দক্ষিণ সিটিতে ময়লার স্তুপ : ড্রেনে পানিপ্রবাহ বন্ধ


প্রকাশিত: ০৫:০২ এএম, ০১ জানুয়ারি ২০১৭

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধিকাংশ এলাকার ড্রেনে পানিপ্রবাহ বন্ধ, ময়লা পানি আবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্গন্ধময় পরিবেশ। কোথাও কোথাও বাসা-বাড়ির সুয়ারেজ লাইনের পানি সড়কে জমছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ এলাকায় বড় বড় ময়লার স্তূপ জমে আছে। দীর্ঘদিন যাবৎ নগরবাসীর এমন অভিযোগ থাকলেও এবার খোদ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারাই এমন চিত্র দেখেতে পেয়েছেন।

সম্প্রতি দক্ষিণ সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নে গঠিত কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সংস্থার প্রতিটি অঞ্চল পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। ওই প্রতিবেদনেই এমন চিত্র দেখা গেছে।

প্রতিবেদন তৈরিতে অঞ্চল-১ এর দায়িত্বে ছিলেন- স্থানীয় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা খাতুন (উপসচিব), তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সেহাব উল্লাহ ও অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর আহমদ। এ কমিটি পুরো অঞ্চলের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোড, ঈদগাহ মাঠ ও পান্থপথ মেইন রোডের কন্টেইনারের সামনে আবর্জনা রয়েছে। ধানমন্ডি-৩১ এও রয়েছে ময়লার স্তুপ। ৩২ নম্বরের রাসেল স্কয়ারের সামনের ড্রেন পরিষ্কার নেই।

বুয়েট, সেগুনবাগিচা ও শাহবাগ এলাকায় রাস্তার মধ্যে আড়াআড়িভাবে রাখা হয়েছে কন্টেইনার। যে কারণে যানজট লেগেই থাকে। গ্রিন রোড ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, পান্থপথ ফিরোজা টাওয়ার ও মিরপুর রোডের সোবহানবাগ মসজিদের বিপরীতেও রয়েছে ময়লার স্তুপ।

অঞ্চল-২ এর দায়িত্বে ছিলেন পরিবহন শাখার মহা-ব্যবস্থাপক শেখ শোয়েবুল আলমসহ (উপ সচিব) আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সানাউল হক, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নুরুল আমিন, প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা জাকির হোসেন। তারা পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, খিলগাঁও ‘ল’ কলেজের বিপরীতে রাস্তা অপরিষ্কার, কোথাও কোথাও ময়লার স্তুপ দেখা গেছে।

DSCC

আনসার হেড কোয়ার্টার ও সবুজবাগের ড্রেনগুলোতে পানির প্রবাহ নেই, ময়লা পানি আবদ্ধ অবস্থায় জমে আছে। এরশাদ স্কুল ও খিলগাঁও বালিকা স্কুলের রাস্তার পাশে ময়লা অবর্জনা রয়েছে। ৪৪১/সি ও ১১ নং রোডের  ‘এ’ ব্লকে ময়লা আবর্জনা রয়েছে। মধ্য বাসাবো খেলার মাঠ, মাদারটেক, পাওয়ার হাউজ ও আব্দুল আজিম স্কুল এলাকায় ওয়াসার ড্রেন থেকে উত্তোলিত মাটি রয়েছে। বাসাবো বাজার রোড রাস্তায় ঝাড়ু দেয়া হয় না।

এছাড়া ড্রেনে পানি আবদ্ধ অবস্থায় আছে। ওয়ার্ডের কিছু কিছু রাস্তা কেটে রাখা হয়েছে। খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে এবং ঝিলে প্রচুর ময়লা রয়েছে। শাহজাহানপুর বাগিচা মসজিদের আশপাশে ময়লার স্তুপ।  

অঞ্চল-৩ এ পরিদর্শনে ছিলেন- সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নুরুল্লাহ, সচিব খান মোহাম্মদ রেজাউল করিম, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম আনছারুজ্জামান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু সালেহ মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন, অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী মো. আবুল হোসেন ও উপকর কর্মকর্তা ইউসূফ আলী সরদার।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- সব রাস্তায় আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার পাশাপাশি নির্ধারিত কন্টেইনারের বাইরেও পড়ে থাকে। ঝিগাতলা মনেশ্বর রোডের ড্রেনে ময়লা জমা আছে এবং ড্রেন খোলা অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া টালি অফিস সংলগ্ন খালের ওপর প্রচুর ময়লা পড়ে রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো জানা গেছে ২৭ নং ওয়ার্ডের এতিমখানা রোডের কন্টেইনার পূর্ণ হয়ে ময়লা বাইরে রাখা হয়েছে। হোসনি দালান রোডে ওয়াসার সুয়ারেজ লাইনে ময়লা স্তুপ হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। একই অবস্থা ২৮ নম্বর ওয়ার্ডেও। তাছাড়া ২৩ নং ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক নেই। ৫৫ নং ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্ন কর্মী নেই। ফলে ওয়ার্ডটির প্রতিটি স্থানে ময়লার স্তূপ পড়ে আছে।

