বঙ্গবন্ধু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল বাড়ছে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ


প্রকাশিত: ০৭:২৩ এএম, ২০ এপ্রিল ২০১৭

সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ হারে বাড়ছে বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু ও মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর সেতুর টোল। সম্প্রতি টোল বাড়ানো সংক্রান্ত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। টোলের সর্বনিম্ন বাড়তির হার ২০ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন সেতু দুটির টোলের হার নির্ধারণ ও পুনর্নির্ধারণের পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে।’

‘সেতু কর্তৃপক্ষের আয়-ব্যয়, ট্রাফিক পূর্বাভাস, সেতু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, ভবিষ্যতে পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী ট্যানেলের অর্থ পরিশোধ, ডিএসএল পরিশোধ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ টোলের হার বাড়ানো হচ্ছে।’

সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল বাড়ায় সরকার। আর মুন্সিগঞ্জে ধলেশ্বরী নদীতে নির্মিত ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু বা মুক্তারপুর সেতুর টোল নির্ধারিত হয় ২০০৮ সালে।

অনুমোদিত প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু সেতুতে মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৪০ টাকার জায়গায় নতুন নিয়মে টোল দিতে হবে ৫৫ টাকা। এ ক্ষেত্রে ৩৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

হালকা যানবাহনে (কার, জিপ, মাইক্রো, পিকআপ ইত্যাদি) ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০০ টাকা (৪০ শতাংশ), ছোট বাসের ক্ষেত্রে (৩১ আসন বা তার কম) ৬৫০ টাকার পরিবর্তে ৯০০ টাকা (৩৮ শতাংশ) আর বড় বাস (৩২ বা তার বেশি আসন) পারাপারে ৩৯ শতাংশ বাড়িয়ে ১২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে এসব বাসের ক্ষেত্রে দিতে হয় ৯০০ টাকা।

এছাড়া ছোট ট্রাকের (৫ টনের কম) বিদ্যমান ৮৫০ টাকার পরিবর্তে ধরা হয়েছে ১২০০ টাকা (৪১ শতাংশ বেড়েছে)। মাঝারি ট্রাক (৫ টন থেকে ৮ টন) হলে ১১০০ টাকার পরিবর্তে ১৫৫০ টাকা, বড় ট্রাকে (৮ টনের বেশি) ১৪০০ টাকার জায়গায় ৪২ শতাংশ বাড়িয়ে ২০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ট্রেইলারের জন্য (৪ এক্সেল পর্যন্ত) ৪০০০ টাকা এবং ৪ এক্সেলের বেশি হলে ৪০০০ টাকার সঙ্গে যোগ হবে এক্সেলপ্রতি ১৫০০ টাকা করে।

এদিকে মুক্তারপুর সেতুতে ভ্যানে ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সিএনজি অটোরিকশায় ২০ টাকার পরিবর্তে ৩০ টাকা (৫০ শতাংশ), হালকা যানবাহনে ৪০ টাকার জায়গায় ৬০ টাকা, ছোট বাসে ১০০ টাকার জায়গায় ১৫০ টাকা, বড় বাসে ২০০ টাকার পরিবর্তে ২৮০ টাকা, ছোট ট্রাকে ১৫০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা, বড় ট্রাকে ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৬০০ টাকার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ট্রেইলারের ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা, তবে ৪ এক্সেলের বেশি হলে এক্সেলপ্রতি আরও ৭৫০ টাকা করে দিতে হবে।

Bongho-Bondhu

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে ৬০ কোটি ডলার ঋণ নেয়া হয়েছিল। ঋণ শোধের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০৩৪ সাল পর্যন্ত।

ঋণের বড় অংশই শোধ দিতে হচ্ছে বিশ্বব্যাংককে। গাড়ি চলাচলের পরিমাণ, গত পাঁচ বছরে মুদ্রাস্ফীতির হার, সওজ অধিদফতরের টোলের হারের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে এ টোল বাড়ানো হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টোল বাবদ দৈনিক প্রায় এক কোটি টাকা আদায় হচ্ছে। বছরে আয় হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ কোটি টাকা। ভ্যাট ও আয়কর মিলে সরকারের রাজস্ব খাতেই চলে যায় সর্বোচ্চ ১৪০ কোটি টাকা।

ঋণের কিস্তি সুদসহ বছরে শোধ করতে হয় প্রায় ২০০ কোটি টাকা। সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ছাড়াও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে টোল বাড়ানোর এ প্রস্তাব অনিবার্য ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেতুর টোল বাড়ানোর পাশাপাশি টোল আদায়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে নতুন সফটওয়্যারও বসানো হয়েছে।
পরবর্তীতে যানবাহনের ধরনভেদে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত টোল বাড়ানোর কথা বলে একটি প্রস্তাবনা অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়। সম্প্রতি এ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, পরের বছর থেকে প্রতিবারই ৫ শতাংশ হারে টোল বাড়াতে পারবে সেতু কর্তৃপক্ষ।

এদিকে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিএনএস’র মাধ্যমে বিআরটিএ’র সার্ভারে যুক্ত হওয়ায় সফটওয়্যার দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে এক মাসের জন্য এ সফটওয়্যার বসানো হয়েছে।

এ সেতুতে আগে দৈনিক গড়ে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা আদায় হলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ টাকায়।

তবে সূত্র জানায়, গত ১২ মার্চ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সফটওয়্যার কার্যক্রম চালুর পর টোল আদায়ের পরিমাণ বাড়ানো নিয়ে দ্বিমত দেখা দিয়েছে।

আগে যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন কার্ডের (ব্লুবুক) বিবরণ অনুযায়ী, টোল আদায় করত সেতু কর্তৃপক্ষ। এখন বিআরটিএ’র সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় গাড়ির এক্সেল ও আকার অনুযায়ী টোল ধার্য করা হচ্ছে। অবশ্য এতে টোল আদায়ের হার বেড়েছে।

গত ১ থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত আগের সফটওয়্যারে টোল আদায় হয়েছে ১৪ কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫২০ টাকা। ১২ মার্চ টোল আদায় হয় ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩০ টাকা। ১৩ মার্চ এর পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৫৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা। আর ১৪ মার্চ ছিল ১ কোটি ৫৩ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩০ টাকা।

এদিকে বাজেটে ভর্তুকি এড়ানোসহ নানা খাতে ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষায় টোল বাড়ানোর প্রস্তাব করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে আট সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

এমইউএইচ/এমএমএ/এমএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।