সিটিং সার্ভিস বন্ধে উপকৃত মালিকপক্ষই
প্রতিদিন মিরপুর থেকে মতিঝিলে অফিস করেন আলমগীর হোসেন। অন্যদিন দীর্ঘ সময় ধরে বাসে ওঠার জন্য যুদ্ধ করতে হলেও আজ অফিস যাওয়ার জন্য খুব সহজেই বাসে উঠতে পেরেছেন তিনি। কারণ আজ থেকে রাজধানীতে ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধের ঘোষণা কার্যকর হচ্ছে।
অন্যান্য দিন সকালে মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে মতিঝিল যেতে বাসে ওঠার জন্য তাকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হত। কারণ সে সময় অর্থাৎ অফিস টাইমে রাজধানীর সব বাসই সিটিং সার্ভিসে পরিণত হয়। এসব বাসে ‘সিটিং সার্ভিস, গেটলক, কম স্টপেজ’ এ ধরনের লেখা থাকে।
আলাপকালে আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সিটিং সার্ভিস বন্ধ হয়েছে ঠিকই তবে সাধারণ যাত্রীদের পকেট কাটা ভাড়া এখনও আগের মতোই দিতে হচ্ছে। তাই সিটিং সার্ভিস বন্ধ হওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের তুলনায় মালিকপক্ষ বেশি উপকৃত হয়েছে। আগে শেওড়াপাড়া থেকে বাসে উঠতে ভোগান্তি হত, এখন সব বাস লোকাল হওয়ায় সহজেই বাসে উঠতে পারছি, কিন্তু ভাড়া গুণতে হচ্ছে আগের মতোই। তাহলে সাধারণ যাত্রীদের কী লাভ হলো?’
একটু বিস্তারিত বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে একটা বাসে যে ক’টা সিট সেই সংখ্যায় যাত্রী তোলা হত, তখন মিরপুর থেকে মতিঝিলের ভাড়া রাখা হত ২৫ টাকা। এখন সিটিং সার্ভিস বন্ধ, যাত্রীও ওঠানো হচ্ছে ঠাসাঠাসি করে, সেক্ষেত্রেও ভাড়া নেয়া হচ্ছে আগের মতোই ২৫ টাকা।
শনিবার রাজধানীর এলেনবাড়িতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ে এক বৈঠক শেষে সংস্থার চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান ঘোষণা দেন- রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ পদক্ষেপে মাঠে নামছে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। বিআরটিএর এমন ঘোষণায় সায় দেয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিও।
সে সময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান বলেন, রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসের কোনো অনুমোদন নেই। অননুমোদিত যানবাহনের বিরুদ্ধে রোববার থেকে অভিযান পরিচালনা করা হবে। শুধু সিটিং সার্ভিস বন্ধ নয়, যাত্রী হয়রানি রোধে সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সে অনুযায়ী আজ রোববার থেকে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ হয়েছে, তবে আগের সিটিং সার্ভিসে যাত্রীদের কাছ থেকে যে ভাড়া নেয়া হত সেই বাসটিই যাত্রী বোঝাই করে লোকাল হওয়ার পরও ভাড়া আগের মতোই নিচ্ছে। এতে করে যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে।
মিরপুর থেকে মহাখালী-গুলশান-বাড্ডা দিয়ে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহনের যাত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি মহাখালী থেকে মিরপুর এসেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন এই বাসে যাতায়াত করি, গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত এটা সিটিং সার্ভিস ছিল। তখন বাসটি ভাড়া নিত ২০ টাকা। সিটিং সার্ভিস বন্ধ হওয়ায় আজ বাসটিতে যাত্রীসিট পরিপূর্ণ হওয়ার পরও অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে এসেছে। লোকাল বাসের মতো সারা রাস্তায় যাত্রী তুলেছে, এতে করে আগের চেয়ে বেশি সময় লেগেছে গন্তব্যে পৌঁছাতে। তারপরও ভাড়া আগের মতোই ২০ টাকা দিতে হয়েছে, তাহলে আমাদের লাভ কী?’
তিনি বলেন, ‘অথচ বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য এসব যানবাহনের সর্বনিম্ন ভাড়া সাত টাকা আর মিনিবাসের জন্য পাঁচ টাকা নির্ধারণ করেছে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য নির্দিষ্ট ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া আছে। কিন্তু বাস মালিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া আদায় করছে।’
সিটিং সার্ভিস বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও আগের মতো ভাড়া নেয়া হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিটিং সার্ভিস বন্ধ হয়েছে, তবে ভাড়া কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের হয়নি। ভাড়ার চার্ট অনুযায়ী ভাড়া নেয়া হবে। প্রতিটি বাসে ভাড়ার চার্ট থাকবে, আর যদি কোনো বাসে চার্ট না থাকে বা সে অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া না নেয়া হয় সেক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা মনিটরিং শুরু করেছি, কেউ এ সিদ্ধান্ত না মানলে আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেব।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিটিং সার্ভিস বন্ধের যুগান্তকারী এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দুর্দশা, হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্য লাঘব হবে। যাত্রীসেবার মান বাড়বে, মাঝপথের যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার বিড়ম্বনার অবসান হবে।
‘কিন্তু ভাড়া আগের মতোই আছে,’ বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকার এবং মালিকপক্ষের পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।’
তিনি জানান, ঢাকা মহানগরী ও আশেপাশের জেলায় বড় বাসের (ব সিরিজ) ভাড়া প্রতি কিলোমিটার এক টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসের (জ সিরিজ) ভাড়া এক টাকা ৬০ পয়সা। বড় বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া তিন কিলোমিটার পর্যন্ত সাত টাকা, মিনিবাসের তিন কিলোমিটার পর্যন্ত সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকা।
বিআরটিএর উল্লিখিত হিসেবে কিলোমিটার প্রতি ভাড়ার চার্ট অনুযায়ী ভাড়া নেয়ার জন্য বাস মালিকপক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি।
এএস/জেডএ/বিএ/পিআর