বিএনপি নির্বাচনে আসবেই


প্রকাশিত: ০৮:৫৪ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৬

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে পরপর তিনবার সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রস্তাব নিয়ে সম্প্রতি জাগো নিউজের মুখোমুখি হন তিনি। বলেন, বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশ নেবেই এবং খালেদা জিয়ার প্রস্তাব হচ্ছে নির্বাচনী কৌশল। কথা হয়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা এবং দেশের মধ্যকার সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন দলের নতুন কমিটি নিয়েও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু। আজ থাকছে প্রথম পর্ব

জাগো নিউজ : রাজনীতিতে ফের নির্বাচনী আলোচনা। বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেয়ার পর থেকেই এমন আলোচনা। এ ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই।  

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : বিএনপি নেত্রীর প্রস্তাব নিয়ে বিশেষ কোনো আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। তবে খালেদা জিয়ার শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে যে, তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসেছেন। এই প্রস্তাবনায় একটি বিষয় প্রতীয়মান, ২০১৪ সালে তিনি নির্বাচন প্রতিহত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা ভুল ছিল।

নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হয় সাধারণত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার আচরণের ওপর নির্ভর করে। নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরিবর্তে যদি নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হবে না।
রাজনৈতিক দলগুলো যদি সহায়তা না করে তাহলে কমিশন কখনোই শক্তিশালী হবে না। খালেদা জিয়াকে এটি উপলব্ধি করতে হবে। তার আচরণ নির্বাচনমুখী করতে হবে।

BNP

জাগো নিউজ : খালেদা জিয়ার দেয়া ১৩ দফাতেও নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে...

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : খালেদা জিয়ার ১৩ দফা নিয়ে ঘোর আপত্তি আছে, তবে আমরা তাতে অবাক হইনি। কারণ তিনি যে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত আর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ত্যাগ করবেন না, তা আমরা ভালোভাবেই অবগত। এবার তিনি সুকৌশলে জামায়াতকে কাছে রাখতে চেয়েছেন। যিনি জামায়াতকে কাছে রাখতে চান, তার সঙ্গে তো কোনো আলোচনা হতে পারে না।

খালেদা জিয়ার প্রস্তাব নিয়ে আমাদের দলের প্রতিক্রিয়া ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, খালেদা জিয়ার প্রস্তাব অন্তঃসারশূন্য এবং সেটাই ঠিক। খালেদার প্রস্তাব স্টান্টবাজি ছাড়া কিছুই না।

জাগো নিউজ : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসাকে তো শুভবুদ্ধির উদয় বলছেন?
 
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : হ্যাঁ, খালেদার শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। তিনি নির্বাচনমুখী হওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রতিহত করার পরিবর্তে নির্বাচনমুখী কথাবার্তা ভালো দিক বলে মনে করি। তিনি এসব আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন।

আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে, এটি এখন খালেদা জিয়া ভালো বোঝেন।

জাগো নিউজ : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে কঠিন সময়েও আলোচনার প্রসঙ্গ ছিল। খালেদা জিয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ফোনে কথাও বললেন। এবার কেন আলোচনার প্রস্তাব উড়িয়ে দিচ্ছেন?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : এখন সব মীমাংসা হয়ে গেছে। এখন কোনো আলোচনার দরকার আছে বলে মনে করি না। নবম জাতীয় সংসদে বিএনপি প্রধান বিরোধী দল ছিল। তারা অংশ না নেয়ায় তখন নির্বাচন দুর্বল হয়ে যায়। তাদের সঙ্গে আলোচনা করা তখন দায়িত্বের মধ্যে পড়েছিল।

যে কারণে আলোচনার সময় শেষ হয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সংবিধান রক্ষার নির্বাচন করতে হবেই। নির্বাচনের পরেও আলোচনা হতে পারে। তারেক রহমানের পরামর্শে খালেদা জিয়া ঘোষণা দিলে কোনো আলোচনা হবে না।

কিন্তু নির্বাচনের পরই দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই শান্তি ফিরে আসতে পারে, তা প্রমাণ হয়েছে। যথাসময়ে খালেদা জিয়া আলোচনা বয়কট করেছেন। এটি তার ভুল। এই ভুল শুধরে দেয়ার দায়িত্ব তো আওয়ামী লীগের না। এ কারণেই আলোচনার কোনো দরকার নেই। নির্বাচন বিএনপিকে করতেই হবে।
সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে।

রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে তিনি যে প্রস্তাব রেখেছেন, তা রাষ্ট্রপতির বিবেচনার ব্যাপার। কিন্তু দলের হয়ে আমি মনে করি, আলোচনার কোনো দরকার নেই।

BNP

জাগো নিউজ : বলছেন, বিএনপি অংশ না নেয়ায় গত নির্বাচন দুর্বল হয়েছে। এবার তো শক্তিশালী করার তাগিদ রয়েছে?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : তখন তারা সংসদে ছিল এবং প্রধান বিরোধী দল ছিল। সেই বিবেচনাতেই আলোচনার প্রয়োজন ছিল। তখনকার প্রেক্ষাপট আর এখনকার প্রেক্ষাপট আলাদা। এখন প্রধান বিরোধী দল হচ্ছে জাতীয় পার্টি। এ নিয়ে আলোচনা হলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে হতে পারে।

এ নিয়ে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। যতদিন বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ত্যাগ করবে না, ততদিন বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হতে পারে না।

জাগো নিউজ : জামায়াতের সঙ্গ ছাড়াতে আপনাদের কোনো প্রস্তাবনা আছে কি না?
 
