তিস্তা চুক্তিই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ : অধ্যাপক আকমল


প্রকাশিত: ১০:৩৬ এএম, ০৭ এপ্রিল ২০১৭

চারদিনের সফরে ভারতে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিরক্ষাসহ ২৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হওয়ার কথাসহ নানা কারণে বেশ আলোচিত এ সফর। বলা হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক এ সফরে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা ইস্যুরও সমাধান হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে জাগো নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন।

তিনি বলেন, এ সফরের গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে এমন একটি প্রতিবেশীর সঙ্গে যার অবস্থান আমাদের তিন দিকেই। আমরা একই ভূখণ্ডের অংশীদার ছিলাম, ভারত বিভক্ত হওয়ার আগেই। আমাদের অতীত ইতিহাসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে আবির্ভাবের পরে আমাদের অর্থনীতি, নদী সম্পর্কীয় অংশীদারিত্ব, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে এ সফর গুরুত্বপূর্ণ।

‘যেহেতু আমাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উত্থান পতন অতীতে লক্ষ্য করা গেছে। বর্তমান সরকার সেই সম্পর্কে স্থিতিশীলতা নিয়ে গেছে। বর্তমান শাসকদলের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গিগত ঐক্যর কারণে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আগের তুলনায় অনেক স্থিতিশীল হয়েছে। এ সরকার ভারতের নিরাপত্তার বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।’

তিনি বলেন, দেশটির উত্তরপূর্ব অঞ্চলের বিদ্রোহীদের আশ্রয় বন্ধ করে দেয়ায় ভারত সন্তুষ্ট। উত্তরপূর্ব প্রদেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ট্রানজিট ট্রানশিপমেন্টের সুযোগ দিয়েছে। এসবই চলমান। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে এই ধারাবাহিকতা থাকবে। আরও নতুন নতুন বিষয়ে দু’দেশ চুক্তি ও সমঝোতা করবে।’

সাবেক ঢাবি শিক্ষক বলেন, প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের সঙ্গে আগে কখনও কাঠামোর মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো সমঝোতা ছিল না। তবে দু’দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ভিন্ন মাত্রিক সহযোগিতা চলছিল, সেটাকে এখন আনুষ্ঠানিক রূপ দেবে।

‘এই সহযোগিতা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবু সেই সমালোচনা সত্ত্বেও চুক্তিটি প্রধান গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশে চীনের প্রভাব মোকাবেলায় ভারতও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে।’

কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বা অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগি দেশের মানুষের প্রত্যাশা বলেও মনে করেন তিনি।

অধ্যাপক আকমল হোসেন বলেন, যৌথভাবে ৫৪টি নদীর মালিক বাংলাদেশ ও ভারত। কিন্তু আমাদের অবস্থান ভাটিতে। সেই নদীগুলোর পানিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ভারতের আছে।

তিনি বলেন, তিস্তা নিয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হলো বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থকে অবহেলা করা। এই কারণে বাংলাদেশের জনগণের ভেতরে ভারতের বন্ধুত্বের ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন আছে। এটা নিয়ে অপেক্ষা দীর্ঘতর হচ্ছে।

তার ভাষ্য, তিস্তা নদী নিয়েই যদি সমাধানে না আসা যায়, তাহলে অন্যান্য অভিন্ন নদীগুলো নিয়েই বা কিভাবে আশাবাদী হবো?

গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা বাঁধের ফলে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা মোকাবেলায় এদেশের পক্ষ থেকে গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে। সে বিষয়েও এবারের সফরে কথাবার্তা হবে। কিন্তু ভারতের তরফ থেকে হয়তো এটা নিয়ে এখনি কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে না। এটা স্বাভাবিক। এ বিষয়ে হয়ত সময় লাগবে। তবে তিস্তা নিয়ে ইতোমধ্যে দীর্ঘ সময় পার হয়েছে। কিন্তু তিস্তার ব্যাপারে পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান আমাদের আশাহত করে। জনমত যাচাই করলে দেখা যাবে, এ ব্যাপারে জনগণ ভারতের স্বদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।

প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফর নিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্পর্কের নতুন উচ্চতা বলবো না। এসব শব্দে আত্মতুষ্টিতে ভোগা যায়। বন্ধুত্বের যে হাত যদি দ ‘দেশের পক্ষ থেকে সমানভাবে না বাড়ানো হয়, তাহলে দুটি হাতের মধ্যে বিরাট ফাঁক থেকে যাবে। প্রতিরক্ষা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক হলেই দ ‘দেশের সম্পর্ক উচ্চমাত্রায় পৌঁছে যাবে সেটা নয়।

তিনি বলেন, ভারতের দেয়া ঋণে এমন কিছু অবকাঠামো তৈরি হতে যাচ্ছে, যার থেকেও ভারতই লাভবান হবে। আগরতলা থেকে আখাউড়া পযর্ন্ত যে রেললাইন হবে, ভারতের জন্য তার সুবিধাজনক। দু’দেশের দিনাজপুরে মধ্যে যে রেল সংযোগ হবে, তা শুধু আমরাই ভোগ করবো না, এতে ভারতেরও উপকার হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় যে সকল চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে, তা নিশ্চয় দ ‘দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নেবে। কিন্তু বড় বিষয়কে অমীমাংসিত রেখে, অন্য বিষয়গুলোতে চুক্তি করায় সম্পর্ক একেবারে হাইয়ার স্টেজে পৌঁছে যাচ্ছে, সেটা বলা যাবে না। এতে করে সম্পর্কের মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা থেকেই যাচ্ছে।

চীনের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করেছে। যার ফল হিসেবে দুটো সাবমেরিন এসেছে। এছাড়া দেশটির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা (অস্ত্র নেয়া, প্রশিক্ষণ) নিয়ে আসছে বাংলাদেশ। চীন ভারতের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায়, বাংলাদেশে চীনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য ভারত প্রতিরক্ষা বিষয়ক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশের সরকারও এতে সম্মত আছে।

তবে এই মুহূর্তে তিস্তা চুক্তিই বাংলাদেশের জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক আকমল হোসেন।

জেপি/এমএমএ/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।