হঠাৎ বাসের কৃত্রিম সঙ্কট, ভোগান্তিতে নগরবাসী
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত মেনে লোকাল সার্ভিস চালু করেছে বাস মালিক সমিতি। তবে এ সার্ভিস শুধুমাত্র লোক দেখানো।
জানা গেছে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে ফের ‘সিটিং সার্ভিস’ চালু করতে নীরব আন্দোলন চলছে বাস মালিকদের। অনেক রুটে বাস বন্ধ করে কৃত্রিম গণপরিবহণ সঙ্কট তৈরি করছেন তারা। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলছেন।
রোববার রাজধানীর বিভিন্ন রুট ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়েছে। দেখা গেছে, এদিন সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে জাবালে নূর, আকিক পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির বাস। মতিঝিল, যাত্রাবাড়ি, মিরপুর-১০, রামপুরা ব্রিজ, মহাখালীসহ বেশ কয়েকটি রুটের বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। একটি বাস আসলেই ২০-২৫ জন ছুটে যাচ্ছেন।
গত ৪ এপ্রিল গণপরিবহনের ‘নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা’ ঠেকাতে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ। কথা ছিল, ১৫ এপ্রিল থেকে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস, গেটলক, বিরতিহীন কিংবা স্পেশাল সার্ভিস নামে কোনো গণপরিবহন চলবে না। একই সঙ্গে সব বাস বিআরটিএ নির্ধারিত চার্ট অনুসরণ করে ভাড়া আদায় করবে।
তবে এ সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে ১৫ এপ্রিলও (শনিবার) রাজধানীতে তথাকথিত সিটিং সার্ভিসের চলাচল অব্যাহত ছিল। এ বিষয়ে শনিবার বিকেলে বিআরটিএ’র সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন পরিবহন নেতারা। বৈঠকে আজ (রোববার) থেকে সিটিং সার্ভিস বন্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন তারা।
তবে পুনরায় ‘সিটিং সার্ভিস’ চালু করতে অভিনব কৌশল নিয়েছে বাস মালিকরা। স্বাধীন পরিবহনের এক বাসচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে জানান, এ রুটে তাদের অনেক বাস আজ বন্ধ রয়েছে। মালিকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ রাস্তায় নামেনি অধিকাংশ বাস।
রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের চিত্র ছিল আরও ভয়াবহ। সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজের পাশে প্রায় শ’খানেক লোক বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। একটি বাস আসলেই হুড়োহুড়ি করে ওঠার চেষ্টা করছেন তারা। তবে এসময় রবরব, আলিফ, সু-প্রভাতসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনকে রামপুরা ব্রিজ থেকে যাত্রী না নিয়েই চলে যেতে দেখা গেছে।
আর এ সুযোগে কম দূরত্বে যেতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা।
ওসমান গনি নামে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরাও বোকা না। এমনিতেই লোকাল সার্ভিস দিয়ে সিটিংয়ের ভাড়া নিচ্ছে, আবার বাস বন্ধ করে ভোগান্তির সৃষ্টি করছে। তাদের (বাসমালিক) চিন্তা করা উচিৎ একদিন যদি আমরা গণপরিবহনে ওঠা বন্ধ করি তাহলে তাদের কী অবস্থা হবে?’
যাত্রীদের জিম্মি করে গণপরিবহন সঙ্কট সৃষ্টির ব্যাপারে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘তারা হয়তো আমাদের নির্দেশনা মেনে অ্যাঙ্গেল ও ক্যারিয়ার ফেলার কাজ করছে। এ কারণে বন্ধ থাকতে পারে। অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। কোনো মালিক ইচ্ছাকৃতভাবে বাস বন্ধ রেখেছে বলে আমার কাছে তথ্য নেই।’
সড়ক পরিবহন সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৫ এপ্রিলের পর যাত্রীদের কাছ থেকে কোনোভাবেই অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া যাবে না। ভাড়ার তালিকা বাসের ভেতর দৃশ্যমান স্থানে টাঙিয়ে রাখতে হবে। ছাদের উপরে ক্যারিয়ার, সাইট অ্যাঙ্গেল ও ভেতরের অতিরিক্ত আসন খুলে ফেলতে হবে। প্রতিটি বাস ও মিনিবাসে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা আসন সংরক্ষণ করতে হবে। এক মাসের মধ্যে রঙচটা, রঙবিহীন, জরাজীর্ণ বাস মেরামত করে রাস্তায় নামাতে হবে।
মোটরযান আইন অনুসারে, সিটিং সার্ভিস বলে কিছু নেই। চালকের আসনসহ মিনিবাসে ৩১টি আসন থাকবে। এর বেশি আসন হলে তা বাস। আর বিআরটিএ পরিবহন খাতের ২০টি বিষয়ে ব্যয়ের খাত বিশ্লেষণ করে বাস-মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ করে। সর্বশেষ ব্যয় বিশ্লেষণে প্রতিটি বাস-মিনিবাসের ৮০ শতাংশ আসন পূর্ণ হয়ে চলাচল করবে।
এআর/এমএমজেড/এমএআর/বিএ/এমএস