পাঁচ বছরে দুধ উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণ


প্রকাশিত: ০২:০৩ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

২০০৮ সালে দেশে গড়ে ২ দশমিক ৮২ লিটার দুধ উৎপাদন হতো। পাঁচ বছরের ব্যবধানে গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে গড়ে ১২ দশমিক ১৫ লিটারে। ফলে দেশে মোট দুধ উৎপাদন দাঁড়িয়েছে বছরে ৬০ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টনে। এ হিসাবে পাঁচ বছরে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।
 
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন (আইএমই) বিভাগের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

Cow

কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং ভ্রমণ স্থানান্তর প্রযুক্তি প্রকল্পের (ফেজ-২) আওতায় উন্নত গাভী উৎপাদনের ফলে দুধ উৎপাদন বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ লাখ ৮৪ হাজার টন থেকে মাংসের উৎপাদন বেড়ে ৫৪ লাখ ২০ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে।এ হিসাবে পাঁচ বছরে মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে পাঁচগুণ।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, দেশি গরুর মান বৃদ্ধির মাধ্যমে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ৪৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ২০০৯ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদ নির্ধারিত থাকলেও ২০১৪ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। বাস্তবায়ন শেষে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ৫০ কোটি টাকা।

প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪০ লাখ ডোজ সিমেন উৎপাদন করা হয়। দেশব্যাপী ৯৪২টি ইউনিয়নে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করে শঙ্কর বাছুর উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সম্প্রতি প্রকল্পটির প্রভাব মূল্যায়নে সমীক্ষা চালায় আইএমই বিভাগ।

সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প এলাকায় গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করিয়েছে ৯৯ দশমিক ১ শতাংশ খামারি। ফলে ৫৪ দশমিক ৩ শতাংশ গাভীর সঠিকভাবে গর্ভধারণ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ২০১৩-১৪ অর্থবছর দেশে ২৯ লাখ ৭৭ হাজার গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করানো হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে শঙ্কর বাছুর উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৮২ হাজারে।

farmer

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় জাগো নিউজকে বলেন, দুধ উৎপাদন বাড়াতে ভালো জাতের গাভী দরকার। এজন্য শঙ্কর জাতের গরুর মাধ্যমে জাত উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। এতে সফলতাও এসেছে।  এ প্রকল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।

পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প শুরুর আগে ২০০৮-০৯ অর্ভবছরে দেশে সিমেন উৎপাদন ছিল ২৫ লাখ ১০ হাজার ডোজ। প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ২০১৩-১৪ অর্ভবছরে সিমেন উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ লাখ ১১ হাজারে। প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী বুল স্টেশনে প্রতি বছর ৩ লাখ ডোজ হিমায়িত সিমেন উৎপাদন হয়। সাভার ডেইরি ফার্মে বছরে উৎপাদন হয় ২৫ লাখ হিমায়িত সিমেন এবং ১৭ লাখ তরল সিমেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো দেশে মোট ২ কোটি ২৯ লাখ গবাদিপশু রয়েছে। এর মধ্যে প্রজননক্ষম গাভী ও বকনা প্রায় ৬০ লাখ। এদের গড় দুধ উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ১ থেকে দেড় লিটার এবং ওজন ১০০ থেকে ১২৫ কেজি। প্রকল্পের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে এসব গাভী কৃত্রিম প্রজননের আওতায় আনা উচিত।

প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে মাংস উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছর দেশে মোট মাংস উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৮৪ হাজার টন। ফলে দৈনিক মাথাপিছু মাংসের উৎপাদন ছিল ২০ দশমিক ৬০ গ্রাম।  বর্তমানে মাথাপিছু মাংসের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৮০ দশমিক ৬৪ গ্রামে।

অপরদিকে ২০০৮-০৯ অর্থবছর দেশে মাথাপিছু দুধ উৎপাদন ছিল দৈনিক ৪৩ দশমিক ৪৩ মিলি লিটার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে দুধের দৈনিক চাহিদা ২৫০ মিলি লিটার। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দৈনিক মাথাপিছু উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১০৮ দশমিক ৬৬ মিলি লিটারে।

cow

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে জানা যায়, ষাটের দশকে দেশে তরল সিমেন উৎপাদনের মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। চাহিদা বিবেচনায় ১৯৯৬-৯৭ হতে ১৯৯৯-২০০০ সাল পর্যন্ত তরল সিমেনের পাশাপাশি হিমায়িত সিমেন ব্যবহারের মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে সিমেন উৎপাদিত হয় গড়ে বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ ডোজ। গাভী ও বকনা প্রজনন করা হয় গড়ে বার্ষিক প্রায় ৯ লাখে। বাচ্চা উৎপাদন হয় বার্ষিক গড়ে ৩ লাখ।

২০০১-২০০২ সাল পর্যন্ত ১৪ লাখ গাভী ও বকনা কৃত্রিম প্রজননের আওতায় আনা সম্ভব হয়। ২০০২-০৩ অর্থবছর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন শীর্ষক প্রকল্পটি ১ম ফেজ অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কাজ করে। ১ম ফেজের কর্মকাণ্ড সম্পাদনের পর পরবর্তীতে ২০০৯ সালে প্রকল্পের ২য় ফেস অনুমোদিত হয়।

প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ইউনিয়নে কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট নির্মাণের কথা থাকলেও ৯৪২টি ইউপিতে তা স্থাপন করা হয়। নদীভাঙন এবং ইউনিয়নের অস্তিত্ব সংক্রান্ত জটিলতায় ৫৮টি ইউপিতে কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট ও ট্রাভিস স্থাপন সম্ভব হয়নি। দুর্গম চরাঞ্চল এবং নদীভাঙন কবলিত ৩৩টি ইউনিয়নের সার্ভিস প্রোভাইডারদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। প্রাণিজ সম্পদ খাতে ব্যাপক সফলতা পাওয়া এ প্রকল্পটির বেশ কিছু দুর্বল দিক রয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমই বিভাগ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ছিল চাহিদার চেয়ে কম। দক্ষ কর্মীর অভাবে বীজ ভালোভাবে স্থাপনে সমস্যা হয়েছে। বীজের মান অনেক ক্ষেত্রেই ছিল খারাপ। কৃত্রিম প্রজননের ফলে গাভীর গর্ভধারণ হয় না বলে অভিযোগ করেন প্রকল্প এলাকার ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ খামারি।  

এফএইচএস/এএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।