গৃহনির্মাণে ভর্তুকি ৮০০ কোটি টাকার প্রস্তাব


প্রকাশিত: ০২:২৮ এএম, ১৫ মার্চ ২০১৭

সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহনির্মাণে ভর্তুকি বাবদ বছরে ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে অর্থ বিভাগ। একই সঙ্গে এ খাতে ঋণের পরিমাণ বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগ বলছে, সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে গৃহ ঋণে সুদের হার কমিয়ে ৮ শতাংশ করা প্রয়োজন। এর ৫ শতাংশ দেবে ঋণগ্রহীতা এবং সরকার পরিশোধ করবে ৩ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে যারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে রয়েছেন তারা ১০ লাখ টাকা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মরতদের সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা গৃহ ঋণ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১০ শতাংশ সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ পেয়ে থাকেন সরকারি চাকুরেরা। এ হিসেবে ঋণের পরিমাণ এক লাখ ২০ হাজার টাকা নির্ধারিত।

অর্থ বিভাগের প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে অলস টাকার পরিমাণ অনেক। একই সঙ্গে অবিক্রিত ফ্ল্যাটের সংখ্যাও বাড়ছে। একজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য একটি বাসস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে সরকারি কর্মচারীদের উপকারের পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত ও আবাসন শিল্পও লাভবান হবে। কমবে সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতির প্রবণতাও।

এতে আরও বলা হয়েছে, এ প্রস্তাব বাস্তবায়নে সরকারকে খুব বেশি অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে না। চাকরিজীবীদের জমানো পেনশনের যে টাকা কোষাগারে জমা থাকবে সেখান থেকে এ অর্থের সংস্থান সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ঋণ নিয়ে মন্ত্রণালায়ের একটি কমিটি কাজ করছে। ওই কমিটি আলাপ-আলোচনা করে যে প্রস্তাব দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ আর এম নাজমুজ ছাকিবকে এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ কমিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠকও করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কমিটির এক সদস্য জানান, ৩১ মার্চের মধ্যে তাদের এ বিষয়ে একটি চূড়ান্ত প্রস্তাবনা অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রস্তাবনা প্রস্তুত করছেন তারা।

এদিকে, কমিটির কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, মূল বেতনের তিন ভাগের এক ভাগের বেশি অর্থ কর্তন করা যৌক্তিক হবে না। তবে এখন যেহেতু ৫০ শতাংশ পেনশন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা পুনঃপ্রবর্তন করেছে সরকার, তাই গ্র্যাচুইটির একটি নির্দিষ্ট অংশকে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিয়ে ঋণের সিলিং নির্ধারণ করা যেতে পারে।

এছাড়া নবীন কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধার আওতায় চাকরির শুরুতেই একটি বাসস্থানের সংস্থান করা সম্ভব হলে সরকারি চাকরিতে মেধাবীরা আকৃষ্ট হবেন।

বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা প্রায় ২১ লাখ। এর মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিতসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন সাত লাখ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের পরিমাণ রয়েছে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির (অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ) সাবেক সভাপতি ও মেঘনা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ নুরুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, সবগুলো ব্যাংকেরই গৃহ ঋণ সংক্রান্ত একটি প্রজেক্ট আছে। আমরা এটা প্রমোটও করছি। এ ক্ষেত্রে সরকারও যদি আরও কম সুদে গৃহ ঋণের ব্যবস্থা করে তাহলে তা ব্যাংক খাতের জন্য সুখবর হবে। কারণ ব্যাংকিং সেক্টরে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের পরিমাণ যথেষ্ট।’

এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই আমরা। তবে এর সঙ্গে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও অল্প সুদে গৃহ ঋণ দেওয়া প্রয়োজন।

বর্তমানে ৬০০ থেকে ৭০০ বর্গফুট আয়তনের অনেক ফ্ল্যাট পুরোপুরি বসবাসের উপযোগী কিন্তু অবিক্রিত রয়েছে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে আবাসন শিল্পের মন্দা অনেকাংশে কেটে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এমইউএইচ/এমএমএ/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।