দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের নারীরাই এগিয়ে


প্রকাশিত: ০৪:২৮ পিএম, ০৭ মার্চ ২০১৭

সেলিমা আহমাদ। সভাপতি, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি (বিডব্লিউসিসিআই)। ভাইস প্রেসিডেন্ট নিটল-নিলয় গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা। বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে নারীর উন্নয়ন-ক্ষমতায়ন নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখি হয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু
 
জাগো নিউজ : নারী ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির’ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। নারীর উন্নয়ন কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?  
সেলিমা আহমাদ : নারী ব্যবসা করছেন, চাকরি করছেন, রাজনীতি করছেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় প্রধান নেতৃত্বে নারীরা দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু সংসদে আসনের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করলে নারীরা এখনও পিছিয়ে রয়েছেন। একই চিত্র সমাজের অন্যান্য জায়গায়ও।

বিশ্ব নারী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সাহসী হও, পরিবর্তন আনো’। জাতিসংঘ বলছে, নারীর ক্ষমতায়নে অর্থনৈতিক এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। সাহসী এবং পরিবর্তনের জন্য অনেকগুলো জায়গায় আমাদের আরও কাজ করা দরকার।

জাগো নিউজ : যেমন?
সেলিমা আহমাদ : সম্পত্তিতে নারীর অধিকারে এখনও পূর্ণতা আসেনি। সম্পত্তিতে নারীর অধিকারের জন্য সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।

জাগো নিউজ : এটি দীর্ঘদিনের দাবি। আন্দোলনও হলো। আসলে কাকে সাহসী হতে হবে?
সেলিমা আহমাদ : আমি মনে করি রাষ্ট্র এবং সমাজকেই সাহসী হতে হবে। পরিবারে একজন ছেলে যে সুযোগ পায় একজন মেয়েকেও সে সুযোগ দিতে হবে। একজন নারীকেও পরিবর্তন আনার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সর্বপ্রথম নারীদের নিজেদের মানুষ মনে করতে হবে। অনেক বাধা আসতে পারে। কিন্তু এ বাধা কাটিয়ে উঠতে নারীকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।

salima

জাগো নিউজ : এ ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কি?
সেলিমা আহমাদ : প্রথমত একজন নারীকে তার নিজের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত পরিবার থেকে নারীকে সাহস এবং সুযোগ করে দিতে হবে। সর্বশেষ সমাজকে নারী সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। একই সঙ্গে নারীর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে হবে। যেমন নীতিমালার কারণেই নারীরা এখন ব্যাংক ঋণ পাচ্ছেন। সহায়তা পাচ্ছেন।

জাগো নিউজ : এরপরও তো নারী উন্নয়ন নীতিমালা নিয়ে গড়িমসি আছে।
সেলিমা আহমাদ : ধর্মান্ধতা এবং কুসংস্কারের কারণেই নীতিমালার বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে মনি করি। এর প্রভাব নারীদের ওপরই পড়ছে। পুরুষ এ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। তবে এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি রাষ্ট্র এবং রাজনীতির বড় একটি ভূমিকা আছে। নারীরা ভোটে জিতলেও ক্ষমতায় গিয়ে নারীর অধিকারের কথা ভুলে যায়। ক্ষমতায় যাওয়ার পর পুরুষ আরও শক্তিশালী হয়। এখানেই আমূল পরিবর্তন আনা দরকার। নারীকেও নারীর জন্য জায়গা তৈরি করে দিতে হবে।

জাগো নিউজ : নারীর উন্নয়ন নিয়ে কি এখনও হতাশ আপনি?
সেলিমা আহমাদ : নারীর উন্নয়ন ঘটছে। নারীর অধিকার নিয়ে সচেতন অনেকেই। কিন্তু সমতার প্রশ্নে হতাশ হতেই হয়। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে নারীকে ক্ষমতার কেন্দ্রে আনতেই হবে।

salima

জাগো নিউজ : এমন দিনেও নারীর প্রতি ভয়ঙ্কর নিপীড়ন। নারীর প্রতি সহিংসতা কতটুকু ভাবায়?  
সেলিমা আহমাদ : রাষ্ট্রযন্ত্রের কমিটমেন্টের ঘাটতির কারণেই নারীর প্রতি সহিংসতা হয়। সুশাসনের অভাব থাকলে নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নারীর বেলায় জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। আমি কি রাতে রাস্তায় বের হলে একজন পুরুষের মতো নিরাপদ বোধ করতে পারি? একই প্রশ্নে পুরুষের চেয়ে নারীর কর্মক্ষেত্র ক্ষীণ হয়ে আসে।

জাগো নিউজ : তুলনা করে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের নারীর অবস্থান নিয়ে কি বলবেন?
সেলিমা আহমাদ : ব্যবসায়ী নেত্রী হিসেবে এশিয়ার অনেক দেশেই যেতে হয় আমাকে। পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তানের নারীরা আমাদের নারীদের কাছ থেকে শিখছে বলে মনে করি। আমাদের এখানে নীতিমালা দাঁড়িয়ে গেছে। ওই দেশগুলো আমাদের নীতিমালা থেকে শিখছে। দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের নারীরাই এগিয়ে। আমাদের ঘাটতি থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ায় নারী উন্নয়নে বাংলাদেশ রোল মডেল।

এএসএস/ওআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।