আজও রক্ত ঝরছে সেই লোহার শিকে


প্রকাশিত: ০৮:৪৪ এএম, ০৩ নভেম্বর ২০১৬

কঠিনতম ধাতব বস্তু লোহার শিকের তৈরি গেট। চৌদ্দ শিক নয়, এগারো শিকের দরজা এটি। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শিকগুলো কালো কুচকুচে হয়ে গেছে। হতে পারে কালো রঙের মাখামাখিতেও। যেন কোনো এক নির্মম বেদনা নিয়ে শোক প্রকাশের নীরব ভঙ্গি।

এ তো গেল শিকগুলোর বাইরের শোকগাথার ইতিকথা। শিকের ভিতর থেকে আরো কঠিনতর ভাব প্রকাশ পাচ্ছে। অঝোরে রক্ত ঝরেছে শিকগুলোর শরীর থেকে। একবারেই তাজা রক্ত, একটু বেশিই লাল, বেশিই গাঢ়।

গেটের মাঝের দুটি শিক ঘাতকের বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত। গুলি ঠেকাতে বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছিল ওরা। কক্ষের মানুষগুলোকে নিরাপদে রাখার দায়িত্ব ছিল তাদের। তারা তা পারেনি। ঘাতকের বুলেট ঝাঝরা করে দিয়েছিলো জাতীর বীর সেনানীদের। ঝাঝরা হয় লোহার শিকের পাষানসম হৃদয়ও।

পৃথিবীর সব থেকে নিরাপদ জায়গা জেলখানা। আর সেখানেই রাতের আঁধারে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছিলো নরপিশাচরা। ঘাতকের ব্রাশফায়ারে কেঁপে ওঠে বিশাল দেহীর অধিকারী কারাগারের প্রাচীরগুলো। সেদিন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্য কোনো মায়া হয়নি খুনিদের। এ যেন মানবের কাছেই মানবতার হার।

bullet

সেই থেকে শোক আর লজ্জা নিয়ে নির্বাক নীরবতায় দাঁড়িয়ে থাকা লোহাগুলো যেন বলতে চাইছে, ওরা তো আমাদেরকেও রেহাই দেয়নি। দেখ, বুলেট কীভাবে আমাদের বুক চিঁড়ে দিয়েছে, থেঁতলে দিয়েছে দেহকে।

৩ নভেম্বর ১৯৭৫ সালের এই দিন মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে চার জাতীয় নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কারাগারের মতো নিরাপদ জায়গায় এমন বর্বর হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে মেলা ভার।

পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রবেশদ্বার হয়ে সোজা কিছু দূর এগোতেই হাতের বামের ভবন ‘নীল নদ’। বিদেশি বন্দিদের রাখা হতো এখানে। এর একটু দূরেই জাতীয় চার নেতার কারাস্মৃতি জাদুঘর চত্বরের প্রবেশদ্বার। প্রবেশদ্বারের ডান পাশে হস্তান্তরের পূর্ব পর্যন্ত রাখা হয়েছিল জাতীয় চার নেতার মরদেহ। এ তথ্য একটি ফলকেও লিখে রাখা হয়েছে।

জাতীয় চার নেতা কারাস্মৃতি জাদুঘর :
প্রবেশপথ দিয়ে এই জাদুঘর চত্বরে ঢুকতেই চোখে পড়ে ফুলগাছের গোলাকার ঘেরের মধ্যে চার নেতার চারটি পৃথক ম্যুরাল। এর পাশেই পূর্ব-পশ্চিমে একটি একতলা ভবন। যার তিনটি কক্ষে ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে বন্দি ছিলেন চার নেতা। প্রথম কক্ষে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদ। দ্বিতীয় কক্ষে ছিলেন এএইচএম কামারুজ্জামান এবং সর্বশেষ তৃতীয় কক্ষে ছিলেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। তাদের ব্যবহৃত আসবাবপত্রগুলো এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতাকে একই কক্ষে নিয়ে গুলি এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাদের স্মরণে এ জাদুঘর করা হয়েছে। যে কক্ষে ঘাতকরা তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে, তার নামকরণ করা হয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদ স্মৃতিকক্ষ`। জাদুঘরটি ২০১০ সালের ৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।

প্রথম কক্ষের লোহার গেটের দুটি শিকের নিচের দিকে ঘাতকের বুলেটের আঘাত লাগে। লাল চিহ্ন দিয়ে তা সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এএসএস/এমএমজেড/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।