বেতন বৈষম্যে চরম মানসিক যন্ত্রণায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা


প্রকাশিত: ০৩:০৫ এএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬
ফাইল ছবি

জীবিকার সন্ধানে লাখো টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানো হাজারো বাংলাদেশি শ্রমিক চরম মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। স্থানীয় শ্রমিকদের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করেও ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না তারা।

বিশেষ করে স্টুডেন্ট ভিসা বা অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের মনোকষ্ট সবচেয়ে বেশি। লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রতিমাসে গড়ে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা অর্থ উপার্জনের ফাঁদে পড়ে মালয়েশিয়ায় এসে তারা জানতে পারছেন এখানে প্রবাসী শিক্ষার্থীদের বৈধভাবে কাজের কোনো সুযোগ নেই। ফলে চরম হতাশায় দিন কাটছে তাদের।

একইভাবে মজুরির ক্ষেত্রেও মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

মালয়েশিয়া সফরকালে বিভিন্ন কলেজে ভর্তি থাকা অসংখ্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।  

তিন লাখ টাকা খরচ করে বছর খানেক আগে ফেনীর বাসিন্দা মকবুল হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী মালয়েশিয়া যান। তিনি জানান, মালয়েশিয়া সরকারের কড়া নির্দেশে বর্তমানে কলেজে সপ্তাহে দুইদিন ক্লাস না করলে সঙ্গে সঙ্গে সে শিক্ষার্থীর নামে নেতিবাচক প্রতিবেদন ও কারণ দর্শাও নোটিশ জারি হয়।

ফলে শুরুর দিকে নিয়মিত ক্লাস করলেও পরবর্তীতে জীবিকার তাগিদে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে চাকরি নিতে বাধ্য হন তিনি।

মকবুল হোসেন জানান, তার পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল। দেশে থাকলে চাকরি-বাকরি পাওয়া যাবে না এমন কথা বলে বাবাকে বলে-কয়ে রাজি করিয়ে জমি বিক্রি করে মালয়েশিয়া গেছেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর বাস্তবতা দেখে হতাশ হয়ে পড়েন।

তিনি জানান, পাঁচ তারকা হোটেলে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করে তার বেতন মাত্র ১ হাজার ৪শ রিঙ্গিত। অথচ মালয়েশিয়ানসহ অন্যান্যরা তার থেকে দুই তিন ঘণ্টা কম কাজ করেও প্রায় দ্বিগুণ বেতন পান।

কারণ জানতে চাইলে বলা হয়, হোটেল কর্তৃপক্ষের কিছু লোকজনের সঙ্গে কিছু লোকাল এজেন্টের কম খরচে শ্রমিক সরবরাহের চুক্তি থাকে। তারা সরবরাহকৃত শ্রমিকদের কাছ থেকে বেতনের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে রাখেন। ফলে তারা ন্যায্য বেতন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন।

সাজু আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী জানান, বাংলাদেশ থেকে কিছু ধনী পরিবারের শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় লেখাপড়া করতে যান। তারা দামি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে নামকাওয়াস্তে কলেজে লেখাপড়া করেন। তারা দেশ থেকে টাকা এনে চলছেন। কিন্তু অপেক্ষাকৃত দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা এক বছর পর কলেজ ভেদে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ছয় থেকে সাত হাজার রিঙ্গিত খরচের ভয়ে অস্থির থাকেন। ফলে কেউ কলেজ ছেড়ে আবার কেউবা কষ্ট করে সময় বের করে অবৈধভাবে পার্ট টাইম কাজ করেন।

সাইদুর নামের একজন নির্মাণ শ্রমিক জানান, একই ধরনের নির্মাণ কাজে তার মাসিক বেতন মাত্র ১ হাজার রিঙ্গিত হলেও মালয়েশিয়ান শ্রমিকদের বেতন কমপক্ষে দুই হাজার রিঙ্গিত।

কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতান এলাকা ঘুরে অসংখ্য বাংলাদেশির দেখা পাওয়া যায়। তাদের সবার এক কথা- লাখো টাকা খরচ করে এদেশে এসে এখন চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন। যে টাকা খরচ করে এসেছেন সেই টাকা না তুলে দেশে ফিরে যেতে পারছেন না। ফলে কম বেতনেই সুদিনের আশায় বুক বেঁধে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

অনেক বাংলাদেশি আবার তাদের দুরাবস্থার কথাও বলতে নারাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, কারো কাছে কষ্টের কথা বলে কোনো লাভ হবে না। তাই মনোকষ্ট নিয়ে নিজের মতো করে চলতে চান। তবে সবার একটাই স্বান্তনা মালয়েশিয়ায় আছেন।

এমএউ/এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।