ধানে সর্বনাশ, অপেক্ষা নেত্রীর
‘গতর খাটায়ে নয় বিঘা ধান চাষ করছিলাম। কোনো রকমে দুই বিঘার ধান কাটতে পারছি। কাঁচা ধান। কাইটা আইনা (এনে) আরও কষ্ট বাড়াইছি। ধানে চিটা-পাতান। কাঁচা ধানে কি আর চাল হয়! সবই গেল। কি খাইয়া বাঁচুম তা মনে করলেই দম বন্ধ হয়ে আসছে।’
বলছিলেন সুনামগঞ্জের শনির হাওরের ধান চাষি আলী হোসেন। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ মাঠে কাঁচা ধান কেটে মাড়াইয়ের কাজ করছিলেন তিনি।
সেখানে দাঁড়িয়েই তার শোকের মাতম। বলেন, ‘শুনলাম, সামনের ৩০ তারিখ নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আসতেছেন। তিনিই এখন ভরসা। সরকারের করুণা না পেলে, না খেয়ে মরতে অইব।’
পাহাড়ি ঢল আর অতিবর্ষণে সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের হাওরগুলো অসময়ে প্লাবিত হয়েছে সম্প্রতি। পানিতে তলিয়ে গেছে প্রতিটি হাওরের হাজার হাজার একর ধানখেত। পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় হাওরের মাছে মড়ক ধরেছে। পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে এসব অঞ্চলে। হাওরের দুর্গত এলাকার মানুষেরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
গত রোববার (২৩ এপ্রিল) বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর। কয়েক হাজার একর ফসলি জমি এখনও পানির নিচে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক।
তাহিরপুর উপজেলা সংলগ্ন মাঠে দাঁড়িয়ে কথা হয় হেমায়েত উল্লাহ নামের আরেক চাষির সঙ্গে। বলেন, ‘অসময়ে ধানের খেত তলিয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। কখনও এভাবে আচমকা পানি আসতে দেখিনি। জৈষ্ঠ মাসের শেষ দিকে হাওরে পানি আসে। আর এবার বৈশাখ মাসের মাঝেই তলিয়ে গেল। আর সপ্তাহ খানেক সময় পেলে ধান কাটতে পারতাম। পানির নিচ থেকে কাঁচা ধান কেটে এনে তো কামলার মজুরিই দিতে পারতাম না। চোখের সামনে সব তলিয়ে গেল।’
নিজেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত দাবি করে বলেন, ‘আমাদের বিপদ আরও বেশি। পাঁচ বা ১০ কেজি চালের জন্য তো আমরা লাইনে দাঁড়াতে পারি না। প্রধানমন্ত্রী আসতেছেন। দেখি, কি সহায়তা করেন। ক্ষতির সঠিক মূল্যায়ন করে সবার দ্বারে দ্বারে ত্রাণ পৌঁছালেই এ অঞ্চলের মানুষ বাঁচবে।’
এএসএস/এআরএস/এসআর/পিআর