ই-গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠায় সরকারের নানামুখী উদ্যোগ


প্রকাশিত: ০৪:০১ এএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সমন্বিত কর্মপদ্ধতি পরিচালনার অংশ হিসেবে ই-গভর্নেন্স কার্যক্রম প্রতিষ্ঠায় নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের আওতায় শিক্ষকদের পেনশন ভাতা প্রদান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পিআরএল এবং পেনশনের আবেদন প্রক্রিয়ার ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে।

এর ফলে শিক্ষকরা ঘরে বসেই পিআরএল-এর জন্য আবেদন করতে পারবে এবং তা মুহূর্তেই অনলাইনে উপজেলা এবং জেলা শিক্ষা অফিস হয়ে শিক্ষা অধিদফতরে পৌঁছে যাবে। এরপর শিক্ষকরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। অন্যদিকে যাদের আবেদন অনুমোদিত হবে তারা হিসাবরক্ষণ অফিসে গিয়ে পেনশন তুলতে পারবেন। এ কার্যক্রমটি বর্তমানে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ই-গভর্নেন্স কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে এরকম নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এগিয়ে যাওয়ার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিগত ৩ বছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কার্যক্রম এবং আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। ই-গভর্নেন্স কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে এরকম নানা উদ্যোগ সম্পর্কে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

টিয়ার ফোর ডাটা সেন্টার : বর্তমানে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক সংলগ্ন স্থানে সাড়ে ৭ একর ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষে ভবন নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। বর্তমানে এ ডাটা সেন্টারটির ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের তথ্য ও ডাটা সুরক্ষিত থাকবে এই ডাটা সেন্টারে।

ডিসি ও ডিআরএস : ইনফো-সরকার প্রকল্প থেকে যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে কনটেইনার ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকিপ্রবণ এলাকার বাইরে যশোরে একটি ডিজাস্টার রিকভারি সাইট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্প পিডাব্লিউসির মাধ্যমে সাম্ভব্যতা যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছে।

ম্যাসেঞ্জার অ্যাপ ‘আলাপন’ : সম্পূর্ণ  বিনামূল্যে কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা ও ফাইল আদান প্রদানের জন্য চালু হয়েছে ম্যাসেঞ্জার অ্যাপ ‘আলাপন’। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তাদের কাজে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে চ্যাটিং, অনলাইন কল, ভিডিও কল গ্রুপ ম্যাসেজিং ফাইল আদান প্রদান সহজ করার জন্য এ অ্যাপটি তৈরি করে।

বাংলাদেশ ই-গভর্মেন্ট ইআরপি : সরকারি কার্যক্রমে সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক ই-গভর্মেন্ট সিস্টেম চালু করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ই গভর্মেন্ট ইআরপি নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি ইতোমধ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। প্রথমে আইসিটি ও প্ল্যানিক ডিভিশনসহ এর সকল অঙ্গ সংস্থাগুলোকে এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব সরকারি অফিসে বাস্তবায়ন করা হবে। ফলে ই-গভর্মেন্ট বাস্তবায়নে দেশি আইসিটি শিল্পের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

জাতীয় পরিচয় পত্রে ডিজিটাল স্বাক্ষর : নির্বাচন কমিশনের জাতীয়পত্রকে স্মার্টকার্ড হিসেবে রুপান্তর করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজ (সিসিএ) এসব স্মার্টকার্ডে ডিজিটাল স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ : ইন্টারনেটে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে ডট বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ শীর্ষক একটি প্রকল্প যা ইতোমধ্যেই একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বাংলা ভাষা সহজীকরণের জন্য একটি টুলস তৈরি করা হবে। বাংলা ভাষার জন্য এরকম ১৬টি টুলস এর উন্নয়ন করা হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলা ভাষা ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে। বাংলা কপার্স, ফ্রন্ট, সিএলডিআর, আইপিএ ফন্ট ইত্যাদি প্রমিতকরণে বিশ্বমানের বাংলা কম্পিউটিং চালু হবে।

সরকারি সার্টিফাইং অথরিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ : সরকারি সার্টিফাইং অথরিটি (সিএ) কর্তৃক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানসমূহকে ডিজিটাল সার্টিফিকেট ইস্যু করার লক্ষ্যে সার্টিকিকেশন প্রাকটিস সিস্টেম, চূড়ান্ত নকশা ডাটা সেন্টার, ডিআরএস তৈরি করা হয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে অবকাঠামো প্রস্তুত করে সার্টিফিকেট ইস্যু করা শুরু হবে।

ই-গর্ভমেন্ট মাস্টার প্ল্যান : ই-গভর্মেন্ট বাস্তবায়নের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এজন্য তথ্য প্রযুক্তিতে অগ্রগামী দেশ কোরিয়ার সহযোগিতায় ফরমেশন অব দ্য ই-গভর্মেন্ট মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প : মামলা জটের নিরসন ও জনদুর্ভোগ কমাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বিচার বিভাগ যৌথভাবে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজেশনে সহায়তা প্রদান শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মামলা জটের নিরসন হবে ও জনগণের দুর্ভোগ কমবে।

ন্যাশনাল হেল্প ডেক্স : জাতীয় পর্যায়ে সর্বস্তরের জনগণের জন্য মোবাইল ভিত্তিক (৯৯৯) হেল্পডেস্ক কর্মসূচি পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশের যেকোন নাগরিক বিনামূল্যে এ কল সেন্টারে ফোন করে হাসপাতাল, পুলিশ, ফায়ার স্টেশন নম্বর, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্যসহ জীবন ও জীবিকার তথ্য জানতে পারবেন। পরীক্ষামূলক বাস্তবায়নের পর ২০১৭ সালের মধ্যে সকল ক্যাটাগরিতে তথ্য সেবা প্রদান সম্ভব হবে।

এসব প্রকল্পের বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের অভীষ্ট লক্ষ্য হলো একটি জবাবদিহিতামূলক সরকারি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, ডেটার সুরক্ষা বজায় রাখা, সরকারি কর্মকাণ্ড ও ফাইল ব্যবস্থাপনা দ্রুততর ও যুগোপযোগী করা এবং সর্বোপরি ন্যাশনাল হেল্পডেক্স চালু করাসহ আরো নানা উদ্যোগ ও কার্যক্রমের মাধ্যমে জনসাধারণকে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পৌঁছে দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে একটি তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

তিনি আরো বলেন, এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টার সার্বিক নির্দেশনায় অনেকগুলো প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং নতুন নতুন উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে। নিরলস কর্মপ্রচেষ্টা ও একনিষ্ট কর্মীর ভূমিকায় থেকে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী তা তদারকি করছেন। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্য দৃশ্যমান হচ্ছে।

এএস/এআরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।