সবাই যখন খাবার নিয়ে ব্যস্ত তখন ক্লান্ত হয়ে মেশিনের টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়েছে সুফিয়া (ছদ্মনাম)। এক ঘণ্টার ঘুম শেষে পর মেশিনের শব্দেই আবার ঘুম ভাঙে সুফিয়ার। যে যার মতো আবার নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু সুফিয়ার আর দুপুরের খাওয়া হয়নি।

কাজের ফাঁকে কথা হয় রাজধানীর কল্যাণপুরে অবস্থিত ক্যামলেট ফ্যাশনস লিমিটেড-এর শ্রমিক সুফিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, কোম্পানির যে বেতন কইতেও পারি না সইতেও পারি না। সাড়ে ৪ হাজার টাকায় কি আর ঢাকায় থাকা ও খাওয়া হয়? তবুও বেঁচে থাকার তাগিদে করতে হচ্ছে। এছাড়া আর যে কোনো গতিই নেই।

সুফিয়া বলছেন, হেলপার থেকে অপারেটর হলেই বেতন বাড়বে। সেই আশাতেই আছি। আর ওভার টাইম করায় হাজার দেড়েক টাকা আরও বেশি পাই। তাই দিয়েই কোনো রকম চলে। মিরপুর মাজার রোডে থাকেন সুফিয়া। হেঁটেই যাওয়াত করেন তিনি।

গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রমিক ২০৫। বেবি ড্রেস, জেন্টস এর সাব কন্টাক্টের কাজ হয়। সেলাইয়ের কাজই মূল। গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকদের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বেতন ৫ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু সুফিয়া বেতন পায় তা থেকে আরও ৮০০ টাকা কম। রাস্তার পাশের ওই ৮ তলার ভবনটিতে তিনটি গার্মেন্টস।

ক্যামলেট ফ্যাশনস লিমিটেড-এর নারী শ্রমিক দুলালী বলেন, এখানে কাজের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। শুধু বেতন নিয়ে অসন্তুষ্টি। বেতন নিয়ে চলা দায়।

প্রতিষ্ঠানটির এইচআর এডমিন ম্যানেজার দিদারুল ইসলাম বলেন, একটি গার্মেন্টসের স্ট্রাকচার অনুযায়ী সব রকম সুবিধাই শ্রমিকদের জন্য রয়েছে। চিকিৎসা সেবা, ওভার টাইম, সময় মতো বেতন-ভাতা সবই দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে ফাইন ক্রাফট লিমিটেড-এর কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা কাজে ব্যস্ত। কর্মকর্তারা নানা বিষয়ে শ্রমিকদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন।

কথা হয় ম্যানেজিং ডিরেক্টর পারভেজ আলম মীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা চাইলেও আগের মতো আর শ্রমিকদের স্বার্থ দেখতে পারি না। এটা চরম বাস্তবতা। কারণ রানা প্লাজা ধসের পর ব্যবসা লাটে উঠার দশা। বিদেশি অর্ডার বাইপাস হয়ে যাচ্ছে ভারতে। আমার এই কারখানায় শ্রমিক ছিল ৫০০ এর বেশি, সেখানে এখন মাত্র ১৬০ শ্রমিক কাজ করছেন। বাকি সবাইকে নিয়মানুযায়ী ছাঁটাই করতে হয়েছে। লোকসান করে তো আর ব্যবসা করা যায় না।

কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মন্ড অ্যাপারেলস লিমিটেড অফিসে গিয়ে জানা যায়, কাজ না থাকায় অফিস ছুটি দিয়েছে। কোনো শ্রমিক নেই। লোকসান হওয়ার অজুহাতে ৩ তলা ও ৪ তলার কাটিং সেকশনের অফিস পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

প্রতিষ্ঠানটির সিকিউরিটি সুপার ভাইজার মহিউদ্দিন বলেন, অফিসে নেই কোনো কর্মকর্তা। ১২টার মধ্যে সবাই বিদায় নিয়েছেন। দুটো কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। জানি না সামনে কপালে কি আছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভবনটির তৃতীয় তলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা ও কাটা কাপড়। প্রায় ২০০ শ্রমিককে ছাঁটাই করার পর আর কক্ষটি পরিষ্কারও করা হয়নি।

নাসির নামে এক কর্মচারী বলেন, অভাবের সংসার আর বুঝি চলে না। চাকরি থাকছে না। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দুটি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে নতুন কর্মস্থল খুঁজতে হবে।

এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছিল ১২টি গার্মেন্টস শ্রমিকদের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন। সে সময় জোটের সমন্বয়ক ও গার্মেন্টস ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু জানান, বাজারে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ৬ সদস্যের একটি পরিবারের বেঁচে থাকার জন্য প্রতি মাসে ন্যূনতম ২৩ হাজার ২৭০ টাকা দরকার। তাই বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মূল (বেসিক) মজুরি ১০ হাজার টাকা এবং ন্যূনতম মোট মজুরি ১৬ হাজার টাকা দেয়ার দাবি জানান তিনি।

জেইউ/জেএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।