বদলে গেছে ফুটপাতের চেহারা


প্রকাশিত: ০৩:০০ এএম, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

রাজধানীর চিরচেনা  ফুটপাতের চেহারা বদলে গেছে। থেমেছে হকারদের দৌরাত্ম্য। চলাচলের পথে নেই ভাসমান দোকানপাট।  

হকার উচ্ছেদের কারণে সুন্দর পরিবেশ ফিরেছে রাস্তাঘাটে। স্বাচ্ছন্দ্যে হেঁটে যাতায়াতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না কেউ। এমন অবস্থা ফিরেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সাঈদ খোকনের প্রচেষ্টায়। ফুটপাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পেরে বেশ খুশি নগরবাসীও।
 
নগর কর্তৃপক্ষের কাছে ফুটপাত যেন বিষফোড়া হয়ে দাঁড়ায়।সিটি কর্পোরেশনের একের পর এক উচ্ছেদ অভিযানেও কোনো পরিবর্তন আসছিল না।

footpath

উচ্ছেদ করতে গিয়ে হকার ও লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজদের হামলার শিকারও হয়েছেন নগর ভবনের কর্মকর্তারা। আক্রান্ত হয়েছে নগর ভবনও। বেসামাল হকারদের লাগাম টেনে ধরতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে হকার নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক, মতবিনিময়সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়।

পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের জন্য হকার তালিকা, হলিডে (ছুটির দিন) মার্কেট, নির্দিষ্ট সময়ে ফুটপাতে হকার বসতে দেয়াসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট না হকাররা। তারা ফুটপাত দখল শেষে নগরীর রাস্তাও দখল করতে থাকেন। পরে বেসামাল হকারদের ফুটপাত ছাড়াতে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় সিটি কর্পোরেশন।

footpath
 
নগরীর ফুটপাত হকারমুক্ত ও হলিডে মার্কেট চালুর লক্ষে গত ১১ জানুয়ারি হকার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মেয়র সাঈদ খোকন। এ সময় হকাররা তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরলেও ফুটপাত ছাড়ার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। পরে মেয়র সরকারি কর্মদিবসে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ফুটপাত ও সড়কে কোনো হকার বসতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি হলিডে মার্কেটে হকারদের বসতে অনুরোধ করেন।
 
ঘোষণা অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারি থেকে গুলিস্তান, জিপিও, পল্টন, মতিঝিল, দৈনিক বাংলাসহ আশপাশ এলাকায় হকার উচ্ছেদ শুরু করে সিটি কর্পোরেশন। এ সময় সড়ক ও ফুটপাতে কোনো হকার বসতে দেয়া হয়নি।  বুধবার ছিল ফুটপাতে হকার উচ্ছেদের চতুর্থ দিন। এই চারদিন হকারদের ফুটপাতে বসতেই দেয়া হয়নি। উচ্ছেদকালে পুরো এলাকা ফাঁকা করে দেয়া হয়েছে। এ এলাকার ফুটপাতগুলো এখন মুক্ত। মেয়রের অনড় সিদ্ধান্তে বদলে গেছে দক্ষিণ সিটির প্রায় সব ফুটপাতের চিত্র।
 
এর আগেও নগরীর সড়ক ও ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে একাধিক অভিযান চালিয়েছে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু অভিযান শেষ হতে না হতেই ফুটপাত আবার হকারদের দখলে চলে যায়।বছরের পর বছর ধরেই এভাবে চলে আসছে।

footpath

এ থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে দৃঢ় উদ্যোগ নেন দক্ষিণ সিটির মেয়র। কিন্তু মেয়রের এ উদ্যোগ কতো দিন থাকবে তা নিয়ে চিন্তিত নগরবাসী।
 
মেয়র সাঈদ খোকনও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা জানান জাগো নিউজকে। তিনি বলেন, ‘আমি জনগণের পথ জনগণকেই ফিরিয়ে দিয়েছি। জনগণের সম্পদ কারও দখল করার অধিকার নেই। যতদিন আছি ততদিন আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। হকার হোক আর যেই হোক রাজপথ দখল করা যাবে না। আমাদের এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।’
 
হাইকোর্টের আদেশ, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও নগরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র সাঈদ খোকন ফুটপাত দখলমুক্ত করতে এ সিদ্ধান্ত নেন। মেয়রের সিদ্ধান্তে খুশি নগরবাসী। উচ্ছেদের ফলে পুরো এলাকা এখন যানজটমুক্ত। অফিস কিংবা গন্তব্যে পৌঁছাতে এখন আর কেউ রিকশা কিংবা যানবাহনের দারস্থ হচ্ছেন না। হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছেন অধিকাংশ পথচারী।
 
বুধবার সকাল থেকে গুলিস্তান, পল্টন, জিপিও, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল ও আশপাশ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কজুড়ে তেমন কোনো যানজট নেই। ফুটপাত একেবারেই ফাঁকা। কোথাও কোনো জটলা নেই। পথচারীরা স্বাচ্ছন্দ্যেই হেঁটে চলাচল করছেন।সবার মুখে হাসি। ফাঁকা হয়ে যাওয়া ফুটপাত যেন সবার কাছে অপরিচিত।

footpath
 
মতিঝিলের একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মোরশেদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, চেষ্টা থাকলে কি না সম্ভব? যেটা আমাদের মেয়র সাঈদ খোকন দেখাচ্ছেন। তাকে দুই কোটি নগরবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। হাঁটতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। রিকশা ভাড়া লাগছে না। বাসা থেকে হেঁটেই অফিসে এসেছি। অনেক ভালো লেগেছে। আগামীতেও এমন চিত্র দেখতে চাই। মেয়রের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে ঢাকার চেহারা বদলে যাবে।
 
তবে ফুটপাতে কোনো হকার দেখা না গেলেও কোথাও কোথাও তাদের রেখে যাওয়া চৌকি, মাচা ও বাক্স দেখা গেছে। মালামাল রাখার চৌকিগুলো ফুটপাতের লোহার গ্রিলের সঙ্গে শিকল দিয়ে তালা মেরে রেখেছে হকাররা। সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ তৎপরতা কোনোভাবে থেমে গেলে সেই আগের মতো আবার দখলের সম্ভাবনা রয়েছে।
 
এ বিষয়ে ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুন সরদার জাগো নিউজকে বলেন, হকারদের একমাত্র ঠিকানা হলিডে মার্কেট। ফুটপাতে কোনোভাবেই তাদের বসতে দেয়া হবে না। ফুটপাতে রেখে যাওয়া অধিকাংশ চৌকি ভেঙে দেয়া হয়েছে। আমাদের অভিযান চলছে, চলবে।
 
এমএসএস/ওআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।