লাশ কাটায় সিদ্ধহস্ত সিকান্দার পাখিপ্রেমিকও বটে
চারদিকে লাশের উৎকট গন্ধ। পুলিশের গাড়ি থেকে নামানো হলো আনুমানিক ৩০-৩২ বছরের এক যুবকের লাশ। গাড়িতে বসেই পুলিশের এক কনস্টেবল লাশটি নামানোর জন্য উচ্চস্বরে হাক ডাক শুরু করলেন।
পুলিশের চিৎকার শুনে কয়েকজন যুবক ছুটে এসে লাশটি দ্রুত নামিয়ে মর্গে রেখে দিলেন। এ সময় নাকে মুখে রুমাল চেপে মর্গে ঢুকলো তরুণ, তরুণী ও এক বৃদ্ধা। স্বজনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লো সবাই। দুর্গন্ধে টিকতে না পেরে বাইরে বেরিয়ে বমি করে দিলেন তরুণী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ ঘরের চৌহদ্দিতে এ দৃশ্য নিত্যদিনের। প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন থানা থেকে ময়নাতদন্তের জন্য এখানে লাশ আসে। সাধারণ মানুষের কাছে মর্গ মানেই পচা, গলা, লাশের দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশযুক্ত একটি স্থান।
শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও লাশ কাটা ঘর অর্থাৎ এ মর্গেই গড়ে উঠেছে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়। মর্গের এক চিলতে বারান্দায় রং-বেরংয়ের পাখিরা আপন মনে তিড়িং বিড়িং করে ঘুরে বেড়ায়। শুধুমাত্র পাখিদের নির্বিঘ্নে বিচরণের জন্য ছোট ছোট কলস ও ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে।
পাঠকের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে লাশ কাটা ঘর আবার পাখিদের নিরাপদ চারণভূমি হয় কি করে, কে ই বা এর ব্যবস্থা করেছেন।
ঘরগুলো করে দিয়েছেন ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মরচুয়েরি এসিস্ট্যান্ট সিকান্দার আলী। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। সুঠাম দেহের অধিকারী সুদর্শন সিকান্দার আলী পেশাগত জীবনে লক্ষাধিক লাশের ময়নাতদন্তে চিকিৎসকদের সহায়তা করেছেন। তাকে যারা না চিনেন তাদের অনেকেই তার নাম শুনলে আঁতকে উঠেন।
অথচ তার যে একটি সুন্দর মন রয়েছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। পুরাতন লাশ কাঁটা ঘরের পাশেই একটি কক্ষে কাজের ফাঁকে তিনি বিশ্রাম নেন। সেই রুমের সামনে এক চিলতে বারান্দায় তিনি পাখি লালন পালন করছেন।
শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে ছোট ছোট রং বেরংয়ের পাখিরা এদিক সেদিক ফুরৎ ফারুৎ ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সিকান্দার আলী বলেন, তিনি পাখিদের ভালোবাসেন। তবে তিনি বদ্ধ খাঁচার ভেতর পাখি রেখে পালন করতে চান না। তাই পাখি কিনে বারান্দায় অবাধ বিচরণের জন্য ছেঁড়ে রেখেছেন। প্রথম প্রথম কয়েকটি পাখি পালিয়ে গেলেও এখন আর পালায় না।
সিকান্দার আলী বলেন, মানুষ বলেন আর পশুপাখি বলেন, বিশ্বাস নষ্ট না হলে ওরা পোষ মানে।
এমইউ/এএইচ