পোস্ট অফিস সচল হলে বিস্তার ঘটবে ই-শপিং


প্রকাশিত: ০৭:২৩ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর রূপকথার গল্প নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবেই দেশেজুড়ে গড়ে উঠেছে বিশাল ই-কমার্স বাজার। বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ই-কমার্সের যে দিকটি সর্বাধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তা হলো অনলাইন শপিং। কেনাকাটা করতে ক্রেতাদের এখন আর যানজট ঠেলে দোকানে গিয়ে সময় অপচয় করতে হচ্ছে না। চাইলে মানসম্মত পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে হাতে হাতেই।
 
এ কারণে অনলাইনে কেনাকাটা এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের  অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রায়ও পরিবর্তন এসেছে। শ্রম এবং সময় বাঁচানো ও নিরাপত্তাজনিত কারণে অনলাইন কেনাকাটায় দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন ক্রেতারা। চাল-ডাল থেকে শুরু করে জামা-কাপড় ও ইলেকট্রনিক্স সবই মেলে অনলাইনে। এজন্য ওয়েবসাইট বা ফেসবুকে পেজের অভাব নেই।
 
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন মার্কেটিংয়ে যে কয়টি ফেসবুক পেজ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তার অধিকাংশেরই উদ্যোক্তা নারীরা। এমনই একজন উদ্যোক্তা হাবিবা সুলতানা। রঙ ডিব্বা (RONG DIBBA) নামের একটি ফেসবুক পেজ খুলে অনলাইন শপিং পরিচালনা করে এই নারী উদ্যোক্তা বেশ সফলতাও পেয়েছেন। সম্প্রতি এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক সাঈদ শিপন।
 
জাগো নিউজ : অনলাইন মার্কেটিংয়ে কিভাবে আসলেন?
 
হাবিবা সুলতানা : ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছোটবেলা থেকেই। তবে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ফ্যাশন শপ পরিচালনার মতো সময় ও সুযোগ ছিল না। অ্যাসোসিয়েশন অব চার্টার্ড সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (এসিসিএ) পড়ার সময় থেকেই ভাবতাম কিভাবে ফ্যাশন শপ না খুলেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেয়া যায়। ডিজিটালইজেশনের সুযোগ নিয়ে উন্নত বিশ্বে অনলাইন শপিং বেশ আগেই জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তবে বাংলাদেশে অনলাইন শপিং কার্যক্রম শুরু হয় মূলত ২০১১ সালের দিকে। প্রথমদিকে এটি তেমন সফলতা না পেলেও, ধীরে ধীরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আমিও ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেয়ার সুযোগ পেয়ে যাই। ২০১৪ সালে রঙ ডিব্বা ফেসবুক পেজ খুলে শুরু করি অনলাইন শপিং। সে সময় পেজটির নাম ছিল বাংলায়। প্রথমদিকে অনভিজ্ঞতার কারণে হ্যাকিংয়ের কবলে পড়ে পেজটি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর ২০১৫ সালে ইংরেজিতে রঙ ডিব্বা নাম দিয়ে আবারও একটি পেজ খুলে অনলাইন শপিং কার্যক্রম পরিচালন করছি।
 
জাগো নিউজ : অনলাইন শপিং ব্যবসা করতে গিয়ে কী ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করছেন?
 
হাবিবা সুলতানা : প্রথমদিকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারি দিতাম। তবে কয়েকটি চালানে কুরিয়ার কর্তৃপক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে। এরপর ডেলিভারির জন্য নিজস্ব লোকবল নিয়োগ করি। তাদের মাধ্যমে দ্রুত পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছি। ঢাকার ভেতরে ক্রয় আদেশ দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি দেয়া হয়।
 
জাগো নিউজ : অনলাইন শপিংকে আরও জনপ্রিয় করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?
 
হাবিবা সুলতানা : দেশের ভেতরে দূরের পণ্য ডেলিভারি দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকে কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানির সহায়তা নেন। সেক্ষেত্রে কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নিজস্ব বুথের মাধ্যমে পণ্য গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দিয়ে বিনিময় মূল্য গ্রহণ করে। এ সুযোগ জেলা শহরগুলোতে থাকলেও ইউনিয়ন বা থানা পর্যায়ে এখনো বিস্তার লাভ করেনি। এক্ষেত্রে সরকারি পোস্ট অফিসগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রতিটি ইউনিয়নেই সরকারি পোস্ট অফিস থাকলেও ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে তার অধিকাংশ অকেজো। ই-কমার্স চালু করলে একদিকে যেমন পোস্ট অফিসগুলো সচল হবে, অন্যদিকে আনলাইন মার্কেটও প্রসার ঘটবে।
 
জাগো নিউজ : আপনাদের ক্রয় আদেশ ও পণ্য ডেলিভারি পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন।
 
