যে আগুন আজও জ্বলে ধুকে ধুকে


প্রকাশিত: ০৭:০৮ পিএম, ২৪ মার্চ ২০১৭

আ ক ম মোজাম্মেল হক। বীর মুক্তিযোদ্ধা। মন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রথমবারের মতো পালন হতে যাচ্ছে ‘গণহত্যা দিবস’। দিবসের সার্থকতা, সরকারের নেয়া উদ্যোগ ও করণীয় নিয়ে সম্প্রতি তিনি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। আলাপকালে তুলে ধরেন সেই ‘কালরাত্রি’র স্মৃতিকথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ : প্রথমবারের মতো ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করতে যাচ্ছে জাতি। প্রস্তুতির বিষয়ে কি বলবেন?

আ ক ম মোজাম্মেল হক : অল্প সময়ের ঘোষণা। যে কারণে এবার ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করি। তবে যেহেতু দিবসটি প্রথমবারের মতো পালন করা হচ্ছে, ফলে এটি ইতহাসে মাইলফলক হিসেবে জায়গা করে নেবে।
এ দিন ‘রক্তাক্ত ২৫ শে মার্চ : গণহত্যা ইতিবৃত্ত’  শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতার স্তম্ভ সংলগ্ন স্থানে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়েও দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে আলোচনা ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। দেশের বাইরে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতেও কর্মসূচি পালনে নোটিশ করা হয়েছে।

জাগো নিউজ : স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর দিবসটি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। দীর্ঘসময় উদাসীন থাকা হলো কিনা?

আ ক ম মোজাম্মেল হক : স্বাধীনতার পর দেশটি তো সোজা পথে এগোয়নি। জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে দেশকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করে। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে জাতিকে অনেক দূরে সরাতে সক্ষম হয় স্বাধীনতাবিরোধীরা। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট দিবসগুলো সে সময় বিশেষ গুরুত্ব পায়নি।
জাগো নিউজ : আপনারাও তো দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকলেন?

আ ক ম মোজাম্মেল হক : আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় নতুন গতি পেয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে সক্ষম হচ্ছি। এর মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা তুলে ধরা হচ্ছে।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের সংখ্যা নিয়ে পাকিস্তান ও খালেদা জিয়া যে মিথ্যাচার করছে, তার জবাব দেয়ার জন্য ২৫ মার্চ গণহত্যার বিষয়টি নতুন প্রজন্মের কাছে বিশেষভাবে তুলে ধরা দরকার। জাতি যেন কোনো অপশক্তির মিথ্যাচারে বিভ্রান্তি না হয়, এ জন্যই ‘গণহত্যা দিবস’ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে সরকার।

জাগো নিউজ : দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে কি উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার?

আ ক ম মোজাম্মেল হক: পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ল ইতোমধ্যে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারা মিটিংও করেছে এ নিয়ে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কূটনীতিকদের মাঝে দিবসটির গুরত্ব তুলে ধরা হবে। ২৫ মার্চে পাকিস্তান সেনাদের বর্বরতার নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে আন্তর্জাতিক মহলে।

জাগো নিউজ : এ দিনের কোনো স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায় আপনাকে?

আ ক ম মোজাম্মেল হক : ১৯৭০ সালে আমার শিক্ষাজীবন শেষ হয়। এরপর আমি ঢাকা জেলার স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পাই। এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে বিভিন্ন পদে তিনবার দায়িত্ব পালন করি।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কথা মনে পড়লে আজও শিউরে উঠি। আমি তখন গাজীপুরের জয়দেবপুরে থাকি। আমরা মধ্যরাতেই হামলার খবর পাই। শেষ রাতে ভবনের ছাদে উঠে দেখি, তখনও ঢাকায় আগুনের শিখা জ্বলছে। মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। পরে তো সবই জানতে পারলাম। আমাদেরও প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। তবে যে আগুন সে দিন দেখেছি, তা এখনও বুকের মধ্যে ধুকে ধুকে জ্বলে।

জাগো নিউজ : স্বাধীনতার সাড়ে চার দশক পার করলো বাংলাদেশ। কোথায় যেতে পারলাম আমরা? 

আ ক ম মোজাম্মেল হক : অর্থনৈতিক মুক্তি আর মানবিক সমাজ বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলের আপামর জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে লাল-সবুজের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পায়। স্বাধীনতার  স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার আপন মহিমায় যখন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি তার গতিরোধ করে দেয়। ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের থমকে দাঁড়ানোর দিন। যে কারণে দীর্ঘ ৪৫ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খা পূরণ হয়নি। বাংলাদেশ তার কাঙ্খিত জায়গায় যেতে পারেনি।

এএসএস/এমএআর/আরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।