সরকারের হ্যাঁ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের না


প্রকাশিত: ০৬:৩৪ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের সামষ্টিক বিনিয়োগ সীমিত রাখতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। অথচ পুঁজিবাজার চাঙা করতে ব্যাংকিং খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর পক্ষে সরকার। ২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের পর থেকে আবারও চাঙা করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো পদক্ষেপে কাজ না হওয়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়িয়ে পুঁজিবাজারে মূলধন বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান নেয় সরকার।
 
তবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার প্রভাব বিনিয়োগকারীদের উপর বর্তায়। ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে অধিকহারে অংশগ্রহণ করলে তার প্রভাব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীসহ ব্যাংকখাতের আমানতকারীদের উপর পড়বে, যা সব আর্থিক খাতে আস্থাহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে ব্যাংকের সামষ্টিক বিনিয়োগ সীমিত থাকা দরকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহা ব্যাবস্থাপক আবু ফারাহ মোহাম্মদ নাসের স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে সরকারের সঙ্গে এই দ্বিমতের চিত্র উঠে আসে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক সংশোধন আইন ১৯৯১-এর ২৬ (ক) ও (থ) ধারা সংশোধনপূর্বক বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাতকে অব্যাহতি প্রদান প্রসঙ্গে একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।  
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাংকগুলোকের অর্থ মূলত জনগণের আমানত। এই টাকা কোনোভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ব্যাপকহারে বিনিয়োগ করা উচিত না। এটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় জনগণের স্বার্থই দেখে। পুঁজিবাজার কোনোভাবেই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শতভাগ নিরাপদ নয়। এজন্য জনগণের আমানত বা পুঁজি যেন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ খাতে না যায় তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখবে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ মতামত খুবই বাস্তবসম্মত।
 
তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যদি পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান থাকে তবুও আমরা ব্যাংকের আমানত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অবাধ সুযোগ দিতে পারি না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, ব্যাংকের সব আমানত ও দায় চুক্তিভিত্তিক হওয়াতে সুনির্দিষ্ট সময়ে ও পূর্ব নির্ধারিত হারে সুদ সমেত তা পরিশোধ করতে হয়। এমনকি লোকসান হলেও ব্যাংক এসব দায় সম্পূর্ণভাবে মেটাতে বাধ্য। এ কারণে ব্যাংকের বিনিয়োগ চুক্তিভিক্তিক হওয়া আবশ্যক। কিন্তু শেয়ারে যে অর্থ বিনিয়োগ করা হয় তার পরিশোধ সূচি ও মূল্যমান অনির্দিষ্ট ও বাজারভিত্তিক। তাই পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমিত করে এসব ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
 
কেননা ব্যাংকখাত যদি একই সময়ে কোম্পানিগুলোর ঋণদাতা ও শেয়ার ধারক হয় তাহলে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক ঝুঁকি প্রায় সম্পূর্ণটাই ব্যাংকের উপর বর্তায়। এজন্য পূর্ণ ব্যবসায়িক ঝুঁকিগ্রহণ ব্যাংকের আমানতকারীদের স্বার্থ অনুকূল নয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, এর আগে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে যে বিনিয়োগ করেছিল তাই রিকভারি করতে পারেনি। বাজার এখনো যে স্থিতিশীল হয়েছে সেটা বলা যাবে না। এই অবস্থায় আবারও ব্যাংকিং খাতের বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত হবে না। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পরামর্শ বাস্তবসম্মত ও সঠিক বলে মনে করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে কোনো একক ঋণগ্রহীতার (ব্যক্তি , প্রতিষ্ঠান, গ্রুপ) নিকট যেন ব্যাংকের সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়ে না পড়ে। সেজন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ২৬ (খ) ধারার বিধান সন্নিবেশিত হয়েছে। কোনো একক ব্যাংকিং বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সম্পদ কেন্দ্রীভূত খাকলে ব্যাংকের ঝুঁকি বাড়ে। কেননা বড় ঋণগ্রহীতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যাংকের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। একই যুক্তিতে কোনো একটি খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ কেন্দ্রীভূত করা কাম্য নয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকিং বিআরপিডি সার্কোলার অনুসারে সরকারি গ্যারেন্টির বিপরীতে ঋণ, বহুজাতিক ব্যাংকের বিপরীতে ঋণ ও বিদ্যুৎখাতে এই বিধান শিথিল করে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলোর শেয়ার ধারণের আইনি সীমা বৃদ্ধি করার যৌক্তিকতা লক্ষণীয় নয়। সরকার কোনো ঋণের পক্ষে গ্যারেন্টি প্রদান করলে বা সিন্ডিকেটের ঋণের ক্ষেত্রেও বড় ঋণ পাওয়া যায়। ফলে আইন সংশোধনের প্রয়োজন নেই।

এমএ/জেডএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।