নিরাপত্তা পাওয়ায় গভীর রাতেও সমুদ্র দর্শন
অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মত পৃথিবীর বৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারও দিন এবং রাতে ভিন্ন সৌন্দর্য ধারণ করে। দিনে এক রুপ থাকলেও রাতে ধারণ করে আরেক রুপ। জোসনামাখা রাতে সমুদ্রের উতাল হাওয়া মনকে উদাস করে দেয়। কখনওবা রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারের বুক চিরে উত্তাল টেউ মনে শিহরণ তোলে।
তবে এতদিন নিরাপত্তার কারণে রাতের বেলায় কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করা প্রায় অসম্ভব হলেও ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছে। এখন পর্যটকরা মধ্যরাত পর্যন্ত সৈকতে অবস্থান করে রাতের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। তবে অবকাঠামো ও আনন্দ বিনোদনের জন্য এখনও কক্সবাজার অনেক পর্যটকদের কাছে পরিপূর্ণভাবে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেনি।
জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে সর্বমোট ৬৯৮ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছেন। এর মধ্যে কক্সবাজারে দায়িত্বরত আছেন ১৪০ জন। এছাড়াও ঢাকা, সিলেট, মৌলভিবাজার, কুয়াকাটা, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, খুলনা, বগুড়া, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে পর্যটক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশ ২৪ ঘণ্টা টহল দিচ্ছে। এর মধ্যে এন্টি ইভটিজিং টিম সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত টহল দিচ্ছে। এছাড়াও নিরাপত্তার জন্য তিন শিফটে ৯ জন করে পুলিশ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দায়িত্ব পালন করে। আর আছে কুইক রেস্পন্স টিম। এই টিমের ৯ জন সদস্য দুই ভাগে টহল দেয়।
গত সপ্তাহে ফ্রান্সের নাগরিক জেসিকার (২৭) হারানো পাসপোর্ট উদ্ধার করে তা ফিরিয়ে দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ। এছাড়াও সেখানকার প্রতারক ফটোগ্রাফার ও মোবাইল চুরের বিরদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।
ময়মনসিংহের কোতোয়ালী থানার চৌরঙ্গী মোড়ের বাসিন্দা তানভির আহম্মদ তম্ময় (২০) জাগো নিউজকে বলেন, গত সোমবার বন্ধুবেশে একজন তার মোবাইল চুরি করে পালিয়ে যায়। পরে সেখানকার সিনিয়র এএসপি রায়হান কাজেমীকে জানালে তিনি অভিযান চালিয়ে মোবাইলটি উদ্ধার করেন।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডার অধিবাসী মনির তালুকদার মিলিন সম্প্রতি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘুরে এসে জাগো নিউজকে জানান, দুই বছর আগে সৈকতে রাতে কাউকে অবস্থান করতে দেওয়া হত না। কয়েকটি জায়গায় কিছু লোক থাকলেও এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন সেখানে মধ্যরাত পর্যন্ত অবস্থান করা যায়।
জানা গেছে, গত ২ বছরে ১২০ জন হারিয়ে যাওয়া পর্যটক শিশু উদ্ধার ও পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এছাড়াও পর্যটকদের নগদ ১ লাখ ৯৪ হাজার টাকা , ২২টি মোবাইল ফোন, ১টি ল্যাপটপ, স্বর্ণলংকার, হিরার আংটিসহ পর্যটকদের হারানো সম্পদ ফেরত দিয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের তথ্যমতে, ২০১৫ সালে হারিয়ে যাওয়া ৫৭ জন পর্যটক শিশু উদ্ধার, নগদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ১টি ল্যাপটপ, টি হারানো মোবাইল পর্যটকের কাছে ফেরত দেয় ট্যুরিস্ট পুলিশ। এছাড়া ২৮ জন ছিনতাইকারি, ৫ জন ইভটিজিংকারি, ১৪২ জন উপদ্রপকারী, ১ জন মামলার আসামি আটক করা হয়। উচ্ছেদ করা হয় ২০টি পঁচা মাছের দোকান, ১৫টি অবৈধ কিটকট, ৪১টি অবৈধ দোকান। অনৈতিক পেশার দায়ে গ্রেফতার করা হয় ২১ জনকে। উদ্ধার করা হয় ৩ জন ভিকটিমকে।
২০১৬ সালে হারানো ৬৩ জন পর্যটক শিশু উদ্ধার, নগদ ৬৪ হাজার টাকা, ১৬টি মোবাইল সেট, ৭টি সীম কার্ড, ১টি স্বর্ণের হাতের রিং, ১টি লকেট, ১টি চেইন, ২টি আংটি, ২টি নাকফুল, ২টি কানের দুল, ২টি হিরার আংটি উদ্ধারের পর পর্যটকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ ছাড়া ৪৩ জন পুরুষ ছিনতাইকারী, ৫ জন মহিলা ছিনতাইকারী, ১৫ জন ইভটিজিংকারী, ২৭ জন উপদ্রপকারী, ১ জন অপহরণকারী আটক করা হয়েছে। উচ্ছেদ করা হয়েছে ৭ টি অবৈধ কিটকট, ১৬ টি অবৈধ দোকান, ৩৪টি পঁচা মাছের দোকান। উদ্ধার করা হয় ৯ টি গাঁজা পুরিয়া, ৭ বোতল বিয়ার, ২৯ পিচ ইয়াবা, ৫ টি ছোড়া , ৯ টি মোটরসাইকেল ও গাড়ী ও ৮ জন ভিকটিমকে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আটক করা হয়েছে ১১জনকে।
সেখানকার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে যে হারে পর্যটক বাড়ছে সেই অনুপাতে পুলিশ নেই। কনস্টেবলদের সংখ্যা পর্যটকদের তুলনায় খুবই কম।
কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র এএসপি রায়হান কাজেমী জাগো নিউজকে টেলিফোনে জানান, সমুদ্র সৈকতের কাছে উন্নত মানের কোনো হাসপাতাল নেই। ডুবে যাওয়া লোকদের ২ কি.মি দূরে সদর হাসপাতালে নিতে হয়। এছাড়া সরকারি উদ্যোগে কোন লাইফগার্ড সার্ভিস নাই। এসব থাকলে সেবা দিতে আরো সুবিধা হত।
তিনি আরো জানান, কক্সবাজারে বিদেশীদের জন্য এক্সক্লুসিভ জোন, শিশু পার্ক, এমিউজমেন্ট পার্ক, সিনেপ্লেক্স, নাইট ক্লাব ইত্যাদি সুবিধাদি থাকলে দেশী-বিদেশি পর্যটক বাড়তো। সরকারের আয় বাড়তো। অনেক কর্মসংস্থান হত।
এইচএস/এআরএস/এমএস