কথা রাখেননি চামড়ার আড়তদাররা


প্রকাশিত: ০৮:১৪ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বুধবার, দুপুর পৌনে ১টা। লালবাগের কাঁচা চামড়া বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত পোস্তগোলার স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে জোহরের আজান ভেসে আসছে। কুমিল্লার মুরাদনগরের জামেয়া ইসলামিয়া মোজাফফারুল উলুম মাদ্রাসার হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদউল্লাহ তার তিন সহকর্মীকে নিয়ে আড়তের শ্রমিকদের ট্রাক থেকে চামড়া নামানোর দৃশ্য দেখছিলেন। চোখে মুখে তাদের নিদারুণ, ক্লান্তি ও হতাশার ছাপ।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মোহাম্মদউল্লাহ জানান, এলাকা থেকে তারা মাদ্রাসার জন্য ৪২৩ পিস গরু ও ১২৩ পিস ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করে রাত দেড়টায় লালবাগে আসেন। কিন্তু লালবাগ কেল্লা থেকে আড়তে পৌঁছেন দুপুর ১২টায়। রাস্তায় ছিল ভয়াবহ যানজট।

তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, জানি না কি দাম পাবো, বহু ব্যবসায়ীকে দাম না পেয়ে কাঁদতে দেখেছি, আড়তদারকে মাদ্রাসার চামড়া জানিয়ে ন্যায্য দাম দিতে বলেছি। এখন দেখি কি দাম দেয়।

শুধু মোহাম্মদ আলীই নয়, তার মতো বহু খুচরা ও মৌসুমী ব্যবসায়ী কেনা চামড়ার দাম নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, প্রকৃত ব্যবসায়ীরা প্রতি ফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেই নির্ধারিত দামে চামড়া কিনতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। প্রতি বর্গ ফুট চামড়ার দাম তাদের হিসেবে ১৩শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা হয় কিন্তু সেই চামড়ার দাম আড়তদাররা খুব বড়জোর হাজার টাকা বলছেন। ফলে তারা প্রতিটি চামড়া ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবার ঈদে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কীন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ৭ থেকে ৮ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ পিস সংগ্রহ হয়ে গেছে।

একাধিক ব্যবসায়ী জানান, তাদের নির্ধারিত টার্গেট পূরণ হবে। সরেজমিন পরিদর্শনকালে আড়তদারদার মুখে হাসি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের বিষাদগ্রস্ত দেখা গেছে।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কীন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. টিপু সুলতানের কাছে খুচরা ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের ঠকানো হচ্ছে এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলি তিনি জাগো নিউজকে বলেন, চামড়া আলু, পটল, বনরুটির ব্যবসা নয়। চামড়া ব্যবসা সম্পর্কে ভালভাবে না জেনে হঠাৎ করে চামড়া কিনে ধরা খাচ্ছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।

তিনি বলেন, এলাকাভেদে রং ও পুরত্ব অনুসারে চামড়া বিভিন্ন ধরনের হয়। চামড়া কেনার সময় এগুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকার পাশাপাশি সঠিকভাবে চামড়ার পরিমাপ নিতে জানতে হয়। প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ী ছাড়া ওই মাপ একদিনের ব্যবসায়ীরা জানবেন না। তাছাড়া চামড়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লবণ মেখে সংরক্ষণ করতে হয়।

তাদের বেধে দেয়া দামও দেয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বুয়েট, আজিমপুর ও লালবাগ থেকে পোস্তগোলার আড়ত পর্যন্ত হাজার হাজার গাড়ির সিরিয়াল থাকায় নির্ধারিত সময়ে চামড়া আড়তে পৌঁছায়নি।

তিনি আরো বলেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে চামড়ার হেয়ার সিল (চামড়ার লোম) উঠে যায়। তাতে করে চামড়ার দাম কমে যায়। এ কারণেরও চামড়া নির্ধারিত দামে তারা কিনতে পারেননি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এমইউ/এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।