পদ্মা সেতু : আবাসন প্রকল্পের চাপে জমির দাম ১০ গুণ


প্রকাশিত: ০২:৩৮ পিএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬

পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দুই পাশেই বাড়ছে আবাসন প্রকল্প। দেশের সর্ববৃহৎ এ সেতু বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো অসংখ্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। জলাশয় ও নিচু ভূমিতেও গড়ে উঠছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এসব প্রকল্প। ফলে হু হু করে বাড়ছে জমির দাম। ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় ৫-১০ গুণ বেড়েছে এসব এলাকার জমির দাম।

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে দুই পাশে চোখ মেললেই দেখা যায় বিস্তীর্ণ নিচু ভূমি। কোথাও পানি, আবার কোথাও পানির উপর কচুরিপানা। এরই মধ্যে শোভা পাচ্ছে চোখ ধাঁধানো বিশাল বিশাল বিলবোর্ড। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কারণে এসব আবাসন কোম্পানি নিজেদের প্রকল্প নিয়ে এসেছেন। ক্রেতা আকর্ষণে সাইনবোর্ডে লিখেছেন নানা স্লোগান।

মাওয়া ঘাট দিয়ে নদী পাড় হওয়ার সময় এমন আরও সাইনবোর্ড দেখা যায়। এমনকি ফেরি ঘাটের ছাউনিতে বিলবোর্ড সাঁটিয়েছে নানা আবাসিক কোম্পানি। ফোন করে যোগাযোগ করা হলে এক প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিব ম্যানেজার মিরাজ জানান, মাওয়া ঘাটের পাশেই তাদের প্রকল্প। জমির দাম কাঠাপ্রতি ৩ থেকে ৬ লাখ টাকার মতো। এক প্রশ্নর জবাবে তিনি বলেন, নিচু জমি, তবে মাটি ভরাট চলছে।

এমনি আরেকটি আবাসন প্রকল্পের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ আবুল বাশার তানভীর বলেন, বর্তমানে প্রতি কাঠা এককালীন কিছুটা কম। তবে পাঁচ বছর মেয়াদি কিস্তিতে নিলে প্রতি কাঠার দাম পড়বে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ১০ বছর পর প্লটগুলো বুঝিয়ে দেয়া হবে।

একাধিক আবাসন ব্যবসায়ী জানান, এসব প্রকল্পে ক্রেতা পাচ্ছেন তারা। এলাকাবাসীও বললেন একই কথা। তারা জানান, পদ্মা সেতুর জন্য কেবল সড়কের পাশেই নয়, মাওয়া পয়েন্টের আশপাশের জমির দামও চড়া। যে জমি ১ লাখ টাকায়ও কেউ ক্রয় করতো না, এখন সেই জমি ৫ লাখ টাকায়ও (প্রতি কাঠা) পাওয়া যাচ্ছে না।

জানা গেছে, মাওয়া সড়কের দুই পাশে অর্ধশতাধিক হাউজিং কোম্পানি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কেরানীগঞ্জ থেকে কিছু দূর এগিয়ে গেলে ধলেশ্বরী সেতুর টোল প্লাজার আগে চোখে পড়ে ঢাকা গোল্ডেন সিটির সাইনবোর্ড। এছাড়া বসুন্ধরা সিটি, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন, নিউ ঢাকা সিটি, রূপান্তর রিভারভিউ সিটির আবাসন প্রকল্পগুলোর সাইনবোর্ড চোখে পড়বে।

কোনো কোনো প্রকল্পে বালু ভরাটের কাজ চলছে। কোনোটি আবার কেবল সাইনবোর্ডসর্বস্ব। তবে এসব কোম্পানির অনেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে জমি ক্রয় না করে বিস্তীর্ণ এলাকায় সাইনবোর্ড টানানোর অভিযোগ। এসব আবাসন প্রকল্পের ৮০ শতাংশই গড়ে উঠছে জলাভূমিতে।

এলাকাবাসী বলছেন, পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হওয়ার আগে এখানে জমি বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা পাওয়া দুষ্কর ছিল। তবে এখন এক লাখ টাকার জমি ১০ লাখ টাকায়। বলতে পারেন কপাল খুলেছে।

অন্যদিকে আবাসন ব্যবসায়ীরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, সেতুকে কেন্দ্র করে অনেক ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান সাইনবোর্ড সাঁটিয়েছে। এ বিষয়ে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। না হলে টাকা দিয়ে হয়তো দলিল পাওয়া যাবে, কিন্তু জমি বুঝে পাওয়া যাবে না।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন সিরাজুজ্জামান, সায়েম সাবু, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আবু সালেহ সায়াদাত ও এ কে এম নাসিরুল হক।

এমএ/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।