জনশক্তি রফতানি বাড়লেও কমেছে রেমিটেন্স
নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও গত অর্থবছরে বিদেশে জনশক্তি রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবু এ সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধ উপায়ে তথা হুণ্ডির মাধ্যমে প্রবাসীরা অর্থ প্রেরণ করায় রেমিটেন্স কমেছে।
জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৭ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে গেছে। যা এর আগের অর্থবছরে ছিল ৪ লাখ ৬১ হাজার ৮২৯ জন। সে হিসেবে গত অর্থবছরে জনশক্তি রফতানি বেড়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৭০৮ জন অর্থাৎ ৪৮ শতাংশ। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জনশক্তি রফতানি হয় ৪ লাখ ৮ হাজার ৮৭০ জন।
বিদেশে জনশক্তি রফতানি বাড়লেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ গত অর্থবছরে কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন। যা এর আগের অর্থবছরে ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে ২ হাজার ১২৬ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
বিদেশে কর্মী যাওয়ার হার গত বছরের তুলনায় বাড়লেও প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রবাহ কমার পেছনে বেশ কিছু কারণ দেখছেন বিশ্লেষকরা। এর মধ্যে অবৈধ উপায়ে তথা হুণ্ডির মাধম্যে প্রবাসীরা অর্থ প্রেরণ, অদক্ষ শ্রমিক বেশি পাঠানো, নির্যাতিত হয়ে বা নানা কারণে কর্মীর দেশে ফিরে আসা বা বেতন না পাওয়া অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিবছর নিয়মিতভাবে প্রবাসী আয় বাড়লেও ২০১২-১৩ অর্থবছরে এই ধারায় ছেদ পড়ে। এ বছর ১৪ বছরের মধ্যে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এরপর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিটেন্স বাড়লেও গত অর্থবছরে এসে আবারও কমে যায়।
যেখানে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত সবার, সেখানে রেমিটেন্স প্রবাহের অধোগতি কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। রেমিটেন্স তথা প্রবাসী আয়ই বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের দ্বিতীয় প্রধান উৎস। মূলত গার্মেন্টস সামগ্রী রফতানি করেই বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্জিত হয়। জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদনেও রেমিটেন্সের ভূমিকা ব্যাপক। তবে প্রবাসী আয়ে মন্দাভাব দেখা দিলেও বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য পরিস্থিতি ভালো থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ভাটা পড়েনি। কিন্তু অর্থনীতিতে এর প্রভাব ভিন্নভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
প্রবাসী আয় কমে আসায় জাতীয় ভোগ প্রবণতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এর ফলে অর্থবছর শেষে মোট জিডিপিতে ঋণাত্মক প্রভাব পড়বে। সাধারণত রেমিটেন্স বেসরকারি খাতের ভোগ বাড়াতে নানাভাবে সহায়তা করে। জিডিপি পরিমাপের একটি বড় অংশই আসে বেসরকারি খাতের ভোগ থেকে। তাই প্রবাসী আয় কমতে থাকলে বছর শেষে জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এটা আশংকা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি জাগো নিউজকে বলেন, জনশক্তি রফতানি বাড়ার পরও কেন রেমিটেন্স কমছে তা অনুসন্ধানের চেষ্টা চলছে। যারা বিদেশে আছেন, তারা কীভাবে টাকা পাঠান, ব্যাংকিং চ্যানেলে নাকি অন্য কোনো পন্থায় সে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের সব পরিস্থিতিতেও রেমিটেন্সের ভালো প্রবাহ ছিল, কিন্তু যখন আমরা আরও উন্নতি করতে চাচ্ছি সে সময়ে রেমিটেন্স কমে যাওয়া এক ধরনের বাড়তি চাপ ।
তিনি বলেন, অনেক লোক বিদেশ থেকে দেশে ফেরত এসেছেন, তাছাড়া দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকায় রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অনেক অর্থ দেশে আসছে বলে খবর পাওয়া যায়। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এমইউএইচ/এআরএস/পিআর