ঐতিহাসিক ও নান্দনিক নিদর্শনে পূর্ণতা পাচ্ছে আদালত জাদুঘর


প্রকাশিত: ০৯:৫৯ এএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

বিচারাঙ্গনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং সম্মান ধরে রাখতে সুপ্রিম কোর্টের নতুন ভবনে স্থাপন করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘর। ২০১৪ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন জাদুঘরটি উদ্বোধন করেছিলেন। অবশ্য তখন এতোটা সৌন্দর্যমণ্ডিত ছিল না জাদুঘরটি। কালের পরিক্রমায় বাড়ছে এর আকর্ষণ।

জাদুঘরে রাখা লোহা ও স্টিলের তৈরি জিনিসের অনেকটিতে মরিচা ধরেছে। তবে চেয়ারগুলো পুরনো হলেও স্থায়িত্ব নষ্ট হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক পুরনো বিচার বিভাগীয় জাদুঘরের অনুকরণে বাংলাদেশে বিচার বিভাগের প্রথম জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়।

Suprime
উদ্বোধনের সময় বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেছিলেন, জাদুঘরটি বিচার বিভাগের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে এ সংশ্লিষ্ট কোনো ঐতিহ্য কারো কাছে থাকলে তা জানানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন তিনি।

সর্বোচ্চ আদালতের নিজস্ব অর্থায়ন এবং ব্যবস্থাপনায় সুপ্রিমকোর্ট ক্যাম্পাসে স্থাপিত এই জাদুঘরের নামকরণ করা হয়েছে ‘আদালত’ জাদুঘর। তাতে স্থান পেয়েছে বিচারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিবেদন, বিচারপতিদের ব্যবহৃত বিশেষ পদমর্যাদাসূচক টুপি (জাজেস রোবস) ও গাউন, সাক্ষী ও আসামিদের কাঠগড়া, ব্রিটিশ আমলের ডাণ্ডাবেড়ি, সিলমোহরসহ নানা সামগ্রী। মূল্যবান সাধারণ চেয়ার, আরাম কেদারা, টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, দেয়াল ঘড়ি, টাইপ রাইটার ও ঘাস কাটা যন্ত্র।

Suprime
বিচার বিভাগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং বিচারকাজ সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতেই এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিচার সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু পুরনো নথি ও ব্যবহৃত সামগ্রী সংগ্রহ করেছেন সুপ্রিমকোর্ট।

জাদুঘরে ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির ছবি থেকে শুরু করে সর্বশেষ ২০১৫ সালে অবসরে যাওয়া বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির ছবিও টাঙ্গানো রয়েছে।

যাদুঘরে ঢোকার পর প্রথমে দেখা মিলবে নয়ন জুড়ানো জিনিষ-পত্র। এসবের কোনটা চকচক করা গ্লাসের ভিতরে, নতুবা নানা ধরনের কাঠের তৈরি শোপিস দিয়ে সাজানো। সঙ্গে সেটে দেওয়া হয়েছে কোন আদালত থেকে সংগ্রহ করা এবং কত সালে ব্যবহার করা হয়েছিল সেই তথ্য।

Suprime
শুধু আপন ইতিহাস নয়, আপনার মনটাকেও পূর্ণতা এনে দেবে এই যাদুঘর। পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্র ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে এই ধরনের আদালত জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় বিচার বিভাগের ভূমিকা এবং ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতে আদালত জাদুঘর হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট জাদুঘর উদ্বোধন করা হয় ২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন এটির উদ্বোধন করেন।

বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘরের বিষয়ে তত্ত্বাবধানের জন্য রয়েছে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি। যার চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা।

Suprime
শুরুরদিকে উদ্বোধনের আগে এ-সংক্রান্ত গঠিত কমিটি সাবেক প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি ও সিনিয়র আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকবৃন্দ এবং ৬৪ জেলার জেলা ও দায়রা জজদের কাছে চিঠি পাঠায়। চিঠিতে বিচার বিভাগ সম্পর্কিত ঐতিহাসিকভাবে মূল্যবান, গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক কোনো সামগ্রী ও তথ্যাদি কারো কাছে থাকলে তা সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনের কাছে জমা দিতে বলা হয়। তবে কেউই এরকম ঐতিহাসিক কোনো কিছু এখনো পর্যন্ত জমা দেননি।

সাবেক প্রধান বিচারপতিদের ছবির নিচে দায়িত্ব পালনের সময়কালও উল্লেখ রয়েছে। যা আগে সুপ্রিমকোর্টের জাজেজ কক্ষে টানানো ছিল। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির ছবি একসঙ্গে অন্য কোথাও পাওয়ার ঘটনা বিরল।

জাদুঘরটির সৌন্দর্য ও মূল্যবান ঐতিহাসিক নিদর্শন নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। প্রতিদিনই এখানে ভিড় করছেন আইনজীবী, সুপ্রিমকোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও আদালতে আসা বিচার প্রার্থীরা। এছাড়াও সুপ্রিমকোর্টে আদালত যাদুঘর দেখার জন্য অনেক উৎসাহি মানুষও আসছেন।

Suprime
জাদুঘরের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি রেজিস্ট্রার ফারজানা ইয়াসমিন জাগো নিউজকে বলেন, এখন যাদুঘরে যা আছে আমরা এটাকে আরও সমৃদ্ধ করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশাকরি দর্শনার্থীরা এখানে এসে বিচার বিভাগের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন। তিনি আরও জানান, সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘরকে সম্প্রতি ঢেলে সাজানো হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জাদুঘরে রয়েছে মাহাত্মা গান্ধীর ছবি, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংরক্ষিত একটি বই, পূর্ব পাকিস্তান আমলের বাংলা টাইপ মেশিন, ইংরেজি টাইপ মেশিন, পুরাতন গেস্টেটনার মেশিন, পূর্ব পাকিস্তান সময়ের প্রধান বিচারপতির ব্যবহারের ব্যান্ড, গাউন ও উইগ, হাইকোর্টে ব্যবহার করা দেয়াল ঘড়ি, চেয়ার, বিচারপতিদের ব্যবহার করা ড্রেসিং টেবিল, দোয়াত-কলম ও নিব, এজলাসে ব্যবহ্যার করা চেয়ার- টেবিল, চেম্বারে ব্যবহ্যার করা চেয়ার, ইজি চেয়ার ও প্রথম হাতে লেখা বাংলাদেশের সংবিধান। এছাড়াও রয়েছে কিছু ফরম, ওকালতনামা, ক্যালেন্ডার এবং তালপাতায় সংস্কৃত ভাষায় লিখিত রায়।

এফএইচ/এমএমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।