পূর্বাচলেই স্বপ্নের আইকনিক টাওয়ার
উচ্চতার দিক থেকে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনটি হচ্ছে দুবাইয়ের ১৬৫ তলার বুর্জ আল খলিফা। আকাশ চিড়ে বের হওয়া এমন টাওয়ারের নাম এখন বাংলাদেশের সঙ্গেও লেখা থাকবে। অবশেষে সব জটিলতা কাটিয়ে পূর্বাচলেই আইকনিক নামের ১৪২ তলার টাওয়ার নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার, যা হবে এশিয়ার সর্বোচ্চ টাওয়ার।
আজ সোমবার (২৩ জানুয়ারি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, রাজউক, কেপিসি গ্রুপ, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) বিভাগের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল। সভা সূত্র জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বৈঠক শেষে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাগো নিউজকে বলেন, স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মূল স্টেডিয়াম এবং আইকনিক টাওয়ার ও কনভেনশন সেন্টার বাস্তবায়ন বিষয়ে তারা আজ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছেন। পূর্বাচলেই এসব অবকাঠামো বাস্তবায়নে তারা সম্মত হয়েছেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এসব বাস্তবায়নের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে।
গত বছরের ২ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে এ প্রকল্প সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি আমার একটি স্বপ্নের কথা বলতে চাই। আমার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক ও জনবান্ধব একটি প্রকল্প সম্পর্কে সবাইকে বলব। আপনারা জানেন, পূর্বাচল ও এর নিকটস্থ এলাকা নিয়ে একটি স্বতন্ত্র মহানগর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ মহানগরে পিপিপির আদলে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। এর মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার, একটি আধুনিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স এবং ১৪২ তলা আইকনিক টাওয়ার স্থাপন করা হবে।’
স্বপ্ন বাস্তবায়নে আইকনিক টাওয়ার নির্মাণসহ পরিপূর্ণ উপশহর তৈরিতে দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কালী প্রদীপ চৌধুরীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর একাধিক বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ১২ জুন এ টাওয়ার নির্মাণ বিষয়ে কেপিসির চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
সূত্র জানায়, প্রথমে কেরানীগঞ্জে ভবনটি নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু ভূমির অবস্থা বিচারে তা বাতিল করা হয়। অতপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেপিসির পক্ষে অর্থমন্ত্রী ১০০ একর জায়গার ওপর মূল ভবনসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাগুলো নির্মাণে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় নভেম্বরে পূর্বাচলের সিবিডি অংশে ওই জায়গা দিতে রাজি হয়। কিন্তু দামের বিষয়ে বনিবনা না হলে পিছু হটে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
ফলে তখন পূর্বাচলে নয়, ১৪২ তলা স্বপ্নের আইকনিক টাওয়ার নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল জলসিঁড়িতে। অবশ্য সে জায়গাটি পূর্বাচল আবাসিক শহরের কাছাকাছিই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্বাচল এলাকায় জমির মাত্রাতিরিক্ত দাম, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, এছাড়া টাওয়ারের উচ্চতা নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি এবং আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সম্পন্ন না হওয়ায় আইকন টাওয়ারের নির্মাণ চু্ক্তি তখন সম্ভব হয়নি। তবে এসব জটিলতা কাটিয়ে পুনরায় পূর্বাচলে টাওয়ারসহ অনুষঙ্গিক অবকাঠামো গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বৈঠক সূত্র জানায়, স্টেডিয়াম তৈরির জন্য ৩৭ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকার শুধু আইকনিক টাওয়ার নির্মাণের জন্য ৪০ একর ভূমি কেপিসিকে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু কেপিসি বলছে, তারা আইকনিক টাওয়ারের পাশাপাশি কনভেনশন সেন্টারটিও নির্মাণ করবে। এজন্য তারা মোট ৬০ একরের কিছু বেশি ভূমি চাচ্ছে। আজকের (২৩ জানুয়ারি) সভায় কেপিসির প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও অসুস্থতার কারণে কেপিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান কালী প্রদীপ চৌধুরী না আসায় বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। তবে বিষয়টি দ্রুত সুরাহা হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে অান্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মধ্যেই এ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হবে। যদিও ২০১৭ সালের জানুয়ারি শেষ হতে চললেও এখনো কোনো ধরনের বাস্তবমুখী কাজ শুরুই হয়নি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি হবে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স, যা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে নির্মিত হবে।
আনুমানিক ১০০ একর জমির ওপর ১৪২ তলা ভবনের মূল আকর্ষণ হবে কনভেনশন সেন্টার ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স স্টেডিয়াম। কনভেনশন সেন্টারের ধারণক্ষমতা হবে পাঁচ হাজার লোকের। আর স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মূল স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা হবে ৫০ হাজার লোকের। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পূর্বাচল নতুন শহর এবং ওই অঞ্চলের আশপাশের জেলাগুলোতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, এ টাওয়ার নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। তবে এ ব্যয় আরও বাড়বে বলে মনে করে রাজউক। আইকনিক টাওয়ারের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যে, টাওয়ারটিতে তাকালে মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পড়বে। এটি নির্মিত হলে দুদিক দিয়ে ৭১ লেখাটি ফুটে উঠবে।
এমইউএইচ/জেডএ/জেআইএম