হাবিবা সুলতানা : অনলাইনে সাধারণত দুইভাবে বেচাকেনা হয়। কিছু কিছু ওয়েব পোর্টালে পণ্যের ছবি, দাম, যোগাযোগের নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য দেয়া থাকে। আগ্রহী ক্রেতারা বিজ্ঞাপন দেখে বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আর কিছু কিছু ওয়েবসাইটে নিজেরাই পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ করেন। এ ক্ষেত্রে ক্রেতার কাজ শুধু পণ্য পছন্দ করে অনলাইন অর্ডার দেয়া। পরবর্তী সময়ে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে মূল্য পরিশোধ করলে পণ্য পৌঁছে দেয়া হয়। তবে আমরা ক্রেতাদের হাতে পণ্য পৌঁছে দেয়ার পরেই টাকা নিই। সেক্ষেত্রে পণ্য হাতে পাওয়ার পর কোন ক্রেতার পছন্দ না হলে তা ফেরত দেয়ার সুযোগ আছে।
 
জাগো নিউজ : আপনাদের পণ্যের বিশেষত্ব কী?
 
হাবিবা সুলতানা : আমাদের সব পণ্যই মেয়েদের জন্য। আমরা পণ্যের মানের দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমাদের সব পণ্যই দেশীয় কাপড়ের। এরমধ্যে আছে বিলুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যবাহী রেশমের কাপড়। এই কাপড়ে রয়েছে রঙ ডিব্বার নিজস্ব বিশেষ কারুকাজ। এছাড়া রয়েছে হাতে রঙ করা বিভিন্ন পোশাক।
 
জাগো নিউজ : রঙ ডিব্বার প্রধান পণ্য কী?
 
Habiaহাবিবা সুলতানা : আমাদের প্রধান পণ্য হাতে রঙ করা (হ্যান্ড পেইন্ট) ক্যানভাস। অনেকে আছেন যারা এমন একটি পোশাক কিনতে চান যার সঙ্গে অন্য কারও পোশাকের কোন মিলন থাকবে না। এমন অভিজাত ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখেই রঙ ডিব্বা পোশাকের ডিজাইন করে। আমাদের একটি পোশাকের ডিজাইনের সঙ্গে অন্যের পোশকের কোনো মিল নেই। হাতে রঙ করা ক্যানভাস এছাড়াও আমাদের আছে ব্লক প্রিন্ট, ভ্যালভেট অ্যাম্বুস ওয়ার্ক, স্কিন ও ডিজিটাল প্রিন্ট, কারচুপি, এমব্রয়েডারি  জামা। রুচিসম্মত বাটিক থ্রি-পিস, স্পেশাল ব্লক শাড়ি, হ্যান্ডলুম কটন শাড়িসহ মেয়েদের প্রায় সব ধরনের পোশাক। আছে মেয়েদের সাজগোজের জন্য কানের দুল, গলার মালা, চুড়িসহ বিভিন্ন জুয়েলারি সামগ্রীও।
 
জাগো নিউজ : শপিং পেজটির নাম রঙ ডিব্বা দেয়ার কারণ কী?
 
হাবিবা সুলতানা : রঙ আমার একমাত্র মেয়ের নাম। তার নামের সঙ্গে মিল রেখে পেজের নাম রঙ ডিব্বা (RONG DIBBA) দিয়েছি। অবশ্য এই নামের সঙ্গে একটু মজার কাহিনীও আছে। মেয়ের স্কুলের অবিভাবকদের মধ্যে বয়সে আমি সবার চেয়ে ছোট। আপাদের (অন্য শিক্ষার্থীর অবিভাবক) সঙ্গে আমি একটু বেশিই দুষ্টামি করতাম। তাই সবাই আমাকে রঙের বাক্স বলে ডাকা শুরু করে। মূলত এ থেকেই মাথায় আসে পেজ এর নাম।
 
জাগো নিউজ : তিন বছরে অনলাইন শপিংয়ে কেমন সাড়া পেয়েছেন?
 
হাবিবা সুলতানা : অনলাইন শপিংয়ের মূলমন্ত্র হলো বিশ্বস্ততা। আর এই বিশ্বস্ততা বজায় রাখায় বর্তমানে রঙ ডিব্বার এক হাজারের ওপরে নিয়মিত গ্রাহক রয়েছে। আমাদের প্রধান পণ্য হ্যান্ড পেইন্ট। প্রথমদিকে হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে পথ চলাটা সহজ ছিল না। হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে যখন কাজ শুরু করি তখন কিছুই বুঝতাম না। কখনো হোঁচট খেয়েছি। তবে দমে যায়নি। আবারও নতুন উদ্যোমে পথ চলা শুরু করেছি।
 
জাগো নিউজ : অনলাইন শপিংয়ের নতুন উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ?
 
হাবিবা সুলতানা: অনলাইন শপিংয়ে সফলতার মূলমন্ত্র বিশ্বস্ততা বজায় রাখা। সেই সঙ্গে নিজস্ব মেধা দিয়ে নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্য নিয়ে আসা। অন্যের পণ্য নকল করা ঠিক না। নতুনদের মানসম্মত পণ্য নিয়ে কাজ করতে হবে এবং এর মাধ্যমে দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে দেশীয় পণ্য যতবেশি সম্ভব প্রমোট করতে হবে।
 
জাগো নিউজ : জাগো নিউজকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
 
হাবিবা সুলতানা : জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।
 
এমএএস/এমএমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।