হাসপাতালের আলোও যেন ফিকে হয়ে গেছে
অন্ধকারের বার্তা নিয়ে সন্ধ্যা সবে ঘনিয়ে আসছে। পড়ন্ত বিকেলের তেজ এদিন অনেক আগেই মিলিয়ে গেছে। বিকেলেই এমন কালিসন্ধ্যা নামবে কে জানে! চিকিৎসকরা নাকি বেঁচে থাকার আরো কয়েকটি দিন সম্ভাবনা বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা আর হয়নি। জীবনের নিকেশ চুকিয়ে চলে গেলেন পরপারে।
‘আর কি ফিরে পাবোরে, যারে হারায়েছি জীবনে’ বাউল সাধক কবি বিজয় সরকারের সেই বিখ্যাত গান যেন ইউনাইটেড হাসপাতালে আগন্তুকরা অন্তরে ধারণ করে ফিরছেন। জীবনের তরে জীবন। কিন্তু এখানে এসেছেন যারা তারাও যেন নিষ্প্রাণ বনে গেছেন।
হাসপাতালের দোতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত প্রাণের কবি, জীবনের কবি, প্রেমের কবি সৈয়দ শামসুল হক। নিচে হাজারো ভক্তকূলের হৃদয় ভাঙ্গা আহাজারি। আধুনিক হাসপাতালের রং বেরংয়ের আলো সে আহাজারিতে যেন ফিকে হয়ে আসছে। কবির মতোই যেন নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে ভক্তরা। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা জানাতে এসে সবাই যেন বাকরুদ্ধ। লেখক, কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী সবাই হাসপাতালে এসেছেন কবির মৃত্যু সংবাদ শোনার পরপরই।
শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। স্বরভাঙ্গা গলায় বলেন, যা হারালাম, তা কি আর ফিরে পাবো! তার এভাবে চলে যাওয়া কোনোভাবেই মানতে পারছি না।
কবির চলে যাওয়ায় শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনে যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো তা কখনই পূরণ হবার নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তার মতো উচ্ছ্বল মানুষটি আর দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না। বাংলা সাহিত্যে তার অবদান জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে।
নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দ্র মজুমদার বলেন, কি বলে এই শোক প্রকাশ করব সে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এমন বন্ধুজন মানুষটিকে এভাবে হারাতে হবে বিশ্বাস করতে পারছি না। এ ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণ হবার নয়।
চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, তিনি আমাদের সবার আপনজন। তার লেখনি থেকেই আমরা চলার শক্তি সাহস পেতাম। সর্বস্তরে বিচরণ করা কবি মিডিয়া জগতেও বিশেষ অবদান রেখেছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, তিনি আমাদের কাছে রাজনৈতিক গুরুও ছিলেন। রাষ্ট্র, সমাজ, রাজনীতি নিয়ে সমানতালে লিখে তিনি আমাদের রাজনৈতিক দীক্ষা দিয়েছেন।
নয়ন নামের কবির এক ভক্ত বলেন, আমরা তার প্রেমে পড়া মানুষ। তার মৃত্যুর খবরে আর থাকতে পারিনি। শেষ দেখার জন্যই এখানে এসে অপেক্ষা করছি।
এএসএস/এএইচ/আরআইপি