নদীকেন্দ্রিক ইকো-ট্যুরিজমে ফিরবে পর্যটক


প্রকাশিত: ০৬:১০ এএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিশ্বের অনেক দেশে জলাভূমিকেন্দ্রিক পর্যটনশিল্প গড়ে তোলা হলেও অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশে এখনো এ বিষয়টি গুরুত্বহীন। দেশের অনেক নদী ও জলাভূমি অবৈধ দখল ও দূষণমুক্ত করে তাতে পর্যটনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে করে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের নৌ-ভ্রমণও হতে পারে পর্যটনশিল্প বিকাশের অন্যতম উপকরণ।

সঙ্গত কারণে পরিবেশবিদরা মনে করছেন প্রবাহমান সব নদী সংস্কার করে আধুনিক আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আর ঐতিহ্যের নৌকাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ না নিলে খুলবে না ইকো-ট্যুরিজমের দুয়ার। তবে এ উদ্যোগটি নেয়া হলে ফিরবে দেশি-বিদেশি পর্যটক।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক ও প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল লিমিটেড (পিএটিএল) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিদেশ থেকে বিশেষ করে ইউরোপের যেসব পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণে আসেন তাদের বেশির ভাগই নদী পথে সুন্দরবন ভ্রমণে যান। সে সময় যাত্রাপথেই নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোয় বিরতি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সরকারি পর্যায় থেকে বিশেষ ব্যবস্থা করা গেলে নদী তীরবর্তী লোকজ সংস্কৃতির মাধ্যমেই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।’

Vromon

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে নদীকেন্দ্রিক যে ইকো-ট্যুরিজম পরিচালিত হচ্ছে তা মূলত সুন্দরবনকেন্দ্রিক ফরেস্ট সাফারি ট্রিপ। পাশাপাশি অল্প পরিসরে ঢাকাকেন্দ্রিক নৌ ট্রিপ ও চট্টগ্রাম এবং খুলনায় কিছু অনিয়মিত রকেট স্টিমার ট্রিপ রয়েছে। তবে সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি। মূলত নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়া, পর্যটন জাহাজের স্বল্পতা ও নদী পথে নিরাপত্তার অভাবেই এটা সেভাবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। তবে রাজধানীর হাতিরঝিলে চালু করা স্বল্প দূরত্বের নৌ-ভ্রমণ বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।’

এ বিষয়ে পর্যটন ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এম মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘গোটা বিশ্বই এখন নদীকেন্দ্রিক ইকো-ট্যুরিজমকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। পর্যটনশিল্প বিকাশে এটি অন্যতম নিয়ামক। অথচ নদীমাতৃক দেশ হয়েও বাংলাদেশে বিকাশ হচ্ছে না সম্ভাবনাময় এই খাতটি। বরং অবৈধ দখল ও পরিকল্পনাহীনতায় নৌপথগুলো ছোট হয়ে আসছে। নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা সর্বোপরি দূষণের কারণেও আগ্রহ হারাচ্ছেন পর্যটকরা।’

খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী জিয়াউল কবির বলছেন, ‘জলাভূমিকেন্দ্রিক পর্যটনশিল্প গড়ে তোলা না গেলে দেশের নদী ও জলাভূমিগুলো অবৈধ দখল ও দূষণ থেকে রক্ষা পাবে না। এসব রক্ষা করা গেলে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের বাহন নৌকা ভ্রমণও শুরু হবে।’

Vromon

তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান নদীগুলো সংস্কার করে আনুষঙ্গিক অতিপ্রয়োজনীয় কিছু অবকাঠামো তৈরি করা গেলে শুধুমাত্র নদীকেন্দ্রিক ইকো-ট্যুরিজম দিয়েই মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। সেইসঙ্গে এ খাতে সৃষ্টি হবে বহু কর্মসংস্থানের সুযোগ।’

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে দেশে প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথ থাকলেও, বর্তমানে তা ছয় হাজার কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। ছোট-বড় মিলে বাংলাদেশে নদ-নদীর সংখ্যা প্রায় ৩০০। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এর অন্যতম। এসব নদীর পাড় ঘেঁষে আছে অসংখ্য গ্রাম, হাট-বাজার, কৃষি জমি ও লোকজ ঐতিহ্য, যা দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে সক্ষম।

আরএম/জেডএ/এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।