আয়োজন সামান্য আনন্দ অফুরান


প্রকাশিত: ০৯:৪৬ এএম, ২৬ মার্চ ২০১৭

কাঁটাবন মোড় থেকে শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটে যাওয়ার আগে দক্ষিণ দিকে পরীবাগের যে রাস্তাটি হাতিরপুলের দিকে চলে গেছে সেদিক থেকেই থেমে থেমে ভেসে আসছিল ক্ষুদে শিশুদের হৈচৈ ও উচ্ছ্বল হাসির শব্দ।

hasimukh

সামনে এগিয়ে যেতেই দেখা গেল, রাস্তার ওপর প্লাস্টিক বিছিয়ে সারিবদ্ধভাবে বসে শতাধিক ক্ষুদে শিশু পিলো (বালিশ) পাসিং খেলায় ব্যস্ত। একজন বাদ পড়তেই অন্যরা হেসে খুন। আরেক পাশে অপেক্ষাকৃত একটু বয়সে বড় শিশুদের প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে চিত্রাঙ্কন ও উপস্থিত বক্তৃতা করতে দেখা যায়।

অনুসন্ধানকালে জানা যায়, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে হাসিমুখ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে সদস্য পথশিশুদের জন্য আনন্দ উৎসবের আয়োজন করে।

hasimukh

ওদের আয়োজন সামান্য। আইল্যান্ডের গাছের সঙ্গে রশি বেঁধে ছোট ছোট লাল-সবুজ পতাকা ঝুলিয়েছে ওরা। রাস্তার ওপরই লাল-সবুজ পতাকাশোভিত ছোট একটি ব্যাকড্রপ ও সামনে একটি টেবিলে কিছু উপহার সামগ্রী সাজানো। আয়োজন সামান্য হলেও শিশুদের মনে আনন্দ খুবই বেশি লক্ষ্য করা যায়।

কুলসুম নামের এক স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী জানান, এ প্রতিষ্ঠানটি গত পাঁচ বছর যাবত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের দিয়ে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। তারা নিজেরা চাঁদা তুলে হতদরিদ্র শিশুদের সপ্তাহে ছয়দিন বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত পড়ালেখা শেখাচ্ছেন। পরীবাগে ফুটপাত ও বস্তিতে থাকা শিশুদের বাবা-মায়েদের বুঝিয়ে তাদের হাসিমুখ স্কুলে নিয়ে আসেন।

hasimukh

এখানকার সবাই বিভিন্ন সরকারি স্কুলে পড়াশুনা করে। তাদের বাবা-মায়েদের পক্ষে অনেকসময় স্কুলে বেতনভাতা পরিশোধ, বইখাতা কিনে দেয়া সম্ভব হয় না। তাই তারা শিশু শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিনা পয়সায় পড়ান। শুধু লেখাপড়াই না, শিশুদের পুষ্টিগুণ বিবেচনায় নাস্তাও করান।

হাসিমুখ নামক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান উদ্যোক্তা নুসরাত একা জানান, সবাই মিলে চেষ্টা না করলে সমাজ পরিবর্তন হবে না। যে যার জায়গা থেকে যতটুকু সামর্থ আছে তা দিয়ে চেষ্টা করলে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব- এ ধারণা থেকে তারা হতদরিদ্র শিশুদের শিক্ষাদানের কর্মসূচি শুরু করেছেন।

hasimukh

তিনি বলেন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা কিংবা পড়ুয়া তরুণরা নিজেরা যা জানে সেই জ্ঞান শুধু নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না- এ জ্ঞান অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিলেই জাতি উপকৃত হবে। শিশুদের মধ্যে অনেক মেধাবী আছে। শুধুমাত্র তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে পারলেই ভবিষ্যতে সুনাগরিক হতে পারবে। এ টার্গেট নিয়েই ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করে যাচ্ছেন।

পড়াশুনা ছাড়াও তারা বিভিন্ন জাতীয় দিবস যেমন- ১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ ও পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন দিবস শিশুদের নিয়ে আনন্দ-উৎসবের আয়োজন করে থাকেন। এ দিনগুলোর তাৎপর্যও সেদিন তুলে ধরা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তারা আজও শিশুদের জন্য উপস্থিত বক্তৃতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পিলো পাসিংসহ বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন। সব খরচ তারা নিজেরাই বহন করেন। গত নভেম্বরে সংগঠনটির রেজিস্ট্রেশন নিয়েছেন বলে জানান নুসরাত।

এমইউ/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।