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : না। এটি বিএনপির নিজস্ব ব্যাপার। বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করলে তখন বিবেচনা করা যাবে যে আলোচনা করা যায় কি না।

জাগো নিউজ : কিন্তু সংকট উত্তরণে তো আলোচনার কোনো বিকল্প নেই।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : দেশে তো কোনো সংকট নেই। সরকার তো ঠিকমতো দেশ পরিচালনা করছে। সবই ঠিকমতো চলছে। একজন নেতার ভুলের কারণে গোটা দেশ তো আটকে থাকে না। আগের নির্বাচন বয়কট করেছেন, পরেরটিতে তিনি অংশ নেবেন।

জাগো নিউজ : বিএনপির বাইরেও বিভিন্নজন আলোচনা, সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করছেন।  

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : নির্বাচন কমিশন আলোচনা করতেই পারে। কমিশনের দায়িত্বই হচ্ছে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করা।

আমাদের সঙ্গে বিএনপির অনেক দূরত্ব। তাদের সঙ্গে কীসের আলোচনা? জামায়াতকে ত্যাগ করার জন্য আমরা বিএনপির প্রতি বহুবার আহ্বান জানিয়েছি। জামায়াত ত্যাগ, তারপর দেখা যাবে, আলোচনা করা যায় কি না?

জাগো নিউজ : এর আগে নির্বাচনগুলোতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা আপনারাও প্রত্যাশা করেছেন। কয়েকটি নির্বাচনে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি স্বস্তিও দিয়েছিল। নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ক্ষমতায় নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব কীভাবে নিচ্ছেন?

BNP

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : বিগত কয়েকটি নির্বাচনে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ছিল না। মানুষ ভোট দিয়েছে। সেনাবাহিনী রাজনীতির অংশ হোক আমরা তা প্রত্যাশা করি না।

সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। রাজনীতিতে যারা সেনাবাহিনীকে টানতে চায়, তারা দেশের রাজনীতির মঙ্গল চায় না। তাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে বলে আমি মনে করি।

জাগো নিউজ : নির্বাচনী আলোচনার জন্য আন্তর্জাতিকও চাপ রয়েছে। অনেকেই আলোচনায় বসার তাগিদ দিচ্ছেন। এটি কীভাবে দেখছেন?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও আন্তর্জাতিক মহলের চাপ ছিল। আমরা প্রমাণ করেছি, বিএনপির সিদ্ধান্তই ভুল ছিল। বিশ্ববাসীও তা প্রত্যক্ষ করেছেন।
 
আওয়ামী লীগ কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করে রাজনীতি করে না। জেলে আটকে রেখে বঙ্গবন্ধুকে সব প্রকার চাপ দিয়েও নতি স্বীকার করাতে পারেনি। আমরা তারই দল করি।

তবে আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্রের জন্য আমরা আলোচনার দরজা সবসময় খোলা রাখি। আমরা চাই, আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক।

জাগো নিউজ : এই প্রশ্নে জামায়াতের অবস্থান?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : জামায়াতের নিবন্ধন তো বাতিল করা হয়েছে। চাইলেই তো তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

নির্বাচনে অনেকেই লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ডের কথা বলেন। এখানে আমার আপত্তি আছে। আমি তো নির্বাচনী মাঠে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে কোনো খেলা খেলতে পারি না। উগ্র সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বাইরে রেখেই নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে পারে।

জাগো নিউজ : জামায়াত ইস্যুতে আওয়ামী লীগের অবস্থানও স্টান্টবাজি কি না?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আওয়ামী লীগ স্টান্টবাজির রাজনীতি করে না বলেই এখনও টগবগে একটি দল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কোনো স্টান্টবাজি করেনি। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল।

জাগো নিউজ : বলা হয়, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগও যুগপদ আন্দোলন করেছিল।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমরা কখনো জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে আন্দোলন করিনি। আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য স্বৈরাচারী সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। এই সময় কে আমাদের অনুসরণ করলো, তা আমাদের দেখার বিষয় নয়।

’৯০-এর পর আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে গণআদালত গঠন করেছিলাম। সেখানে গোলাম আযমের ফাঁসি দেয়া হয়। সুতরাং জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্যের বিষয়টি ব্লেইম দেয়া ছাড়া কিছুই না। জামায়াত প্রশ্নে আমাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি, হবেও না।

এএসএস/জেডএ/এনএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।