একযুগে মাছ চাষ বেড়েছে ৫৭ শতাংশ


প্রকাশিত: ০৪:০২ এএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

দেশে মাছ চাষ বাড়ছে।একই সঙ্গে বাড়ছে মানুষের মাছ খাওয়ার পরিমাণ।মৎস্য উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার বেকার যুবকের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, ২০১০ সালে দেশে মাথাপিছু দৈনিক মাছ খাওয়ার পরিমাণ ছিল ৪৮ গ্রাম। বর্তমানে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ গ্রামে। দেশে প্রাণিজ আমিষের ৬০ শতাংশ আসে মাছ থেকে। পাঁচ বছর আগেও যা ছিল ৫০ শতাংশ।

মৎস্য অধিদফতরের হিসাবে, ২০০৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। রুই, পাঙ্গাশ, কৈসহ বেশ কিছু মাছের দাম দরিদ্র মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যেই রয়েছে। ফলে গত ১০ বছরে দেশে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ শতভাগ বেড়েছে।

জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) মতে, ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বে পুকুরে মাছ চাষ সবচেয়ে বেশি বাড়বে বাংলাদেশে। মৎস্য অধিদফতরের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১শতাংশের বেশি অর্থাৎ  এক কোটি ৮২ লাখ মানুষ মৎস্য সেক্টরের বিভিন্ন  কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭৫ হাজার ৩৩৮ মেট্রিক টন মৎস্য রফতানি করে ৪ হাজার ২৮৩ কোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৭২ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে তিন হাজার ২৪৩ দশমিক ৪১ কোটি টাকা। দেশের পুকুর ও দীঘিতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বার্ষিক হেক্টরপ্রতি গড় মৎস্য উৎপাদন ৪ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে যা, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ৯৯ মেট্রিক টন।

Dhaka

চলতি (২০১৬-১৭) অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মেয়াদে হিমায়িত ও জীবিত মাছ রফতানি করে আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৬৭ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা ১ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

মৎস্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে মাথাপিছু মাছের ভোগ বা খাওয়ার পরিমাণ যা বেড়েছে, তার ৭৬ শতাংশই আসছে পুকুর ও জলাশয় থেকে। ১৯৯০ সালে দেশে মোট চাষকৃত মাছ উৎপাদিত হয়েছিল ১ লাখ ৯৩ হাজার টন। ২০০০ সালে তা বেড়ে ৬ লাখ ৫৭ হাজার এবং ২০১৫তে এসে ১০ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে।

মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাটকাসমৃদ্ধ ১৫টি জেলার ৮০টি উপজেলায় জাটকা আহরণে বিরত ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৬টি জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি করে  চার মাসের জন্য মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৩৭ হাজার ৭৮৮ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।

জাটকা সংরক্ষণ, অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা এবং ইলিশ প্রজনন সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ৩ দশমিক ৮৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ৯৯ লাখ মেট্রিক টন।২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।  

মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে জেলেদের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় জুন ১৬ পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে ১৫ লাখ জেলের নিবন্ধন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ১৩ লাখ ৩০ হাজার  জেলের পরিচয়পত্র তৈরি এবং বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে এসপিএফ (প্যাসেফিক প্যাথজেন ফ্রি) বা রোগমুক্ত বাগদা চিংড়ি আমদানির মাধ্যমে চিংড়ির পিএল (পোস্ট লারভে) উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।এ কার্যক্রমের আওতায় ২০১৫ সালে প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ এবং ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত  প্রায়  ৮ কোটি ৭৬ লাখ পিএল চাষির খামারে বিতরণ করা হয়েছে।

Fish

চাষ করা মাছের উৎপাদন ১৮ দশমিক ৬০ লাখ মেট্রিক টন থেকে ৪৫ ভাগ এবং জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ৯ দশমিক ৬১ লাখ মেট্রিক টন থেকে ২০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইলিশ উৎপাদন ৩ দশমিক ৫১ লাখ মেট্রিক টন হতে ২০ ভাগ এবং সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন ৫ দশমিক ৮৯ লাখ মেট্রিক টন হতে ১৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ফিশারিজ বিভাগ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাছ চাষের নতুন জাত ও উন্নত চাষ পদ্ধতি এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া মৎস্যবিদরা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে মৎস্য চাষিদের সহায়তা দিচ্ছেন। ফলে প্রতিনিয়ত মাছের উৎপাদন বাড়ছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাকসুদুল হাসান খান জাগো নিউজকে বলেন, মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এক্সপার্টরা তাদের নতুন নতুন উদ্ভাবনী অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, আমাদের মোট মাছের চাহিদা এখন ৪১ লাখ মেট্রিক টন। দু-এক বছরের মধ্যে আমরা এ টার্গেটে পৌঁছতে পারবো বলে আশা করি। বর্তমানে দেশে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ ৫৫ গ্রাম।দু-এক বছরের মধ্যে এটি ৬০ গ্রামে পৌঁছাতে চাই। তিনি বলেন, একটি মা-ইলিশ ৩০ লাখ ডিম দেয়। মা-ইলিশ না ধরা এবং এ ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণেই প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। পুলিশ বা গার্ড দিয়ে পাহারা নয়, জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়াতে চাই। মাছ উৎপাদনে স্বাবলম্বী হতে চাই।     

মৎস্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মৎস্য অধিদফতরের আওতায় ২৬টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। জাতীয অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অবদান বিবেচনায় এনে মৎস্য সম্পদের স্থায়িত্বশীল সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, মৎস্য চাষে নব উদ্ভাবনও প্রযুক্তি হস্তান্তর, পল্লী অঞ্চলের বেকার ও ভূমিহীনদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানির মাধ্যমে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ প্রসারিত করা এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে যথোপযুক্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মূল্যায়নে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে।

এফএইচএস / ওআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।