দুই বছরেই ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ভবন


প্রকাশিত: ০৮:১২ এএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার পৌনে এক লাখ শিশুর জন্য রয়েছে ৪০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ উপজেলাতেই রয়েছে জেলার সর্বাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারের পর্যাপ্ত বরাদ্দ থেকে প্রতিনিয়ত চলছে কর্তা ব্যক্তিদের তহবিল তছরুপ। খাতা-কলমে নাম সর্বস্ব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেও তারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখো টাকা। শিশুদের বিনা পয়সার বই বিক্রি থেকে শুরু করে উপবৃত্তির টাকা পর্যন্ত আত্মসাৎ হচ্ছে। সব মিলিয়ে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে এ উপজেলায়। ১০ দিন ধরে পুরো উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষায় দুর্নীতির অনুসন্ধানে চিরুনি অভিযান চালিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহেদ শফিক। হাতিয়া থেকে ফিরে এ নিয়ে তার ৮ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে চতুর্থ পর্ব
 halchal
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করছে। অনেক বিদ্যালয়ের দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। দেয়ালেও ফাটল দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার পরেও বিকল্প না থাকায় সেখানেই ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা।

সরকারি বরাদ্দে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব স্কুল নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এখন পরিত্যক্ত এসব ভবন নিয়েও চলছে বাণিজ্য। নামমাত্র নিলামে বেচে দেয়া হচ্ছে। শিক্ষা অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা ও শিক্ষকসহ একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখো টাকা।

এছাড়া প্রতিবছর স্কুল সংস্কার ও অন্যান্য কাজের জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও কাজের কাজ হয় না কিছুই। অভিযোগ রয়েছে, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা অফিস ভাগ করে পকেটস্থ করে এ টাকা।

এদিকে হাতিয়া উপজেলায় এ যাবৎ কতটি ভবন নির্মাণ হয়েছে এর কোনো সঠিক তথ্য নেই হাতিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসে। খোদ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরেও কোনো হিসাব সংরক্ষণ করা হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিল পরিশোধের পর ফাইলও গায়েব করে ফেলা হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তিনি জানান, ফাইল তার কাছে নেই। উপজেলা এলজিইডি অফিস থেকে পাওয়া যেতে পারে। পরে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে তথ্য চাইলেও তিনি কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বহু বছর ধরে ভবনগুলো নির্মাণ হয়ে আসছে। কোন ফাইল কোথায় আছে এখন কিভাবে বলি? খোঁজ নিতে হবে। তালিকা করতে হবে। এরপর বলা যাবে।

তিনি বলেন, আমরা সাধারণত কোনো ফাইল সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করি। তাছাড়া অফিসগুলোর অবস্থা তো খুবই খারাপ। কেউ ফাইল সংরক্ষণ করে রাখে না। পিইডিপি-৩ প্রকল্পের কিছু ফাইল থাকলেও পিইডিপি-১ ও ২-এর তো থাকার কথা না। অনেক সময় চলমান কাজের ফাইলও পেতে কষ্ট হয়। আমাদের কাছে এগুলো থাকে না। কখনো প্রয়োজন হলে আমরা উপরের অফিস থেকে খোঁজ-খবর নিয়ে থাকি।

ভবনগুলোর অবস্থা প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, আমি এখানে এসেছি মাত্র দুই মাস। আমার সহকারীদের থেকে শুনেছি অধিকাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। আসলে কী করণে হচ্ছে তা বলা যাচ্ছে না। অনেক সময় ব্যবহারকারীদের দুর্বলতার কারণেও হতে পারে। আবার নির্মাণে ত্রুটি ও কলামে জমে থাকা বৃষ্টির পানির করণেও ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

তিনি জানান, একটি ভবনের স্থায়ীত্ব হিসেব করার সময় আমরা সাধারণত তা ৫০ বছর ধরে থাকি। এক্ষেত্রে অযত্ন আর অবহেলার কারণে হয়তো সেটি ৪০ বছর টিকতে পারে। কিন্তু কী কারণে দুই বছর যেতে না যেতেই ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে তা বলা কঠিন। এজন্য গবেষণা করতে হবে। গবেষণা ছাড়া বলা কঠিন।

হাতিয়া উপজেলা পরিষদ থেকে কোনো তথ্য না পেয়ে এ প্রতিবেদক যান রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে। সেখানের কর্মকর্তারা জানান, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখায় এর তথ্য থাকবে। কিন্তু এতে দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক ড. মো. নূরুল আমিন চৌধুরী জানান তার কাছেও এর কোনো তথ্য নেই। এটা এলজিইডিতে রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মালিকানায় নির্মিত ভবনগুলোর তালিকা তো অধিদফতরে থাকার কথা- এর জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য আমরা তালিকা করে এলজিইডিতে পাঠিয়ে দিই। তারা ভবন নির্মাণ করে দেয়। সুতরাং তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে। আপনাকে সেখানেই খবর নিতে হবে।