অঞ্চলটিতে আরো দেখা গেছে, শেখ সাহেববাজার মোড়ে ভুট্টুর হোটেলসহ চৌধুরী বাজার, জেএনশাহ রোড, সুবল দাস রোড, বালুর মাঠ, রাজ নারায়ন ধর, স্ট্রিট রহমত উল্লাহ গার্লস স্কুল, মিদনা হোটেল ও লালবাগ কেল্লা মসজিদের সামনে রয়েছে ময়লার স্তুপ।

এছাড়া লালবাগ কেল্লা, পোস্তা ও লালবাগ শাহী মসজিদের পাশের কন্টেইনার দুর্গন্ধযুক্ত। কিছু কিছু এলাকায় উন্নয়ন কাজের স্বার্থে রাস্তা কেটে রাখা হয়েছে। এছাড়া ডাস্টবিনের পাশে ময়লা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।

প্রতিনিধি দল সুপারিশে বলেছেন, ৫৬ ও ৫৭নং ওয়ার্ডস্থ ব্যাটারিঘাটে ৫ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩টি, কুড়ারঘাটে ৪টি, কোম্পানিঘাটে ৭টি এবং ছাতা মসজিদ সংলগ্ন বেড়ীবাঁধে ১০টি কন্টেইনার ও সহায়ক যন্ত্রপাতি প্রদান করা প্রয়োজন।

অঞ্চল-৪ এর দায়িত্বে ছিলেন, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা খালিদ পারভেজ খান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান এবং অঞ্চল-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদ সিরাজ।

DSCC

প্রতিবেদনে তারা জানান, অধিকাংশ ম্যানহোল ময়লায় ঢাকা থাকে। নর্থসাউথ রোর্ডের পশ্চিম পাশে হোটেল আল-রাজ্জাক ও নাজিরা বাজার মাতৃসদনের পাশে ওয়াসার ড্রেনে ময়লা জমে আছে। এছাড়া নবদীপ বসাক লেন, সুভাস বোস এভিনিউ, কাজী আব্দুর রউফ রোড, নন্দলাল দত্ত লেন, পাঁচভাই ঘাট লেন, ফরাশগঞ্জ লেন, হেমেন্দ্র দাস লেন ও শুকলাল দাস লেনের বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তুপ পড়ে আছে।

অঞ্চল-৫ এর দায়িত্বে ছিলেন, সিস্টেম অ্যানালিস্ট আবু তৈয়ব রোকন, উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সাঈদুর রহমান খান, আইন কর্মকর্তা মো. শফিউল আরিফ এবং বাস টার্মিনাল ব্যবস্থাপক মারুফ হাসান।

তারা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন- দয়াগঞ্জ মোড়, পদ্মনিধি লেন, লাল মোহন সাহাস্ট্রিট, জোড়পুকুর এলাকায় কাঁচাবাজার, সেতু বন্ধন ক্লাব, পশ্চিম ধোলাইখাল, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা ও ফ্লাইওভারের নিচের বিভিন্ন এলাকায় ময়লার স্তুপ পড়ে আছে। ইত্তেফাক ভবনের পাশের গলিতে ময়লার স্তুপ রয়েছে।

এদিকে, ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক জরিপে দেখা গেছে, সংস্থাটি বর্জ্য সংরক্ষণ ও পরিবহনে মোট ৩২১টি কন্টেইনার ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ১৫৭টি কন্টেইনার ভাঙা। ১৫৭টি কন্টেইনারের মধ্যে ৩৫টি মেরামতযোগ্য এবং ৮২টি একেবারেই মেরামতের উপযোগী নয়। চলতি বছর ১০৪টি নতুন কন্টেইনারের চাহিদা দিয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, আমরা নতুন বছরের জন্য শতাধিক কন্টেইনারের চাহিদা দিয়েছি। আর ভাঙা কন্টেইনারগুলো মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। এগুলো ঠিক হয়ে গেলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে আরো অগ্রগতি আসবে।

এমএসএস/এমআরএম/এমএমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।