বিদ্রোহী নিয়ে ‘বিব্রত’ আওয়ামী লীগ


প্রকাশিত: ০৩:২৮ এএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬

আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীর বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দলের নেতাকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, নির্বাচনে অন্য কোনো দল অংশ না নেয়ায় অনেকটা একদলীয় হয়ে গেছে। প্রার্থী বিদ্রোহী হলেও তারা আওয়ামী লীগের। তবুও অর্ধেক জেলাতেই দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা নানা ধরনের লিখিত অভিযোগ কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে। এতে করে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে কেন্দ্র।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৩৫ জেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। এসব জেলাগুলোর মধ্যে বরিশাল, রাজশাহী, কুমিল্লা, মাগুরা, শরিয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা, চাঁদপুর, ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রাজবাড়ি, চুয়াডাঙ্গা, ফেনী, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালীসহ আরো বেশ কয়েকটি জেলা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতাদের তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই বরিশালের প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। শুক্রবার দলটির দফতর সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৫ নভেম্বর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড বরিশালে চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন প্রদান করেছিলেন খান আলতাফ হোসেনকে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) আলতাফ হোসেনের সমর্থন বাতিল করে মো. মইদুল ইসলামকে সমর্থন প্রদান করা হয়।

এ দিকে দলের একটি সূত্র জানায়, চাঁদপুরেরও প্রার্থীর সমর্থন পরিবর্তন করা হবে। দলের কোনো কোনো নেতা মনে করছেন, বিভিন্ন অভিযোগের কারণে ও সমস্যার জন্য প্রার্থীর উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় এসব বিদ্রোহীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কিছু জেলাতে মন্ত্রী-এমপিদের মদদেও বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

পাবনায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন খোদ ভূমিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান শরিফ ডিলুর মেয়ে মেহজাবিন প্রিয়া। প্রিয়া ইশ্বরদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। সেখান থেকে পদত্যাগ করে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে প্রিয়া বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনের মাঠে থাকবেন এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রিয়া আরো বলেন, আমি নির্বাচন করবোই।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, মনোনয়ন দাখিলের দিন একাধিক জেলায় দলীয় প্রার্থীর বাইরে দলের অনেকেই প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত এসব প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে। যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ান তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, আমরা মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। তারপর যদি কেউ দল সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, এরইমধ্যে ১২টি জেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তারা হলেন- নারায়ণগঞ্জে আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরে মো. আখতারুজ্জামান, ঠাকুরগাঁওয়ে সাদেক কোরাইশী, জয়পুরহাটে আরিফুর রহমান রকেট, নাটোরে সাজেদুর রহমান খান, সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, যশোরে শাহ হাদিউজ্জামান, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, ঝালকাঠিতে সরদার শাহ আলম, ভোলায় আব্দুল মোমিন টুলু, নেত্রকোনায় প্রশান্ত কুমার রায় এবং মুন্সিগঞ্জে মো. মহিউদ্দিন।

বৃহস্পতিবার রাতে জেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা শেষ হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেয়া তথ্যে এই চিত্র পাওয়া যায়। ইসির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক এফ এম আসাদুজ্জামান বলেন, ১২টি জেলায় চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বী।

এইউএ/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।