Upokul

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবন নির্মাণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো নিলামে বেচে দেয়ার সঙ্গে উপজেলার চরকৈলাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ পশ্চিম বোয়ালিয়া সরকারি বিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষক জড়িত। তারা স্বনামে-বেনামে উপজেলা নিলাম কমিটি থেকে কাগজপত্র বের করে ভবনগুলো নিলামে নেন। নামমাত্র মূল্যে এসব ভবন কিনে নিচ্ছেন তারা। রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও এই দুই শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০০ সালের পর বিভিন্ন সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির তিনটি প্রকল্পের (পিইডিপি-১, ২ ও ৩) আওতায় বেশ কিছু স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার বেজুগালিয়া খাসের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুল্লাখ্যালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুল্ল্যাখালী ইদ্রীসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কান্তারাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যারয়, মধ্য হরণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছোট দেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরকৌলাশ তাহেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নলচিরা হাজী কালামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত অর্ধশত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব বিদ্যালয় ভবনগুলো দুই বছর যাওয়ার পরই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু ভবন এরই মধ্যে নিলাম দিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছু ভবন নিলামের অপেক্ষায় রয়েছে। আবার কিছু কিছু ভবন রয়েছে ভয়াবহ ঝুঁকিতে।

building
মাত্র দুই বছর আগে নির্মিত ভবনটির বর্তমান দশা এই

এই ভবনগুলোর মধ্যে পিইডিপি-২ প্রকল্পের আওতায় ২০০৯ সালের বেজুগালিয়া খাসের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের মাত্র দুই বছর পরই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে অভিভাবকরা সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করেন। ২০১৩ সাল থেকে ভবনটিতে ক্লাস নেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ভবনটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮০ হাজার ৫০০ টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে পাশের একটি সাইক্লোন শেল্টার সেন্টারে স্কুলটির পাঠদান চলছে। এ স্কুলটি নির্মাণে ঠিকাদার ছিলেন তৎকালীন বিএনপি নেতা আলা উদ্দিন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক লাইজু আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্মাণের পর থেকেই প্রথম বছর কোনো রকম স্কুলটিতে ক্লাস নিতে পেরেছি। পরের বছর থেকেই বড় বড় ফাটল দেখা দিতে থাকে। বর্ষার সময় বৃষ্টির পানিতে ক্লাসে বসা যেতো না। বর্তমানে ৪৫১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একটি ভবনে ক্লাস নিচ্ছি। একটা ছোট টেবিল ৬ থেকে ৭ জন করে বসানো হচ্ছে।

নলচিরা হাজী কালামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি গত অর্থবছরে নিলাম দিয়ে দেয়া হয়েছে। ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে ২০০৫-০৬ অর্থবছরের পিইডিপি২ প্রকল্পের মাধ্যমে। এছাড়া সুলতানা রাজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবন নিলাম দেয়া হয়েছে। এ ভবনটিও নির্মাণ করা হয়েছে পিইডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে। কোটি টাকা মূল্যের এ ভবনটি নিলাম দেয়া হয় মাত্র ১০ হাজার ৫০০ টাকায়।
Tube
আমতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ বছর নিলাম দিয়ে দেয়া হয়েছে। ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে পিইডিপি প্রকল্পের আওতায়। গুল্লাখ্যালী ইদ্রিসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত চার বছর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে উপজেলা এলজিইডি অফিস।

২০০০-০১ অর্থবছরে পিইডিপি প্রকল্পের অর্থায়নে ছোটদেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি ভবন ও বাথরুম নির্মাণ করা হয় এবং একটি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়। কিন্তু নির্মাণের মাত্র ৪ বছর পরেই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ছাদ থেকে পানি পড়তে থাকে। বাথরুম ও টিউবওয়েলটিও অকেজো হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাঠদান করার পর ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৬২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয়ে আরো একটি ভবন নির্মাণ করা হয়।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার দাস জাগো নিউজকে বলেন, নির্মাণের পর থেকেই ভবনটি ক্লাস নেয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। নতুন ভবনটিও অনেক দুর্বল। দু’চার বছর পর এটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

একই অবস্থা মধ্য হরণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। পিইডিপি-২ প্রকল্পের আওতায় ২০০৪ সালে এ বিদ্যালয়ের জন্য একটি ভবন ও একটি টয়লেট নির্মাণ করা হয়। একটি টিউবওয়েলও স্থাপন করা হয় এ সময়। কিন্তু ২০০৯ সালের দিকে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। নির্মাণের পরের বছরই টয়লেট ও টিউবওয়েলটি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর গত অর্থবছরে ভবনটি নিলামে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। পরে ২০০৯ সালে দ্বিতল বিশিষ্ট আরো একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। নতুন নির্মিত ভবনটির অবস্থাও ভালো নয়।
Wall
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমেনা বেগম বলেন, এসব বলে কোনো লাভ নেই। যারাই দায়িত্বে থাকেন তাদের দুর্নীতির কারণেই স্কুলগুলোর আজ এ অবস্থা। শুধু ভবন নয়। আমার স্কুলে ৮ জন শিক্ষকের পদ খালি। আছে মাত্র ৫ জন। এক জন চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থীদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। অথচ পৌরসভার একটি স্কুলে শিক্ষার্থী ২০ জন, কিন্তু শিক্ষক দিয়ে দেয়া হয়েছে ১০ থেকে ১২ জন। শুধু স্বজনপ্রীতি আর দুর্নীতির মাধ্যমেই এটা করা হয়।

