সুনাম ও মেধা হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সরকারি কলেজগুলো


প্রকাশিত: ১১:৫৮ এএম, ০৩ মার্চ ২০১৭

মেধার দিক থেকে সরকারি কলেজের নাম শীর্ষ থাকলেও সেই সুনাম হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতিযোগিতার দিক থেকে বরাবর বেসরকারি কলেজগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ ব্যয়ের দিক থেকে সরকারি কলেজেই বেশি বরাদ্দ দেয়া হলেও অদৃশ্য কারণে নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারছে না সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ আদমজীনগর এমডব্লিউ সরকারি কলেজে ২০১৪ সালে ৯৪৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হয়। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সেই জিপিএ-৫ নেমে দাড়াঁয় ১৫ জনে। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানের জিপিএ-৫ কমে গেছে ৯২৯টি। একই অবস্থা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজও। এই কলেজে ২০১৪ সালে ১০০৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ নিয়ে ভর্তি হয়ে ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৩৩৪ জন। দুই বছরের এই কলেজে থেকেও জিপিএ-৫ হারিয়ে গেছে ৬৭৪টি। দেশের প্রায় সব সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ফলাফলের চিত্র একই। এছাড়া ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে সালে সরকারি কলেজগুলোতে ৩৪ হাজারের বেশি আসন শূন্য ছিল। অন্যদিকে নিয়ম ভঙ্গ করে ১২শ` এর বেশি অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছে এমন কলেজে সংখ্যাও আছে।

মাউশি সূত্র জানায়, ২৯৪টি কলেজে ৩৯ হাজার ৭২৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হয়। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সেই জিপিএ-৫ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ১৯৯ জনে। ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী দুই বছরের ব্যবধানের জিপিএ-৫ হারিয়েছে। একই অবস্থা পাসের হারেও। ২০১৬ সালে ২ লাখ ৩০ হাজার ৫১৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৯ জন। অর্থাৎ ৬১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি কলেজের এমন চিত্র খুবই ভয়াবহ। এই কলেজগুলো সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়েও শিক্ষার মান ধরে রাখতে পারছে। এসব কলেজে শিক্ষার মান ধীরে ধীরে কমছে যা প্রমাণ মিলেছে খোদ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এক রিপোর্টে। সারাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ানো হয় এমন ৩২৭টি সরকারি কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ফলাফল মূল্যায়ন জরিপ চালায় শিক্ষামন্ত্রণালয়। সেখানে দেখা গেছে জিপিএ-৫ পেয়ে সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে দুই বছরে সেই জিপিএ-৫ ধরে রাখতে পারেনি কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েও উচ্চ মাধ্যমিকে ফেল করছে এমন তথ্য মিলেছে।

সূত্র জানায়, সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মান মূল্যায়নে সারাদেশে ৩২৭টি কলেজের তথ্য চাওয়া হয়। এরমধ্যে মধ্যে ২৯৪টি কলেজ সাড়া দিলেও তথ্য দেয়নি ৩৩টি কলেজ। ফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে অধ্যক্ষরা দাবি করেন, স্নাতক পর্যায়ে সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক যুক্ত হওয়া, শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক কম হওয়া, মফস্বল এলাকায় শিক্ষক না থাকার কারণে শিক্ষার মান ধরে রাখতে পারছে না সরকারি কলেজগুলো। জাতীয় শিক্ষানীতিতে ৩০ জন ছাত্রের জন্য একজন শিক্ষক নিশ্চিতের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সরকারি কলেজে ১০৫ জন ছাত্রের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন।

বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান ২০১৫ বলা হয়েছে, শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের মধ্যে সরকারি কলেজগুলোতে ছাত্র শিক্ষকের অনুপাতের বৈষম্য সবচেয়ে বেশি। সরকারি কলেজে ১০৫ জন ছাত্রের জন্য শিক্ষক রয়েছে একজন, অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে অনুপাত ১:১০৫। ৩০২টি সরকারি কলেজে শিক্ষার্থী ১৩ লাখ ৫৬ হাজার ৯৬২ ও শিক্ষক ১২ হাজার ৯২৬ জন। বেসরকারি চেয়ে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকের তুলনায় ছাত্রের সংখ্যা অনেক বেশি।

শিক্ষক সংকটের কারণে মেধাবীরা ঝরে পড়ছে স্বীকার করে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামছুল হুদা বলেন, সরকারি কলেজ শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য অধ্যক্ষদের কাছে কলেজে সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধানের সুপারিশ করার জন্য মাউশি পক্ষ থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। অধ্যক্ষরা দিনভর সম্মেলনে অংশ নিয়ে যেসব সুপারিশ করেছে তার সমাধান করা হবে। একই সঙ্গে অধ্যক্ষদের পাঠদান নিশ্চিতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
 
এমএইচএম/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।