যানজটে নাকাল ঢাকাবাসীর স্বস্তি ওয়াটার ট্যাক্সিতে


প্রকাশিত: ০১:০৯ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

যান্ত্রিক নগরীতে পরিবহন সমস্যা ক্রমেই প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। জীবন জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষকে কর্মস্থলে ছুটে বেড়াতে হয়। তীব্র যানজটের কারণে নির্ধারিত গন্তব্যে যথাসময়ে পৌঁছাতে না পাড়ার বেদনা নিত্যদিন নগরবাসীকে পীড়া দেয়। ২০১২ সালের কথা। ঘটা করে উদ্বোধন করা হয় রাজধানী ঘিরে থাকা নদীগুলোতে ওয়াটার বাস। লক্ষ্য ছিল রাজধানীবাসীর যাতায়াতে দুঃখ লাঘব করা। গাবতলী থেকে বাবুবাজার, বাদামতলী ও সদরঘাট পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার পথ যানজটমুক্ত, আরামদায়ক ও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। বিআইডব্লিউটিসির এ উদ্যোগে এক বুক স্বপ্নও বেঁধেছিল রাজধানীবাসী। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আশা যেন দুরাশায় রূপ নেয়। বর্তমানে প্রায় ব্যর্থ এই প্রকল্প। অপরদিকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হাতিরঝিলে এফডিসি থেকে মেরুল বাড্ডা ও গুলশান গুদারাঘাটে সম্প্রতি চালু হওয়া ওয়াটার বাস সার্ভিস স্বল্প সময়ের মধ্যে জনগণের মাঝে আশা জাগিয়েছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও আন্তরিকতা থাকলে যে একটি প্রকল্প সফল হতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ হাতিরঝিলের ওয়াটার সার্ভিস। জাগো নিউজের একঝাঁক তরুণ সংবাদকর্মী সরেজমিন দুটি প্রকল্প ঘুরে এসে একাধিক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

যানজটের জালে বন্দি রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায় যুক্ত হওয়া নতুন বাহন ওয়াটার ট্যাক্সি নগরবাসীর মনে আশার আলো জাগিয়েছে। হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন চারটি ওয়াটার  ট্যাক্সি গেল বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে চালু হয়। এফডিসি মোড় থেকে বাড্ডা সংযোগ সড়ক ও রামপুরা সেতু বা মেরুল বাড্ডা সড়কে চলছে ট্যাক্সিগুলো।

ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হওয়ায় এ রুট ব্যবহারকারী লোকজনের যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি যানজটে নাকাল নগরবাসীর মধ্য স্বস্তি ফিরেছে। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে বিনোদনের নতুন মাত্রাও যোগ হয়েছে হাতিরঝিলে।

Water
এ সেবা চালু হওয়ায় বাড্ডা, গুলশান, রামপুরা, খিলগাঁওসহ নগরীর পূর্বাংশের মানুষ কারওয়ানবাজার, মগবাজার, দিলু রোড, ইস্কাটন, বাংলামোটর, তেজগাঁও এলাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারছেন। ওয়াটার ট্যাক্সিসেবা থেকে যাতায়াতের পাশাপাশি নগরবাসী নৌভ্রমণের আনন্দও নিতে পারছেন।

ট্যাক্সির প্রতিটিতে ৪৫ জন যাত্রী ধারণক্ষমতা। চালু হওয়া এ চারটি ওয়াটার ট্যাক্সি প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর গন্তব্য ছেড়ে যাচ্ছে তিনটি টার্মিনাল থেকে। এফডিসি বা কারওয়ানবাজার মোড় থেকে গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড হয়ে গুদারাঘাট যেতে ভাড়া ৩০ টাকা। এফডিসি বা কারওয়ানবাজার মোড় থেকে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত  ভাড়া ২৫ টাকা। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন শিফটে ভাগ করে বিরতিহীনভাবে সেবা দিচ্ছেন ওয়াটার ট্যাক্সির কর্মচারীরা। পরবর্তীতে ওয়াটার ট্যাক্সির এ সুবিধা গুলশান ও বারিধারায়ও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে জানা গেছে।

যানজটে নাকাল নগরবাসী যানজটের হাত থেকে মুক্তি পেতে ওয়াটার ট্যাক্সিতে গন্তব্যে যাচ্ছেন। আবার প্রতিদিনই নগর জীবনের শত ব্যস্ততার মধ্যেও একটু দম ফেলার বিনোদন পেতে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। চড়ছেন ওয়াটার ট্যাক্সিতে।

গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড কাউন্টারে টিকিট কেটে ওয়াটার ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছিলেন শামছুর রহমান নামে বেসরকারি এক চাকরিজীবী। ওয়াটার ট্যাক্সিতে তিনি এফডিসি বা কারওয়ানবাজার মোড় নেমে যাবেন বাংলামোটর।

Hatir-Jheel
শামছুর রহমানের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমার অফিস গুলশান ১-এ । অফিসের কাজেই যেতে হচ্ছে বাংলামোটর। ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিসের কারণে মাত্র ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে কারওয়ানবাজারে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু যদি বাসে যেতাম তাহলে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা সময় লাগত। এ সার্ভিস আমাদের জন্য খুব ভালো একটি পদক্ষেপ ।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এ ট্যাক্সির সংখ্যা বর্তমানে কম থাকায় আমাদের বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এর সংখ্যা বাড়ালে যাত্রীরা খুব উপকৃত হবে।’

বন্ধু হাবিবকে সঙ্গে নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিক্তা আক্তার ওয়াটার ট্যাক্সিতে উঠছিলেন। আলাপ হয় রিক্তা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সিতে উঠবো। যানজটের নগরী ঢাকার ভেতরে নৌকায় চড়ে ঘুরার সুযোগ মিস না করতেই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি।’

এদিকে হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সির প্রজেক্ট ইনচার্জ সোহেল আহমেদ বাবু জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিনই ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়তে যাত্রী-দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। তবে সকালে তেমন একটা চাপ না থাকলেও যাত্রী বাড়তে থাকে দুপুরের পর।

এএস/এএসএস/জেডএ/পিআর

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।