আন্তর্জাতিক মানে পিছিয়ে দেশের সব বিমানবন্দর


প্রকাশিত: ০৯:০০ এএম, ০৭ জানুয়ারি ২০১৭

আন্তর্জাতিক মান অর্জনে পিছিয়ে বাংলাদেশের সব বিমানবন্দর। দেশের প্রধান হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখনো সুপরিসর অত্যাধুনিক এয়ারবাস-৩৮০ এর মতো বড় উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণের জন্য প্রস্তুত নয়। সেইসঙ্গে অবকাঠামোসহ আনুষঙ্গিক সুবিধাও অপর্যাপ্ত। দেশের অন্য সব বিমানবন্দরের অবস্থা আরও নাজুক।

বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা গাণিতিক হিসাব না বলতে পারলেও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হিসাবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহনে প্রতি বছর সাড়ে ৯ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। সেই অনুপাতে বাড়ছে না আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা।

অবকাঠামো নির্মাণের শুরুতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকার কারণেই এ অবস্থা বলে মনে করছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে আকাশ পরিবহনে গাণিতিক হারে যাত্রীদের চাপ বাড়লেও বাড়ছে না বিমান বন্দরগুলোর আনুষঙ্গিক সুবিধা। দেশের কোনো বিমানবন্দরই এখন পর্যন্ত উপযোগী দীর্ঘমেয়াদি বড় অবকাঠামো পরিকল্পনা নিয়ে গড়ে ওঠেনি।

শাহজালাল বিমানবন্দর তৈরির সময় দ্বিতীয় রানওয়ের জন্য জায়গা রাখা হয়নি। যে কারণে এখন চাহিদা থাকলেও আরেকটি রানওয়ে করা সম্ভব নয়। একই অবস্থা চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষেত্রেও। বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য বিকল্প কোনো রাস্তা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। পরিবহন গতি কমে গিয়ে যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে আমদানি-রফতানিতে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে যাত্রী পরিবহন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিমানবন্দরটি ব্যবহার করেছেন ৬৭ লাখ যাত্রী। যদিও রানওয়ের সক্ষমতা এখনো আন্তর্জাতিক মানের নয়। রানওয়ের সক্ষমতা না থাকায় বিমানবন্দরটিতে কার্যক্রম চালাতে পারে না এয়ারবাস-৩৮০-এর মতো বড় উড়োজাহাজ।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে নির্মিত বিমানবন্দরটির রানওয়ের অ্যাসফল্ট ওভারলে প্রায় ক্ষয় হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বড় উড়োজাহাজ ওঠানামা করছে শতভাগ ঝুঁকির মুখে। যদিও সংস্কারের পাশাপাশি বিমানবন্দরটি আধুনিকায়নের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত বেশকিছু বিষয়ে আপত্তি তুলে প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য খোরশেদ আলম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন ও সংস্কারের জন্য একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

দেশের প্রধান বিমানবন্দরটির কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতাও সীমিত। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বার্ষিক দুই লাখ টন হলেও হ্যান্ডলিং হচ্ছে বর্তমানে ২ লাখ ৩৭ হাজার টন। অর্থাৎ সক্ষমতার অতিরিক্ত কার্গো হ্যান্ডলিং হচ্ছে বিমানবন্দরটিতে।

কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ও অবকাঠামো দুর্বলতা, বিশেষ করে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে গত বছরের ৮ মার্চ ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো পরিবহন নিষিদ্ধ করে যুক্তরাজ্য। একই কারণে ওই বছরের জুনে বন্ধ হয়ে যায় জার্মানিতে কার্গো পরিবহন। এর আগে ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়াও বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট নিষিদ্ধ করে।

অবকাঠামো দুর্বলতা রয়েছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেরও। বিমানবন্দরটির বর্তমান রানওয়ে ২০০০ সালে নির্মিত। ১৭ বছর আগে নির্মিত ২ হাজার ৯৪০ মিটার রানওয়ের অ্যাসফল্ট ওভারলের অনেক জায়গায় এরই মধ্যে ক্ষয়ে গেছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে ওঠানামা করছে বোয়িং-৭৭৭-এর মতো বড় উড়োজাহাজ।

দুর্বলতা রয়েছে শাহ আমানত বিমানবন্দরের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায়ও। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) নির্দেশনা মোতাবেক বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ অবতরণে ফায়ার ক্যাটাগরি-৮ মান বাধ্যতামূলক। অথচ শাহ আমানতের ফায়ার ক্যাটাগরি-৭ মানের।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, বিমানবন্দরটিতে বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ অবতরণের সময় ক্যাটাগরি-৮ চাহিদা মোতাবেক ফায়ারসহ সব বিভাগের যাবতীয় সরঞ্জামাদি প্রস্তুত রাখা হয়। পরে আবার সেগুলো সরিয়ে নেয়া হয়। আইকাওয়ের নির্দেশনায় এ সুযোগ রয়েছে।

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেরও বড় উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণের মতো অবকাঠামো নেই। চাহিদা সত্ত্বেও রানওয়ের পরিসর না থাকায় পূর্ণ জ্বালানি ও যাত্রী নিয়ে বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ বিমানবন্দরটি থেকে উড্ডয়ন করতে পারে না। ফলে লন্ডনগামী  অধিকাংশ যাত্রী-ই সিলেটের হলেও তাদের যেতে হচ্ছে ঢাকা থেকে।

আরএম/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।