সাড়া দিচ্ছে না আমিরাত, সুখবর নেই শ্রমবাজারে
হঠাৎ ঘোষণায় ২০১২ সালের আগস্টে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। এরপর প্রায় সাড়ে চার বছর কেটে গেছে। নতুন করে শ্রমিক নেয়ার ঘোষণা নেই মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শ্রমবাজার দেশটির।
এ বিষয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের আহ্বানেও সাড়া নেই আমিরাতের। দীর্ঘদিন দেশটিতে উচ্চপর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক কোনো সফরও নেই। দুই বছর আগে বর্তমান প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনিও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হন। ফলে শ্রমবাজার নিয়ে কূটনৈতিক উদ্যোগ খানিকটা থমকে আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ২০১২ সালে সাময়িক ঘোষণায় আমিরাতের শ্রমবাজারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশিরা নতুন ভিসা ইস্যু ও অভ্যন্তরীণ ট্রান্সফার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। পাসপোর্ট খোয়া যাওয়া, রোহিঙ্গা ইস্যু আর সেখানে কিছু বাংলাদেশির বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ জানায়।
দেশটিতে প্রতি বছর যেখানে কয়েক লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হতো, সেখানে বছরে এখন কয়েক হাজার শ্রমিক প্রবেশ করতে পারেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের মধ্য দিয়ে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার আশা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শ্রমিক নেয়ার ঘোষণা দেয়নি আমিরাত। ফলে কার্যত কাজে আসেনি উচ্চপর্যায়ের সেই সফর। এরপর থেকে আজ অবধি বড় কোনো সফর দুই দেশের মধ্যে হয়নি।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে বহুপাক্ষিক কয়েকটি সম্মেলনে দুই দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে বন্ধ শ্রমবাজার খোলার বিষয়টি তোলা হলেও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। কেবল প্রতিশ্রুতিই শোনা গেছে। সর্বশেষ জিএফএমডি (গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় এসে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন দেশটির প্রতিনিধিরা। সেখানেও ইতিবাচক ইঙ্গিত মেলে। এরপর থেমে যায় সেই প্রক্রিয়া।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফরের জন্য আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি দুই দেশের সুবিধাজনক সময়ে এ ধরনের একটি সফর অনুষ্ঠিত হতে পারে। সেখানে বন্ধ শ্রমবাজার খুলে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে।
তবে শিগগিরই এ ধরনের সফর কিংবা বন্ধ শ্রমবাজার খুলে দেয়ার সম্ভাবনার কথা শোনাতে পারেননি এ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ১৩ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন, যা দেশটিতে অবস্থান করা অন্য দেশের শ্রমিকদের তুলনায় কয়েকগুণ। একটি বিশেষ দেশের শ্রমিক বেশি হয়ে যাওয়ায় অন্য দেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে আমিরাত সরকার। এ কারণে নতুন করে বাংলাদেশি শ্রমিকরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবেশ করতে পারছেন না।
এদিকে আমিরাতের বাজার খুলতে কূটনৈতিক গাফিলতি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতাকে দায়ী করছেন জনশক্তি রফতানিকারকরা। এমনকি বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা বন্ধের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও পর্যটকদেরও আমিরাতের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রা’র এক সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, মালয়েশিয়া পাঁচ লাখ শ্রমিক নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সর্বসাকুল্যে সেখানে ১০ হাজার শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হবে। অথচ আমিরাতের বাজারে এখনও শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সাময়িক নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আর এ সুযোগ নিচ্ছে নেপালসহ অন্যান্য দেশ।’
সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতায় এমনটি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জেপি/এমএআর/জেআইএম