আনসার-আল-ইসলামের সঙ্গে জোট বাঁধছে জেএমবি
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) নতুন সংস্করণ আনসার-আল-ইসলামের সঙ্গে জোট বাঁধার চেষ্টা করছে আরেক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। মূল ধারার জেএমবির কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে উভয় সংগঠনের মধ্যে যোগাযোগ চলছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
আনসার-আল-ইসলাম ইরাকি কুর্দিশ বিদ্রোহীদের একটি গ্রুপ। তারা নিজেদের ভারতীয় উপমহাদেশীয় আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের (আকিস) বাংলাদেশি শাখা বলে দাবি করে। ২০১৫ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এবিটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরপরই তারা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আনসার-আল-ইসলামের ব্যানারে নানা নাশকতা চালায়।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিট জানিয়েছে, জেএমবি বর্তমানে দুই গ্রুপে বিভক্ত। এদের একটি গ্রুপ মাওলানা সাঈদুর রহমানের অনুসারী। তারা সাঈদুর রহমানের লেখা বই পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালায়। সাঈদুর রহমান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। আরেকটি গ্রুপ তামিম আহমেদ চৌধুরীর। এরা নব্য জেএমবি নামে পরিচিত। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন তামিম।
সিটি বলছে, পুরাতন জেএমবির উপরের সারির সব নেতা কারাগারে থাকায় দীর্ঘদিন ধরে তারা নেতৃত্বহীন ও অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। এখন তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। বর্তমানে তারা আনসার-আল-ইসলামের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার জন্য আলাপ-আলোচনা করছে।
এ বিষয়ে সিটি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পুরোনো (মূল ধারার) জেএমবির সঙ্গে আনসার-আল-ইসলামের একটি সম্পর্ক রয়েছে। তারা এক ব্যানারে আসতে পারে। একই প্ল্যাটফর্মে আসা নিয়ে তাদের কারো কারোর মধ্যে আলোচনা চলছে।’
তিনি বলেন, ২০১০ সালে জেএমবি প্রধান সাঈদুর রহমানকে গ্রেফতার করার পর থেকে অনেকটা ভেঙে পড়েছিল জেএমবি। কথিত জিহাদ কায়েমের সক্ষমতা ছিল না সংগঠনটির। দুই সংগঠনের আদর্শ ভিন্ন হলেও অস্তিত্ব সংকটে পড়ে ২০১৩ সালের দিকে আনসারুল্লাহর সঙ্গে জোট বাঁধার চেষ্টা করে তারা। তবে সেই বছরের আগস্ট মাসে সংগঠনের প্রধান জসিমউদ্দিন রাহমানীকে গ্রেফতারের পর নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে খোদ এবিটি। এরপর যোগ্য কোনো মধ্যস্থতাকারী না থাকায় সেসময় একজোট হতে পারেনি তারা।
বর্তমানে জেএমবির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে ছিনতাই হওয়া জঙ্গিদের একজন সালাউদ্দীন সালেহিন। তিনি পালিয়ে ভারতে গেলেও সেখান থেকে জঙ্গিদের নানা কাজের নির্দেশনা দিচ্ছেন। যোগাযোগের কাজটিও তিনিই করছেন বলে জানান মনিরুল ইসলাম।
আনসার-আল-ইসলাম ড. অভিজিৎ রায়, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, ব্লগার নিলাদ্রী নীলয়, ওয়াশিকুর বাবু, নাজিম উদ্দিন সামাদ, জুলহাস মান্নান ও তনয় হত্যাকাণ্ডের ও হত্যাচেষ্টার মতো ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।
২০১৫ সালের নভেম্বরের দিকে ৩৪ জনকে হত্যার হিটলিস্ট প্রকাশ করেছিল আনসার-আল-ইসলাম। লিস্টে বিশিষ্ট কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী, অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, কবি নির্মলেন্দু গুণ, লেখক তসলিমা নাসরিন, সাংবাদিক আবেদ খানসহ আরো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করা হয়।
তাদের নিষিদ্ধ করার জন্য একটি প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে বেশ কদিন আগে জানিয়েছেন মনিরুল ইসলাম।
এআর/জেডএ/এনএফ/এমএস