তিনি বলেন, ‘আমার স্কুলে এখন প্রায় সাড়ে ৪শ শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের জন্য আরো একটি ভবন দরকার। অনেক কষ্ট করে ক্লাস নিতে হচ্ছে।’

পিইডিপি প্রকল্প ছাড়াও সৌদি সরকারের অর্থায়নে বিভিন্ন সময়ে রেনুমিয়া হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নলচিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নলচিরা আল হাবিব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। গত দুই বছরে এই ভবনগুলোও নিলামে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।

এসব বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ভবরঞ্জন দাস জাগো নিউজকে বলেন, হাতিয়ার অধিকাংশ ভবন নির্মাণ হয়েছে ২০০১ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে। হাতিয়ার বাস্তবতা ভিন্ন। কাজের মানের দুর্বলতা, রাজনৈতিক বাস্তবতা ও প্রাকৃতিক কারণে ভবনগুলো টেকে না। আমাদের পক্ষ থেকেও সঠিক তদারকি হয় না। বর্তমানে আমার জানা মতে ৭-৮টা ভবন ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। দুই তলার ফাউন্ডেশনে যেসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। একতলা ভবনগুলোতে পরের বছর দ্বিতীয় তলা নির্মাণ করা হলেই সেগুলো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এই ভবনগুলোতে এখন প্রবেশ করাও যায় না। আমরা অধিকাংশ ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোশারেফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এটা আসলেই দুঃখজনক। এখানে যারা ঠিকাদারি করছে ভবন নির্মাণের সময় তাদের ওপরেও বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। এটা আমাদের দায়িত্ব নয়। এর দায়িত্ব প্রকৌশলীদের।

তিনি বলেন, এগুলো তদারকির দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও)। তিনি যদি তদারকি করেন তাহলে এমন হয় না। আসলে সত্য কথা হচ্ছে তদারকিতেও উনার কোনো এখতিয়ার থাকে না। তার কাছে এমনভাবে বিভিন্ন রকমের চাপ আসে তিনি না দিয়েও পারেন না।

ভবনগুলোর নির্মাণ ত্রুটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হয় মাত্র ৮ থেকে ১০ বছর যেতে না যেতেই ঝরে ঝরে পড়ে। এখনে শীর্ষ পর্যায়ে যারা আছেন তাদেরই সচেতন হতে হবে। ঠিকাদার কীভাবে কাজ করবে? সে তো হাত-পা বাঁধা।
Upokul
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতকরণ ও শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বাড়াতে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয় সরকার। দাতাগোষ্ঠীর সহায়তা নির্ভর এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ২২ হাজার কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়নে শুরুতেই বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করেছিল প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়ন করেছিল প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বর্তমানে পিইডিপি-৩ কর্মসূচির অধীনে দেশব্যাপী ৩ হাজার ৬৮৫টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, ২ হাজার ৭০৯টি বিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে।

এছাড়া ১ লাখ ২৯ হাজারটি টয়লেট স্থাপন, ৪৯ হাজার ৩০০টি নলকূপ, ১১ হাজার ৬০০টি শ্রেণিকক্ষ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে এই কর্মসূচি শেষ হবে। এরআগে এর মধ্যে ছিল পিইডিপি-১ ও ২, রেজিস্টার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প।

চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে পিইডিপি-৩, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প (আইডিবি) অন্যতম। এসব প্রকল্প বাংলাদেশ সরকারের অনুদানসহ বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার আর্থিক সাহায্যে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তবে যে গতিতে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলছে তাতে জরাজীর্ণ স্কুলের সংখ্যা আগের তুলনায় আরো বাড়বে বলে মনে করেন শিক্ষকরা।

উল্লেখ্য, উপকূলের শিক্ষার হালচাল নিয়ে ২৪ ডিসেম্বর থেকে ধারবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে জাগো নিউজে। তিনটি পর্ব প্রকাশিত হওয়ার পরই হাতিয়ায় শিক্ষাখাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এ অনিয়মের তদন্ত শুরু করেন। দুই ধাপে শুরু হওয়া তদন্তে প্রথম ধাপে জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত করেছেন। দ্বিতীয় ধাপে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারি তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে রয়েছেন।

এমএসএস/এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।