‘বাবা বাবা পাজি বানর আমাকে ভেংচি দেয়’
চিড়িয়াখানা নিয়ে মানুষের উৎসাহের যেন কমতি নেই। সৃষ্টির রূপ খোঁজার পিপাসা নিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চিড়িখানায় ভিড় জমায়। খাঁচায় বন্দি প্রাণীদের খুব কাছ থেকে দেখার বাসনা মানুষের স্বভাবজাত। জাতীয় চিড়িয়াখানা আধুনিকতার দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও আয়তনে বিশ্বের চতুর্থ। তবে সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তনও এসেছে বেশ। বিশ্বমানের করে তুলতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ পরিকল্পনা। সম্প্রতি সরেজমিনে জাতীয় চিড়িয়াখানার চিত্র তুলে এনেছেন জাগো নিউজ-এর প্রতিবেদকরা। প্রতিবেদনে চিড়িয়াখানার হালচাল, পরিবর্ধন-পরিবর্তন ও প্রাণীকূলের নানা দিক উঠে এসেছে। প্রতিবেদন তৈরি করেছেন সায়েম সাবু, মামুন আব্দুল্লাহ ও আবু সালেহ সায়াদাত। ছবি তুলেছেন মাহবুব আলম।
ছোট্ট শিশু জান্নাতুল ফেরদাউস। এই প্রথম চিড়িয়াখানায় এসেছে। ভিতরে ঢুকেই সে মহা খুশি। বাবার হাত ছেড়ে দৌড়ে বানরের খাঁচার সামনে গিয়ে হাজির। কিছুক্ষণ পরই আবার বাবার কাছে ফিরে আসলো সে। কি হয়েছে? ভিতু কণ্ঠে জান্নাতের নালিশ- ‘বাবা, বাবা পাজি বানর আমাকে ভেংচি দেয়’। তুমি আসো। তাকে পানিশমেন্ট দিবে।
গত রোববার মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা (বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা) পরিদর্শনকালে এ দৃশ্য দেখা যায়।
কথা বলে জানা গেলো, মেয়েটির বাবার নাম আবদুস সামাদ। কুষ্টিয়া থেকে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছেন। বড় মেয়ে ফাতেমাতুজ জহুরা, জান্নাতুল ফেরদাউস ছোট। দুজনই প্রাইমারি স্কুলে পড়ে। অনেক দিন থেকেই তাদের বায়না জাতীয় চিড়িয়াখানা দেখার। ওই বায়না পূরণেই সপরিবারে এসেছেন তিনি।
আবদুস সামাদের মতো প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আসে এ চিড়িয়াখানায়। যাদের বেশির ভাগই আসেন জীবন্ত প্রাণী দেখতে কিংবা শিশুদের বায়না পূরণে। এজন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় শিশুদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
বাঘ, ভাল্লুক, হরিণ, সাপ, কুমির, গন্ডার, হাতি, জিরাফসহ নানা প্রাণী দেখে দেখে দিন কাটে শিশুদের। তবে বানরের খাঁচার সামনে ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। বানরের ডিগবাজিসহ নানা কসরত শিশুদের মন কাড়ে। বানরের বাদরামী শিশু মনে বাড়তি আনন্দ দেয়।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতি শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ভিড় থাকে বেশি। একই সঙ্গে ঈদসহ বিশেষ দিবসে চিড়িয়াখানায় ঢল নামে নানা বয়সী দর্শনার্থীদের। ঘন গাছগাছালির মধ্যে খাঁচায় বন্দি হাজারো প্রাণী দেখা ও প্রকৃতির ছায়া উপভোগ করেন তারা। এ তালিকায় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে, তরুণ-তরুণী ও বয়সী নারী-পুরুষ সবাই থাকে।
সুষ্ঠু পরিবেশে বিনোদন উপভোগের সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে কিউরেটর এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, মিরপুর চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রজাতির ২ হাজার ৬৪৭টি প্রাণী আছে। বিনোদনপ্রেমীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। কেউ যেন কোনো প্রকার বিরক্ত বা হয়রানি করতে না পারে, তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগের তুলনায় বর্তমানে চিড়িয়াখানার পরিবেশ অনেক ভালো। নতুন কিছু প্রাণী বাচ্চা দিয়েছে। ময়ূর, জলহস্তি, অজগর, হরিণ এবং জিরাফের বাচ্চা দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় হবে।
এএসএস/এএস/এমএ/এমএমজেড/আরআইপি