আসুন পারুলকে পরিবারে ফিরতে সাহায্য করি


প্রকাশিত: ১১:৫৪ এএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

কিছুদিন আগেও জরাজীর্ণ পোশাক পরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতো মেয়েটি। বেশির ভাগ সময় কাটাতো শহরের যাত্রীছাউনিগুলোতে। কোথায় তার বাড়ি-ঘর, কোথা থেকে সে এলো, তা কেউ জানে না। তখন পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার কারণে সবাই তাকে পাশ কাটিয়ে চলতো। এ কারণে তাকে ঘিরে তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না কারো। কিন্তু এখন তাকে দেখলে যে কারো আগ্রহ জন্মাবে তার সঙ্গে কথা বলার, তার পরিচয় জানার। কারণ চিকিৎসার ফলে এখন সেই মেয়েটি প্রায় ৯০ ভাগ সুস্থ।

আরো পড়ুন : মানসিক ভারসাম্যহীনদের অভিভাবকে পরিণত হয়েছেন শামীম আহমেদ

এখন সে মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছে। হাসছে, লজ্জা পাচ্ছে। বদলে গেছে তার পোশাকও। প্রথম দেখায় তো কেউ বলতেই পারবে না যে, পারুল সেই মেয়েটি। যাকে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পুকুরিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ঢাকায় আনা হয়েছিল।

Parul

এতক্ষণ সেই পারুলেরই বর্ণনা করছিলাম। যাকে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় এনে সুস্থ করে তুলেছেন শামীম আহমেদ নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা। দুই মাস তিনদিন রাজধানীর মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নিজ খরচে চিকিৎসা করিয়েছেন তার। এরপর গতকাল শুক্রবার তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে নিয়ে গেছেন আদাবরে নিজ বাসার সামনে। সেখানে পারুলকে একটি বাসা ভাড়া করে রেখেছেন।

Parul

অনেক স্মৃতি ফিরে পেলেও পারুল বলতে পারছে না তার বাড়ি কোথায়। কখনো সে বলছে তার বাড়ি মানিকগঞ্জের সৌদিতে। কখনো বলছে যশোরে। কখনো বলছে কুমিল্লায়। এসবের কোনো একটি জায়গা থেকে হেঁটে সে প্রথমে ঢাকায় আসে। এরপর অবস্থান নেয় মানিকগঞ্জে।



পারুলকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে যে মানুষটি প্রথম থেকে মানবিকতার যুদ্ধে নেমেছেন সেই শামীম আহমেদ জানান, পারুলকে যেমন এনেছিলাম, সে আর তেমন নেই। এখন সে পুরোপুরি বদলে গেছে। তাকে যারা প্রতিনিয়ত দেখতেন এখন তারাই প্রথম দেখলে হয়তো চিনতে পারবেন না।

আরো পড়ুন : রাস্তা থেকে তুলে এনে সুস্থ করছেন তিনি

তিনি বলেন, পারুল বর্তমানে যেখানে থাকবে সেখানে সে প্রাকৃতিক পরিবেশ পাবে। কথা বলার মতো একাধিক মানুষ পাবে। গাছ-গাছালি পাবে। ছোট একটি পুকুর পাবে। সরাসরি পাখি দেখতে পাবে। পাখির কণ্ঠও শুনতে পাবে। সব মিলিয়ে তার বর্তমান আবাস্থলটি একটি গ্রামীণ পরিবেশে গড়া। সে যেন দ্রুত তার স্মৃতি ফিরে পায় এ কারণেই তাকে এমন পরিবেশে রাখার ব্যবস্থা করা।

parul

শামীম আহমেদ বলেন, প্রথম ধাপে কাজ ছিল মেয়েটিকে সুস্থ করে তোলা। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেটি প্রায় ৯০ ভাগ সম্ভব হয়েছে। এখন সে নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে প্রতিনিয়ত সুস্থতার দিকে যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো দ্বিতীয় ধাপের কাজ নিয়ে। এই ধাপটি হলো পারুলের পরিবারকে খুঁজে বের করা। কিন্তু সে তো সঠিকভাবে তার ঠিকানা দিতে পারছে না। তার ঠিকানা পেলে তাকে পরিবারের হাতে তুলে দিলেই পারুল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে। বলা যেতে পারে পারুলকে ঘিরে আমার উদ্যোগ সফল।

আরো পড়ুন : ভারসাম্যহীন জবার স্মৃতি ও পরিবার ফিরিয়ে দিলেন শামীম

তিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে জড়িত। এ মাধ্যমেই তার পরিচয় সহজেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

parul

সবাই যদি একটু উদ্যোগ নিয়ে পারুলের ছবি ফেসবুক অথবা টুইটারে প্রকাশ করে তার পরিচয় আহ্বান করে তাহলেই হয়তো একটি মেয়ে তার পরিবারকে খুঁজে পাবে। আপনগৃহে আপনজনের মাঝে ফিরে যেতে পারবে পারুল। এই আহ্বানই জানান শামীম আহমেদ।

এমএএস/বিএ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।