এখনো পাঠ্যপুস্তক পায়নি রাজধানীর অনেক স্কুলশিক্ষার্থী
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বছরের প্রথম দিন পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালিত হয়েছিল। কিন্তু বছরের দুইমাস পার হয়ে গেলেও পাঠ্যপুস্তক হাতে পায়নি রাজধানীর অনেক স্কুলশিক্ষার্থী। ফলে বই ছাড়াই তাদের পাঠদানের সিলেবাস শেষ করছেন শিক্ষকরা। রাজধানীর একাধিক স্কুলে সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
অব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রম বোর্ড (এনসিটিবি)। তারা বলছে, পাঠ্যপুস্তকের কোনো সঙ্কট নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এখনো রাজধানীর অনেক স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়া সম্ভব হয়নি। অধিকাংশ স্কুলেই বিভিন্ন ক্লাসের শিক্ষার্থীরা বাংলা, গণিত, উচ্চতর গণিত, বিজ্ঞান, আনন্দপাঠ ও কৃষিশিক্ষা বই পায়নি। বই ছাড়াই শিক্ষকরা সিলেবাস শেষ করছেন। ফলে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা নোট-গাইড ও কোচিংয়ের দিকে ঝুকে পড়ছে।
অন্যদিকে, পুরোনো বই আর অভিজ্ঞতা দিয়েই শিক্ষকরা ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন। দায়সাড়া ক্লাস কার্যক্রম চালানো সম্ভব হলেও বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বই ছাড়া ক্লাসের পড়া ও বাসার কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, পুরাতন বইতে ক্লাস চললেও তা কিছুই বুঝছে না শিক্ষার্থীরা।
এসব স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, এখনো তারা চাহিদা অনুযায়ী বই পাননি। এ কারণে শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেয়া সম্ভব হয়নি। কোথাও আবার কয়েক দফায় বিলম্বে বই দেয়া হলেও তা এখনো শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়নি।
রাজধানীর ধানমন্ডি নিউ মডেল বহুমুখী স্কুলের ৭ম শ্রেণির ছাত্র ইসমাইল জানায়, তাদের ক্লাসের কাউকে আনন্দপাঠ ও কৃষিশিক্ষা বই দেয়া হয়নি। ৬ষ্ঠ শ্রেণির কয়েকজন ছাত্র জানায়, তারা এখনো কৃষিশিক্ষা বই পায়নি। বই ছাড়াই তাদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে।
এ স্কুলের এক শিক্ষকের কাছে জানা যায়, বোর্ড থেকে নাকি এখনো সব বই আসেনি, তাই তাদের স্কুলের প্রায় সব ক্লাসের শিক্ষার্থী দুটি-তিনটি করে বই পায়নি।
ধানমন্ডি কামরুন্নিসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ইসমত আরা ইমাসহ কয়েকজন ছাত্রী জানায়, তাদের এখনো গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান বই দেয়া হয়নি। বই ছাড়াই তাদের ক্লাসে বসতে হচ্ছে।
স্কুল থেকে এখনো বই দেয়া না হলেও শিক্ষকরা প্রতিদিন ক্লাস নিচ্ছেন বলে জানায় ছাত্রীরা। ‘তাই আমরা নোট-গাইড কিনতে বাধ্য হয়েছি। এটিই এখন তাদের একমাত্র ভরসা’ বলেও মন্তব্য করে তারা।
স্কুলের একাধিক শিক্ষকের কাছ থেকে জানা যায়, তালিকা দিয়েও সময়মতো তারা সব বই পাচ্ছেন না। এ কারণে স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে সবকয়টি বই তুলে দেয়া সম্ভব হয়নি।
তারা বলেন, প্রতিনিয়ত বই বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান উপজেলা শিক্ষা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। বই আসলেই তাদের ডাকা হবে বলেই তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীর মিরপুর বাংলা স্কুলের প্রায় সব শিক্ষার্থীর জন্য পাঠ্যবই সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক বই ছাড়ায় চলছে ক্লাস কার্যক্রম।
৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তিন দফায় তারা বই পেলেও এখনো বিজ্ঞান, গণিত ও আনন্দপাঠ বই পায়নি। তাই বই ছাড়াই তাদের ক্লাস করতে হচ্ছে। অনেকে আবার বাধ্য হয়ে গাইড কিনে পড়ছে।
এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক বদরুজামান বলেন, বাববার আমরা তালিকা দিয়েও পর্যাপ্ত বই পাচ্ছি না। আসছে, আসবে বলে বই বিতরণকারীরা দিন পার করছেন।
তিনি বলেন, বইয়ের জন্য সময়তো আর থেমে থাকবে না। শিক্ষকদের সময়মতো সিলেবাস শেষ করতে হবে। তাই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া সম্ভব না হলেও ক্লাস চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
সরকার নোট-গাইড বন্ধ করতে চাইলেও এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীরা এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে দ্রুত এ সঙ্কট সমাধানের অনুরোধ জানান।
তবে বই সঙ্কটের বিষয়টি মানতে রাজি নয় পাঠ্যবই নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান এনসিটিবি। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান বই বিতরণ কর্মকর্তা মুসতাক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যবই পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তাই বই সঙ্কটের কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, বিতরণ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অব্যবস্থাপনার কারণে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে। রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন।
পাঠ্যপুস্তক কোথাও বেশি আর কোথাও কম থাকলে তা সমন্বয় করতে এনসিটিবি থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে মুসতাক আহমেদ বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে বই সঙ্কট থাকলে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সঙ্গে যোগযোগ করার নির্দেশনা রয়েছে।
এমএইচএম/জেডএ/পিআর