নির্মল বাতাসের শহরে বর্জ্য মিশ্রিত পানি


প্রকাশিত: ০৫:৪২ পিএম, ২১ মার্চ ২০১৭

এরই মধ্যে নির্মল বাতাসের শহর হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে রাজশাহী নগরী। এখনকার বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণা দ্রুতই কমেছে। মূলত বায়ু দুষণ কমানোয় বিশ্বসেরা শহরের তালিকায় সবার উপরে উঠে এসেছে পদ্মা পাড়ের এ শহর।

গত কয়েক বছরের জিরো সয়েল প্রকল্প এনে দিয়েছে এ খেতাব। এছাড়া ইটভাটার চিমনির উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়া এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বহুল ব্যবহারে কমেছে বায়ু দুষণ।

কিন্তু, এখনো বিষফোঁড়া শহরের বর্জ্য মিশ্রিত পানি। শোধন ছাড়াই বয়ে যাওয়া এ পানিতে মারাত্মক দুষণের কবলে পার্শ্ববর্তী বারনই নদী। পানি দুষণ চরম সীমায় পৌঁছানোয় থমকে আছে নগরীর উপকণ্ঠ নওহাটা পৌরসভার একটি মেগা প্রকল্প।

বারনই নদীতে এসে পড়া মহানন্দাখালি ও দুয়ারী খাল নিয়ে ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ওই এলাকায় গড়ে উঠবে বিশাল বিনোদন কেন্দ্র। বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে নদীপাড়ের পরিবেশও।

যদিও এখন পুরো এলাকা রাসিকের ভাগাড়। দুষণ কবলিত বারনই নদীতে মাছ শিকার ও পানি সেচের কাজে ব্যবহার করায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষক ও জেলেরা। বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে ভুগছেন অনেকেই। মারা যাচ্ছে নদীর মাছ।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন পবা উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক জালাল উদ্দিন। তিনি বলেন, দুই খাল দিয়ে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য বারনই নদীতে নামছে। এই বর্জ্যের কারণেই নদীপাড়ের বাসিন্দারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাদের চর্মরোগ হচ্ছে। মাছও মারা যাচ্ছে। বিষয়টি তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে নওহাটা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বার বার পরিকল্পনা হাতে নিয়েও তারা এগুতে পারেননি শুধুমাত্র পানি দুষণের কারণে। এরই কারণে বারনই নদী সংরক্ষণের উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। আর তাই সবার আগে বারনই নদীকে দুষণ মুক্ত করতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সহায়তা চেয়েছেন তারা। তবে দীর্ঘদিনেও এ নিয়ে সাড়া না পাওয়ায় হতাশ হয়েছেন তিনি।

বিষয়টি ভাবিয়েছে রাসিক কর্তৃপক্ষকেও। নগর সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, বর্জ্য মিশ্রিত পানি শোধন করে কৃষিতে ব্যবহার করতে চায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। গত বছর এনিয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছে তারা। বিষয়টির সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এটা যদি হয়, তাহলে বর্জ্য আর বারনই নদীতে যাবে না।

এদিকে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরমুখী হচ্ছে মানুষ। নানান উদ্দেশ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে আবাস গড়ছে নগরীতে। সেই সঙ্গে বাড়ছে শিল্প-কারখানা। বাড়ছে বহুতল ভবন। এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তালিকাতে যোগ হচ্ছে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনেস্টিক সেন্টার। এসব উৎস থেকে প্রতিদিনই নির্গত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ নগরীর সরকারি-বেসরকারি এসব হাসপাতাল, ক্লিনিকের অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি গিয়ে পড়ছে সিটি করপোরেশনের ড্রেনে। তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে রাজশাহী বিসিকের অপরিশোধিত তরল বর্জ্য। তবে নগরীতে বর্জ্য শোধনে কোনো শোধনাগার না থাকায় এসব বর্জ্য প্রবাহমান পানিকে দূষিত করছে। দূষিত পানি পরে বিভিন্ন নিষ্কাশন নালা হয়ে পড়ছে বারনই নদীতে।

রাজশাহীর বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. আবুল বাসার জানান, ড্রেনের পানিতে সরাসরি মেডিকেল-ক্লিনিকগুলোর বর্জ্য গেলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি ডেকে আনবে। আর এ জন্য মেডিকেল-ক্লিনিকগুলোর বর্জ্য অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ধরে রেখে প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট দেয়া দরকার।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বর্জ্যে দূষিত পানি প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে শোধন করে ড্রেনে ফেলা উচিত। বিশ্বের সকল আধুনিক শহরে এ প্রক্রিয়া চালু থাকলেও রাজশাহীতে নেই। দুষণ নিয়ন্ত্রণে রাসিকের উচিত এ ধরনের প্ল্যান্ট স্থাপন করা। এছাড়াও দূষিত পানি সরাসরি পদ্মায় ফেলতে পারলে এবং তা পদ্মার প্রধান ধারায় যুক্ত করা গেলে এ দুষণ রোধ সম্ভব।

রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পরিচালক মামুনুর রশীদ জানান, রাজশাহী বিসিকের কারখানা মালিকদের তরল বর্জ্য শোধনের জন্য শোধণাগার স্থাপনে বার বার নোটিশ দেয়া হয়েছে। তবে তারা আর্থিক সংকটের অজুহাতে দীর্ঘদিনেও এটি করেননি। এছাড়া তাদের সমন্বিত ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নগরীর মেডিকেল-ক্লিনিকগুলোকে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য শোধনে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি যথাযথভাবে মনিটরিংও করা হচ্ছে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এমএএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।