শ্রমিকদের কল্যাণে ভবিষ্যৎ তহবিল


প্রকাশিত: ০৫:৫৬ এএম, ০১ মে ২০১৭

অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের কল্যাণে ভবিষ্যৎ তহবিল প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ পর্যায়ে এনেছে সরকার। কৃষি শ্রমিক, রিকশাচালক, দিনমজুর, গৃহকর্মীসহ ৬০টি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবীরা এ তহবিল থেকে আর্থিক সুবিধা পাবেন। এ খাতে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য প্রথমবারের মতো প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্যৎ তহবিল নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন। নীতিমালাটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

জানা গেছে, কোনো শ্রমিক মাসে ১০০ বা ২০০ টাকার ভবিষ্যৎ তহবিল হিসাব পরিচালনা করলে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে সমপরিমাণ অর্থ দেয়া হবে। আবার কোনো শ্রমিক মাসে ৩০০, ৪০০ ও ৫০০ টাকার ভবিষ্যৎ তহবিল হিসাব পরিচালনা করলে ফাউন্ডেশনের তহবিল থেকে মাসে ২৫০ টাকা দেয়া হবে। ভবিষ্যৎ তহবিলের মেয়াদ হবে ন্যূনতম ৫ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত।

এ বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক জাগো নিউজকে বলেন, শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন অনুযায়ী সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে শ্রমিকদের কল্যাণে নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হয়েছে।

তিনি বলেন, কর্মস্থলে কোনো শ্রমিক মারা গেলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দেয়া হবে। শ্রমিক কল্যাণে সরকার গঠিত কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে দেয়া হবে তিন লাখ টাকা। আর আগের নিয়মে পাবেন দুই লাখ। এছাড়া শ্রম আইন অনুযায়ী মালিক পক্ষের দেয়া সুযোগ সুবিধাও পাবেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম নিরসনে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল পর্যায়ে শিশুশ্রম নিরসন করা হবে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারী-পুরুষ সবার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন এ তহবিল পরিচালনা করবে।

তহবিলটি ৫, ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ বছর মেয়াদি হবে। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে শ্রমিকের অংশ, ফাউন্ডেশনের অংশ, সঞ্চয়ি প্রতিষ্ঠানের মুনাফাসহ জমাকৃত পুরো অর্থের ওপর বিভিন্ন হারে মুনাফা বা ইনসেনটিভ দেয়া হবে। এ মুনাফা পাঁচ বছর মেয়াদের পর ৫ শতাংশ, ১০ বছর মেয়াদের পর ৭ শতাংশ, ১৫ বছর মেয়াদের পর ১০ শতাংশ, ২০ বছর মেয়াদ পূর্তিতে সাড়ে ১২ শতাংশ এবং ২৫ বছর মেয়াদ পূর্তিতে হবে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ।

সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নানা ধরনের প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু রয়েছে। বড় বড় মিল-কারখানার শ্রমিকরাও এ সুবিধা পায়। তাই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন হওয়ায় সরকার অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বা দিনমজুরদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতায় আনতে এ উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিল্স) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভবিষ্যৎ তহবিল করার উদ্যোগটি ভালো। শিগগিরই শ্রমিকদের কাছে বার্তাটি যথাযথভাবে পৌঁছানো গেলে এটি সফল হবে। পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যৎ তহবিল করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা দরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত আগ্রহী শ্রমিকদের ফাউন্ডেশনের নির্ধারিত সংশ্লিষ্ট সঞ্চয়ী প্রতিষ্ঠানে মাসিক ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জমা রাখার জন্য একটি ভবিষ্যৎ তহবিল হিসাব খুলতে হবে। প্রতি মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হবে। কোনো শ্রমিক নিয়মিত ১০০ টাকা হারে জমা দিলে পাঁচ বছরে তার ভবিষ্যৎ তহবিলে ছয় হাজার টাকা হবে। তবে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন সমপরিমাণ অর্থ দেয়ায় মোট ১২ হাজার টাকা পাবেন হিসাব পরিচালনাকারী সেই শ্রমিক। একইভাবে কোনো শ্রমিক মাসে ২০০ টাকা হিসাবে জমা দিলে পাঁচ বছরে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে ১২ হাজার টাকা দেয়া হবে। আর ৩০০, ৪০০ ও ৫০০ টাকা হিসাবে জমা দিলে পাঁচ বছরে ফাউন্ডেশন থেকে ১৫ হাজার টাকা মিলবে।

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য প্রথমবারের মতো প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্যৎ তহবিলে মাসে ১০০ বা ২০০ টাকার হিসাব পরিচালনা করলে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল দেবে সমপরিমাণ অর্থ। তহবিলের মেয়াদ হবে ৫ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত। এ ছাড়া ভবিষ্যৎ তহবিলে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে অতিরিক্ত প্রণোদনা পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে হিসাব বন্ধ করলে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে ৫ শতাংশ মুনাফা দেয়া হবে। ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হিসাব বন্ধ করলে মুনাফা সাড়ে ৭ শতাংশ। ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে হিসাব বন্ধ করলে ১০ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যাবে। আর ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে হিসাব বন্ধ করলে সাড়ে ১২ শংতাশ মুনাফা পাওয়া যাবে।

শ্রমিকরা সঞ্চয়ী প্রতিষ্ঠানে হিসাব খোলার পর তাকে হিসাবের বিপরীতে একটি ক্যাশ কার্ড দেয়া হবে। প্রতিবছর ভবিষ্যৎ তহবিলের মুনাফা সেই কার্ডে জমা হবে। কোনো দুর্ঘটনা বা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত না হলে কোনো শ্রমিক কার্ডের অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন না। ভবিষ্যৎ তহবিল হিসাব খোলার তিন বছর পর কোনো শ্রমিক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে ফাউন্ডেশন থেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পাবেন। আবার হিসাবধারী কোনো নারী শ্রমিক গর্ভবতী হলে পাবেন ২৫ হাজার টাকা। অবশ্য দুইবারের জন্য সুবিধাটি মিলবে।

জানা গেছে, অপ্রাতিষ্ঠানিক হিসেবে উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবা খাতের শ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ তহবিলের সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবেন। উৎপাদন খাতের মধ্যে কৃষিশ্রমিক, বর্গাচাষী, মৌসুমি শ্রমিক, কামার, কুমার, তাঁতি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতের শ্রমিক, বনায়ন ও নার্সারি কাজে নিয়োজিত শ্রমিক, বাঁশ-বেতের কারিগর, ঠোঙা ও বুক বাইন্ডিং শ্রমিক রয়েছেন। নির্মাণ খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, নির্মাণ শ্রমিক, মাটি কাটা শ্রমিক, কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি।

সেবা খাতের মধ্যে গৃহকর্মী, মালি, হকার ও ফেরিওয়ালা, প্রহরী, দরজি, সেলুন কর্মচারী, বেকারি শ্রমিক, দোকান শ্রমিক, মাঝি, হাট ও ঘাট শ্রমিক, ছাতার কারিগর, রিকশা ভ্যান বা ঠেলাগাড়ির শ্রমিক, সুইপার, দিনমজুর, চাতাল ও হোটেলের শ্রমিক, হাসপাতালের আয়া, ডেকোরেটরের কর্মীসহ অনেকে আছেন।

ভবিষ্যৎ তহবিলের হিসাব খোলার জন্য ট্রেড ইউনিয়ন কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র কিংবা সুপারিশের প্রয়োজন হতে পারে জানা যায়।

এমইউএইচ/এএইচ/আরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।