মন চল আনন্দবাজারে


প্রকাশিত: ০৪:২৫ পিএম, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

‘যদি দুঃখ পেলে তোমায় মেলে, আমি দুঃখ সাগরে বাইবো তরি। আমি আর যাবো না সুখ সাগরে, সুখ পেলে দয়াল-তোমায় ভুলতে পারি।’

বাউল সাধক বিজয় সরকার এমন ভারি ভাববিচ্ছেদ লিখে গেছেন গত শতকে। বিজয়ের বাণীতেই সেখানে অশ্রু ঝরছে। অশ্রু ঝরছে লালন, রাধারমন, মনমোহন, খালেক দেওয়ান, মালেক দেওয়ান, রশিদ সরকার, মাতাল রাজ্জাক দেওয়ান, আক্কাস দেওয়ানের মতো সাধকদের লেখা গানেও।

গানই তাদের সাধন-ভজন, গানেই তাদের দেহতরঙ্গে ভাবের মিলন। ভাবতরঙ্গে সুর মিলিয়ে গায়কেরা গাইছেন, তাতে ভক্তরাও তাল মিলিয়ে ভাবসাগরে ডুবে আছেন। সুরের বাঁধনে সবাই তারা সর্বহারা। দুনিয়া সেখানে পার্থিবই বটে, যা দেহ সাধনার অন্তরায়। আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনে সেথায় বইছে আনন্দধারা। পরমাত্মার প্রেমানন্দে সবাই যেন দিশেহারা।

mazar
রাজধানীর মিরপুরে হজরত শাহ্ আলী বাগদাদী (র.) মাজার। মঙ্গলবার থেকে মাজারে তিন দিনব্যাপি বাৎসরিক উরস চলছে। উরস নয়, যেন আন্দবাজার। এ আনন্দ মুর্শিদকে পাবার। এ আনন্দ ভক্তকূলের মহামিলনের।

এবারে মাজার চত্বরে ত্রিশের অধিক আস্তানা বসেছে। উরসের মূল আকর্ষণ এসব আস্তানা-ই। পীরভক্ত মানুষেরাই আস্তানার আয়োজক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাউল শিল্পীরা মন মজিয়ে গাইছেন সেখানে। গাইছেন একেবারেই মুশির্দী, ভাণ্ডারী, বিচ্ছেদ, ভাববিচ্ছেদ ধাচের ভারি বাউল গান। আর ভক্তরা তাতে ঠায় দাঁড়িয়ে গোটা রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই গানআনন্দে মন মজিয়ে উজার করে শিল্পীদের বকশিশও দিচ্ছেন।

ভক্তদের অনেকেই শিরনিরও আয়োজন করে থাকে প্রতি উরস উপলক্ষে। কেউ বাড়ি থেকে শিরনি পাকিয়ে আনেন, কেউ আস্তানা চত্বরেই। অনেকেই আবার মানাত করে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ নানা পণ্যও সরবরাহ করে থাকেন মাজার কর্তৃপক্ষকে। ভক্তদের কাছ থেকে পাওয়া মানাত থেকে চলে রাতভর শিরনি রাঁধা। এ শিরনি যেন ভক্তকূলে স্বর্গীয়।

mazar
আয়োজনের বিশেষ আকর্ষণ সিদ্ধিসেবন। শত শত সিদ্ধিসেবক কলকি সাজিয়ে গাঁজা সেবন করছেন রাতভর। এখানে সিদ্ধিসেবনে সবাই যেন সবার আত্মার আত্মা।

কথা হয় লালন শিল্পী সমীর দাস বাউলের সঙ্গে। বলেন, এখানে মন থেকেই গান গাইতে আসি। বাবার দরবার। এ দরবারে ভক্তি-চুম্বন দিতে পারাও তো বড় ভাগ্যের। সাঁইজির দু কালাম শুনিয়ে ভক্তমনে মন মজাই। যদি তাতে অন্তঃকালো কিছুটা দূর হয়।

কিরণ নামের শাহ আলী (র.)-এর ভক্ত। প্রায় পয়ত্রিশ বছর ধরে এখানে বাউল গান শুনে আসছেন। তার প্রতি রাত কাটে বাউল আস্তানায়। গান-ই তার ধর্ম-কর্ম। শিল্পী মহলেও এক নামে পরিচিত কিরণ।

mazar
এই বাউল ভক্ত বলেন, এখানে যা পাই দুনিয়ার কোথায় আর তা মেলে না। গান না শুনলে রাত কাটে না। মনের যন্ত্রণা বাড়ে। এই আনন্দবাজার রেখে আর কোথায় যাই!

কথা হয় আরেক মাজার ভক্ত বাবুলের সঙ্গে। বলেন, মুর্শিদ প্রেমে মন মজাতে পারলেই তো ধন্য জীবন। চেষ্টা করছি, গুরুকার্য মাথায় নেয়ার।

এএসএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।