‘পদ্মা সেতুতে গরিবের অবদানই বেশি’


প্রকাশিত: ০৮:৪৭ এএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬

নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর মাওয়া অংশের নির্মাণ শেডের পেছনের নদীতে ট্রলারে বালু তুলছিলেন ২৫ বছরের মাসুম। সকালে কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাস থাকলেও দুপুর ১২টায় প্রখর রোদে কাজ করছিলেন তিনি। পদ্মা সেতুর গার্ড নির্মাণের জন্য প্রতি বস্তা বালু ২০ টাকা মজুরিতে ভরছিলেন। কাছে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিলে ঘামভেজা মুখে হাসি ছড়িয়ে পরে তার।

পদ্মা সেতুর মতো একটি বৃহৎ কাজে অংশ নিতে কেমন লাগছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দিনরাত কাজ করতে হবে। কিন্তু সেই তুলনায় মজুরি কম। পদ্মা সেতুতে গরিবের অবদানই বেশি। সরকার হয়তো কোটি কোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু আমরা শ্রম না দিলে কাজ কীভাবে হবে?

মাওয়া ঘাটের কাছে পদ্মা সেতুর  নির্মাণ শেডের সামনে কঠোর নিরাপত্তায় আছেন সেনা জওয়ানরা। আর পেছনের নিরিবিলি অংশে নদীর পাড়ে পাহারা দিচ্ছেন আবুল কালাম মুন্সি। তিনি ছায়াহীন ধু ধু বালুচরে দাঁড়িয়ে আছেন। চীন থেকে আসা নাগরিকদের বসবাসের স্থান ছাড়াও ইয়ার্ডের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত তিনি।

৫৫ বছরের টাঙ্গাইলের এই অধিবাসী জাগো নিউজকে বলেন, দিন যতই যাচ্ছে ততই পদ্মা সেতুর কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে। তিনি মাসে সামান্য বেতনে চাকরি করলেও এই কর্মযজ্ঞ দেখে ভালো লাগছে। প্রতিদিনই তিনি নদীর পাইলিং ও নদী শাসনের কাজ গভীর আগ্রহ নিয়ে দেখেন।

পদ্মা সেতুর মাওয়া অংশ ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে কঠোর নিরাপত্তার সঙ্গে নির্মাণ শেড তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কাজ শুরু হয়নি। এই ইয়ার্ডে পদ্মা সেতুর রড বিষয়ক সব ধরনের কাজ করা হবে। সেখানকার ভেতরে সবুজায়নের কাজ চলছে। বালু সরিয়ে দোআঁশ মাটি গর্তে রাখছিলেন আবদুল মুমিন (৩৪)।

তিনি জানান, পদ্মা সেতুর কাজে তিনিও একজন অংশীদার। কুমিল্লার এই বাসিন্দা জানান, ছুটিতে বাড়ি গেলে সবাই পদ্মা সেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চায়। চীনরা কী কী খায় তাও জিজ্ঞেস করে। আর এসবের উত্তর দিতে তার ভালোই লাগে।

দুপুরের শিফটে সেতুর পাইলিংয়ের কাজ করার জন্য নদীতে যাচ্ছিলেন মমিনুল হক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, চীনাদের অধীনে কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা ও নজরদারির ভেতরে কাজ করতে হয়। পরিশ্রমও অনেক। তবুও দেশের জন্য কিছু করতে পারছি ভেবে ভালো লাগে।

এ কাজের বিনিময়ে তিনি সরকারের কাছে কি চান? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি একগাল হেসে বলেন, ‘কি আর চামু? তয় যেদিন সেতু হইবো সেদিন যদি সরকার এই শ্রমিকদের সবার আগে সেতুতে উঠতে দেয় তাহলে আমাদের মান বাড়ে!’

প্রসঙ্গত, গত রোববার জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে চলতি বছরের গত অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১১,৬১৬ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

তিনি আরো জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতির মধ্যে মূল সেতু নির্মাণ ৩১ শতাংশ, নদী শাসন কাজ ২৬, জাজিরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ ৮২, মাওয়া সংযোগ সড়ক নির্মাণ ১০০, সার্ভিস এরিয়া-২ নির্মাণ ১০০ শতাংশ মিলিয়ে সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন সিরাজুজ্জামান, সায়েম সাবু, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আবু সালেহ সায়াদাত ও এ কে এম নাসিরুল হক।

এইচএস/এমএমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।