ব্যাচেলর শুনলেই দরজা বন্ধ
রাজধানী ঢাকায় ব্যাচেলরদের বাসাভাড়া দেয়ার গল্প পুরনো। দিন যাচ্ছে, ব্যাচেলরদের কান্না যেন আরও ভারী হচ্ছে। ভাড়া দেয়ার সামর্থ থাকলেও ঠাঁই মিলছে না তাদের। সব শর্ত মেনে নিয়েও মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছেন না লাখ লাখ ব্যাচেলর। ব্যাচেলর নাম শুনলেই ঘরের দরজা বন্ধ। ব্যাচলর মানেই যেন মালিকপক্ষের সঙ্গে আজন্ম শত্রুতা।
যাদের চাকায় ভর করে রাজধানীর গতি, সেই কর্মমুখী মানুষদের বাসাভাড়া নিয়ে দুঃখের যেন অন্ত নেই। বিশেষ করে দেশে জঙ্গি হামলার পর থেকেই ব্যাচলরদের বাসা পেতে এক প্রকার অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা করেছেন বাসামালিকরা।
মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকায় দেয়ালে সাঁটানো বাড়িভাড়ার বিজ্ঞাপন দেখে বাসার মালিকদের সঙ্গে মোবাইলে ‘বাসা ভাড়া বিষয়ে’ কথা বলছিলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। কিন্তু কথা বলে বারবারই ব্যর্থ হচ্ছিলেন তিনি।
বিষয়টি উল্লেখ করে জানতে চাইলে মামুন বলেন, গত ১৫/২০ দিন ধরে প্রতিদিন বাসা খুঁজছি। কিন্তু ব্যাচেলর হওয়ায় বাসা খুঁজে পাচ্ছি না। বাসার মালিকরা ব্যাচেলর কথা শুনলেই ‘বাসা ভাড়া হবে না’ বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়।
বাসা খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত হয়েগেছি কিন্তু এখনও বাসা পাওয়া যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এমনও হয়েছে- বাসা ভাড়ার জন্য ওয়ালে সাঁটানো বিজ্ঞাপনের মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে বাসাভাড়ার সববিষয় কথা শেষে যখন বাসা মালিককে বলেছি আমরা ব্যাচলর, তখন কোনো কথা না বলেই সঙ্গে সঙ্গে কল কেটে দিয়েছেন। বাসা পেতে দুর্ভোগের শেষ নেই ব্যাচেলরদের।
শুধু আব্দুল্লাহ আল মামুন নয় রাজধানীতে এমন লাখ লাখ ব্যাচেলর ভাড়া বাসা পেতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেয়ালে সাঁটানো বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে, ব্যাচেলরদের ভাড়া দেয়া হয় না। অনেক টু-লেটে লেখা ‘এক রুম ভাড়া হবে (স্বামী-স্ত্রী), টু-লেট (ব্যাচেলর ব্যতীত) এমন সব লেখা। এছাড়া বাসামালিকরা স্পষ্ট করে বলছেন, বাসা খালি থাকলেও পরিবার ছাড়া ব্যাচেলরদের ভাড়া দেব না।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন কামরুজ্জামান তমাল। রাজধানীর এক মেসে থাকেন তিনি। দুইজন সহকর্মী মিলে নতুন করে বাসা নিতে চাচ্ছেন। কিন্তু ব্যাচেলর বাসা খুঁজে পেতে বিড়াম্বনায় পড়েছেন তমাল। তিনি বলেন, বাসামালিকরা তো ব্যাচেলরদের বাসাভাড়া দিতে চায় না আর যে দুই-একজন দিতে চান তাদের অনেক রকমের কন্ডিশনের পাশাপাশি অনেক বেশি ভাড়া দাবি করেন। যে বাসা ফ্যামিলির জন্য ভাড়া ১২ হাজার সেটা ব্যাচেলরদের জন্য ১৫/১৬ হাজার টাকা চাওয়া হয়।
শেওড়াপাড়ার ইকবাল রোডের বাসামালিক এরশাদ আলীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, ব্যাচেলরদের ফ্ল্যাট ভাড়া দিলে নানা ধরনের সমস্যা হয়। তাছাড়া অন্যান্য ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকা পরিবারগুলোরও সমস্যা হয়। বাসা নোংরা করে রাখার পাশাপাশি বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হৈ-হুল্লোড় করে আড্ডা দেয়। সবকিছু বিবেচনা করে ব্যাচলরদের ভাড়া দিতে চায় না বাসামালিকরা। তাছাড়া ব্যাচেলরদের বাসাভাড়া দিলে নানা অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হতে হয়।
এ বিষয়ে ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, শহরে যেসব ব্যাচেলর বাসাভাড়া নিয়ে থাকেন, তাদের বড় অংশই শিক্ষার্থী। এছাড়া আছেন চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, চাকরিপ্রার্থী। অনেকে আছেন বিবাহিত কিন্তু স্ত্রী নিজ এলাকয় থাকেন তারাও ব্যাচেলর, কিন্তু রাজধানীতে বসবাসরত এসব ব্যাচলর বাসা নিতে গেলে মালিকরা জানিয়ে দেয় ‘ব্যাচেলর বাসা ভাড়া হবে না। সৃষ্ট এই পরিস্থিতি ভোগান্তিতে পড়েছে লাখ লাখ ব্যাচেলর।
তিনি বলেন, ব্যাচেলরদের জন্য বাসা পাওয়া বেশ দুষ্কর। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে মেস পাওয়া গেলেও তার অধিকাংশই পুরাতন অর্থাৎ যেগুলো ফ্যামিলি বাসা হিসেবে নিতে চায় না। অন্যদিকে ভাড়াও দাবি করে অনেক বেশি। আমরা এ বিষয়ে অনেকসময় নানা কর্মসূচি পালন করেছি, বারবার দাবি জানিয়ে এসেছি ব্যাচলরদের জন্য বাসাবাড়িতে ১০ শতাংশ কোটা রাখার জন্য।
এএস/বিএ