ইসি গঠনে গুরুত্ব পাচ্ছে আইন প্রণয়ন


প্রকাশিত: ০৭:০৮ এএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে গুরুত্ব পাচ্ছে ‘আইন প্রণয়ন’। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি সুনির্দিষ্ট ‘আইন প্রণয়ন’ করার প্রস্তাব করেছে সংলাপে অংশ নেয়া অধিকাংশ দলগুলো।
 
দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইন প্রণয়নের জন্যে রাষ্ট্রপতিকে জরুরি সংসদ অধিবেশন ডাকারও প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। অধিবেশনটি ১৫ থেকে ১ মাসের মধ্যে হলেই আইন প্রণয়ন ও পাস করা সম্ভব বলে মনে করে দলগুলো।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের সময় দেয়া প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন গঠনে সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সার্চ কমিটি গঠনের জন্যে রাষ্ট্রপতিকে প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি একজন নারী কমিশনার ও নির্বাচনের সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব মন্ত্রণালয় রয়েছে সবগুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার পরামর্শ উঠে এসেছে চলমান সংলাপের প্রস্তাবগুলো থেকে।

বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ-এর আহ্বানে ১৮ ডিসেম্বর সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করে বিএনপি। এর দুই দিন পর ২০ ডিসেম্বর সংলাপে অংশ নেয় জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)।

জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ৫ দফা প্রস্তাবনা দেয়া হয়। প্রস্তাবনার প্রথমটিতে বলা হয়, সংবিধান অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত একটি আইনি কাঠামো প্রণয়ন, নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখার বিধান করা, নির্বাচন কমিশনের আলাদা সচিবালয় দেয়া, বর্তমানে সংসদেই এই আইন পাস করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার বিবেচনা করতে হবে।

২১ ডিসেম্বর সংলাপে অংশ নেয় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে নির্বাচনী বিধি বিধানের সংস্কার ও সংশোধনের জন্য ১৭টি প্রস্তাব দিয়েছি রাষ্ট্রপতির কাছে।

এলডিপির উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব : নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখা; সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত একটি আইনি কাঠামো প্রণয়ন; নির্বাচন কমিশনের জন্য আলাদা সচিবালয় গঠন; নির্বাচন কমিশনারদের ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারণ, নিরপেক্ষতা, ব্যক্তিগত একাগ্রতা ও সততা, অন্য অফিসে নিয়োগে বিধি-নিষেধ, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়জ্ঞান, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় না থাকা নিশ্চিত করা; নির্বাচনকালীন প্রতিরক্ষাবাহিনী মোতায়েন ও তাদের পুলিশের ন্যায় ক্ষমতা প্রদান প্রভৃতি।

সংলাপ শেষে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নেই। আমাদের বা রাষ্ট্রপতির সৌভাগ্য যে সংবিধানে ১১৮ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির জন্য কোনও ধরনের বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি স্বাধীন ও মুক্তভাবে ইসি গঠন করতে পারেন।’

২৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (একাংশ)। দলটির পক্ষ থেকে ৭ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনার দ্বিতীয় দফায় বলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তি অর্থাৎ সংবিধানের চার মূলনীতিতে আস্থাশীল ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা; সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা; সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের পূর্বে নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি এবং বাংলাদেশের সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত এমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বাছাই কমিটি গঠন করা; সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হবার ছয় মাস পূর্বে আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরু করা; বাছাই কমিটি কর্তৃক রাজনৈতিক দলসমূহ, সামাজিক নাগরিক সংস্থা এবং দেশের যে কোন নিবন্ধিত ভোটারের কাছ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নামের প্রস্তাব আহ্বান করা।

বাছাই কমিটি কর্তৃক রাজনৈতিক দল সমূহ ও নাগরিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবসমূহ বাছাই করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের বিপরীতে তিন জন করে নামের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করা; বাছাই কমিটি কর্তৃক ১/৩ ভিত্তিতে বাছাইকৃত ১৫ জনের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণের পূর্বে উক্ত তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করা; রাষ্ট্রপতি বাছাই কমিটি কর্তৃক প্রেরিত প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ন্যূনতম একজন নারী নির্বাচন কমিশনারসহ চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।

২৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে যাওয়া ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকেও এ ধরনের প্রস্তাব দেয়া হবে বলে দলটির একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক ওয়ার্কার্স পার্টি। এই আইন প্রণয়নের জন্যে রাষ্ট্রপতিকে জরুরি সংসদ অধিবেশন ডাকারও প্রস্তাব করবে তারা। অধিবেশনটি ১৫ থেকে ১ মাসের মধ্যে হলেই আইন প্রণয়ন ও পাস করা সম্ভব বলে পরামর্শ দেবে দলটি। সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সার্চ কমিটি গঠনের জন্যে রাষ্ট্রপতিকে প্রস্তাব করা হবে। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে অন্তত দুইজন নারী সদস্য রাখার প্রস্তাব জানাবে ওয়ার্কার্স পার্টি।

জানা গেছে, ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবে আরও থাকবে নির্বাচনের সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব মন্ত্রণালয় রয়েছে সবগুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার। সব মিলিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে ৮ দফা প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরা হবে।

এইউএ/এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।