ধান না শুকালে খাব কী?
কেউ মাড়াই করছেন। কেউ আবার বস্তায় পুরছেন। অল্প জায়গাতেই আবার কেউ কেউ ধান মেলে দিচ্ছেন। কথা বলার সময় নেই কারোই। রোদ আর বৃষ্টির সঙ্গে খেলা তাদের। বুধবার বৃষ্টি খুব ভুগিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রোদ ওঠায় তাই অবসরের ফুসরত নেই কারো।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা সংলগ্ন মাঠ। কিন্তু মাঠের আর কোনো চিহ্ন নেই। দেখে মনে হবে যেন কয়েকটি গৃহস্থ বাড়ির ব্যস্তময় আঙিনা। বিরামহীন বেশ কয়েকটি ধান মাড়াই মেশিনের শব্দ। হাত-পা চলছে মেশিনের গতিতেই। বাড়ির বৌ-ঝিরা সবাই এখন এই মাঠে। অসময়ে মাড়াইয়ের আয়োজন। শ্রমের মজুরিও তাই বেশি। ফলে ধান উঠাতে সবাই এখন শ্রমিক।
বৃষ্টিতে ভেজা ধান মাঠে মেলে দিচ্ছেন মৌসুমি। তাহিরপুর স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী মৌসুমি। বললো, ‘এমন কাজ রেখে স্কুলে যেতে নেই। পরে পুষিয়ে নেব স্কুলের পড়া। ধান না শুকালে খাব কী? বাড়ির সবাই চলে আইছি। এই মাঠই এখন আমাগো ঘরবাড়ি।’
রতন গাঙ্গুলি। তাহিরপুর বাজারে তার হোমিওপ্যাথির দোকান। দীর্ঘ ১৫ বছর বাজারের বণিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। চোখে চশমা আঁটা ৬০ বছরের রতন গাঙ্গুলি প্যান্ট-শার্ট পরেই ধানের আঁটি এগিয়ে দিচ্ছেন শ্রমিকদের সঙ্গে।
বলেন, ‘কোনো উপায় নেই। ১৯ কেয়ার জায়গার সব তো পানির তলে (৩৪ শতাংশে এক কেয়ার)। ধান চাষ করেছিলাম। চার থেকে পাঁচশ মণ ধানও হয়েছে। এবার ১০ কি ১৫ মণ ধান ঘরে তুলতে পারব। হাওরে পানি আসার দিন তাড়াহুড়া করে দেড় কেয়ার জমির ধান কাটতে পারছিলাম। একজন কামলার (শ্রমিক) দৈনিক মজুরি ছয় থেকে সাতশ টাকা। তাও আবার মিলছে না। বাধ্য হয়ে দোকান বন্ধ করে নিজেই চলে এসেছি।’
এএসএস/এআরএস/এসআর/পিআর