হোল্ডিং ট্যাক্স সমতায়নে বাণিজ্য
রাজধানীর হোল্ডিং ট্যাক্স সমতায়নে চলছে বাণিজ্য। পুনর্মূল্যায়নে ট্যাক্সের পরিমাণ কম ধরিয়ে দেয়ার কথা বলে বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে ট্যাক্স সংগ্রহকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। প্রথম অবস্থায় এমন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও এখন তা নেই বলে দাবি করেছে সিটি কর্পোরেশন।
এদিকে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ি ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন বাড়ির মালিকরা, যার প্রভাব পড়ছে ভাড়াটিয়াদের ওপর। ট্যাক্স সমতায়নের কারণে হোল্ডিং ট্যাক্সে আয় তিনগুণ বাড়বে বলে জানা গেছে। আগে যে অঞ্চলের হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হতো ২০০ কোটি সেখানে এখন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে রাজধানীর হোল্ডিং ট্যাক্স সমতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয় সিটি কর্পোরেশন। ২ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রম শুরু হয়। সংস্থাটি বলছে, ৩০ বছর আগের বাসা ভাড়ার ওপর ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বাড়ির মালিকরা অনেকগুণ ভাড়া বাড়িয়েছেন।
এছাড়া একই এলাকায় পাশাপাশি ভবন হলেও দুই বাড়ির মালিক ট্যাক্স দিচ্ছে দুই রকম। আবার সে সময় যে ভবন ছিল এক বা দোতলা, সেটা এখন ১০ থেকে ২০ তলা হয়েছে। এক্ষেত্রে একজন থেকে অন্যজনের পার্থক্য ১০ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি।
আবার কেউ কেউ বছরের পর বছর ধরে ট্যাক্স না দিয়েই কাটিয়ে যাচ্ছেন। আইনি জটিলতা ও ভোটের হিসাব-নিকাশে কোনো মেয়র বা প্রশাসক হোল্ডিং ট্যাক্স সমতায় আনার উদ্যোগ নেননি। ফলে বড় ধরনের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত ছিল সিটি কর্পোরেশন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাথমিক অবস্থায় দক্ষিণের অঞ্চল-১ ও ২ নির্ধারণ করা হয়েছে। উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে এ খাতে দুই থেকে তিনগুণ রাজস্ব আয় বাড়বে। অঞ্চল-১ এর আওতায় রয়েছে ১৫ থেকে ২১ নম্বর ওয়ার্ড। ধানমন্ডি, কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, মগবাজারসহ আশপাশের এলাকা এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
অঞ্চল-২ এ আছে, ১ থেকে ৬ ও ৮ থেকে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড। মতিঝিল, ফকিরাপুল, খিলগাঁও, বাসাবোসহ আশপাশের এলাকা এ অঞ্চলের মধ্যে। ২ অক্টোবর থেকে এ দুটি অঞ্চলের বাড়ির মালিকদের মধ্যে ফরম দিয়ে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য নেয়া প্রায় শেষ। চলতি মাসের শেষ দিকে কি হারে কর বাড়ানো হয়েছে সে বিষয়ে কর্পোরেশন থেকে চিঠি পাবেন বাড়ি মালিকরা ।
এক্ষেত্রে বাড়ির মালিকদের যদি কোনো আপত্তি থাকে তাহলে রিভিউ করতে পারবেন। তারপর দুই দফা শুনানি শেষে ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াতে আঞ্চলিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি আরও ২৯ জনকে নিয়োগ দিয়েছে ডিএসসিসি। একইভাবে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের দুটি অঞ্চলেও ট্যাক্স বাড়ানোর কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে অঞ্চল-১ (উত্তরা) ও অঞ্চল-৩ (গুলশান) এলাকায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এদিকে ট্যাক্স বাড়ানোর কার্যক্রমকে কাজে লাগিয়ে অর্থ-বাণিজ্যে নেমেছেন সিটি কর্পোরেশনের কর কর্মকর্তারা। তারা হোল্ডিং ট্যাক্স কমিয়ে নির্ধারণ করার আশ্বাসে বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এসব কর্মকর্তা বেশি ট্যাক্স ধরার হুমকি দিয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তি করতে বাড়ির মালিকদের বাধ্য করছেন।
তবে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, প্রথম দিকে কিছু অভিযোগ এলেও এখন আর কেউ এ ধরনের অভিযোগ করছেন না। এদিকে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ি ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন ভবন মালিকরা। যার ভার পড়ছে ভাড়াটিয়াদের ওপর।
ডিএসসিসির অঞ্চল-২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নঈম জাগো নিউজকে বলেন, কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। আমরা কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছি। তাছাড়া আমরা এলাকাভিত্তিক ট্যাক্স নির্ধারণ করে দিচ্ছি। সে ক্ষেত্রে কারও কম কারও বেশি ট্যাক্স করিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্র শ্রী বারোই বলেন, আমরা এলাকাভিত্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছি। এমনিতেই কেউ নিজ বাসায় বসবাস ঋণের টাকায় বাড়ি নির্মাণ করলে বিশেষ সুবিধা পাবেন। এছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে এ-সংক্রান্ত কমিটি ১৫ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। আপিল করলে ২৫ শতাংশ পর্যন্তও কমার সুযোগ রয়েছে। স্বচ্ছতার জন্য রিভিউ কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে। ফলে মানুষ কেন অতিরিক্ত টাকা দিতে যাবেন?
এদিকে ট্যাক্স নির্ধারণ না হতেই বাড়ির মালিকরা এখনই ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। খিলগাঁও-বাসাবোর হাজি রহমান আলীর বাড়ির এক ভাড়াটিয়া অভিযোগ করে বলেন, ট্যাক্স বাড়ানোর কথা বলে বাড়ির মালিক গত মাস থেকে দেড় হাজার টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।একই অভিযোগ উত্তরার বাসিন্দা রাজ্জাক উদ্দিনের। তিনিও অভিযোগ করেন, ট্যাক্স বাড়ার অজুহাত তুলে বাড়ির মালিক এ মাসে এক হাজার টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এদিকে ট্যাক্স সমতায়নের কারণে হোল্ডিং ট্যাক্সে আয় তিনগুণ বাড়বে বলে দাবি করেছে সংস্থা দুটি। আগে যে অঞ্চলের হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হতো ২০০ কোটি সেখানে এখন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এমএসএস/ওআর/জেআইএম